করোনাভাইরাসের সংত্রমণে মৃতের সংখ্যা তিনশো ছাড়িয়ে যাওয়ার পর সোমবার বিভিন্ন রাজ্যের ৭৫’টি জেলা শহরে লকডাউন ঘোষণা করা হয়। তা সত্ত্বেও বহু মানুষ এই লকডাউনের সতর্কতাকে তেমন আমল দিচ্ছেন না। এই নিয়ে সোমবার সকালেই টুইট করে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে রাজ্যগুলিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে লকডাউন কার্যকর না করলে যেন কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হয়। যাঁরা সরকারি নিয়ম লঙঘন করবেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
কেন্দ্রের এই কড়া বার্তার পর সোমবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও রাজ্যবাসীর কাছে আবেদন রেখেছেন, নিয়ম মেনে চলুন। কোনওভাবেই কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না। বিদেশ থেকে কেউ এলে চোদ্দ দিন একদম বাড়ির মধ্যে থাকুন। সোমবার বিকেল পাঁচটা থেকে সাতাশ মার্চ শুক্রবার মধ্যরাত পর্যন্ত এই রাজ্যে কলকাতাসহ তেইশটি জেলা শহরে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে।
কেন্দ্রের নির্দেশ অনুযায়ী করোনা চেন রুখতে পঁচাত্তরটিরও বেশি পুরশহরে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মানুষকে বাড়ির বাইরে পা রাখতে বারণ করা হয়েছে। কিন্তু এরপরেও বিভিন্ন অঞ্চলে নিয়ম না মানার খবর এসেছে। তারপরই রাজ্যগুলির কাছে নোটিশ পাঠিয়েছে সরকারি নির্দেশ লঙঘন চোখে পড়লে ১৮৮ ধারায় পদক্ষেপ নিতে হবে।
সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার স্বার্থে ইতিমধ্যেই পাঞ্জাব সহ বিভিন্ন রাজ্যে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। যার ফলে চারজনের বেশি মানুষের জমায়েত নিষিদ্ধ হয়েছে সেখানে। অন্যদিকে ১৮৮ ধারা অনুযায়ী ২০০ টাকা জরিমানা সহ ছয় মাস পর্যন্ত জেল হওয়ারও শাস্তিবিধান করা হয়েছে। জরিমানার পরিমাণ ১০০০ টাকা পর্যন্তও হতে পারে।
সোমবার করোনা আক্রান্তের সংখ্য চারশোর ঘর ছড়িয়েছে। মৃত্যু হয়েছে আট ভারতীয়ের। এর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে প্রথম করোনা আক্রান্তের মৃত্যু ঘটল সোমবার। এই ঘটনার পর রাজ্য সরকারের তরফে লকডাউন মানার জন্য রাজ্যজুড়ে কড়াকড়ি করা হয়েছে। বিকেল পাঁচটার পর কোথাও মানুষকে জমায়েত হতে দেখলে পুলিশ গিয়ে তাদের বিচ্ছিন্ন করতে উদ্যোগী হয়েছে। জরুরি পরিষেবার আওতায় থাকা বিষয়গুলি ছাড়া আর কিছু যাতে খোলা না থাকে সেজন্য সর্বত্র নজরদারি চালিয়েছে পুলিশ বাহিনী।
সন্ধেয় মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যবাসীর উদ্দেশে বার্তা দিয়ে বলেছে, খুব জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ যেন বাড়ির বাইরে না বেরোন। এই বিষয়ে সবাই যেন সরকারের কথা মেনে চলেন। সামাজিক মেলামেশা বন্ধ করতেও নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
বিশেষ করে করোনা আক্রান্ত হয়ে কলকাতায় প্রৌঢ়ের মৃত্যুর পর এই বিষয়ে সতর্ক হতে বারবার নির্দেশ দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রয়োজনে ম্যান মার্কিং-এর কথাও ভাবছে রাজ্য সরকার।
সন্ধেয় টুইট করে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন বাংলার মানুষকে নিরাপদে রাখতে এবং করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে রাজ্য সরকার যাথসাধ্য করছে। তবে শুধু সরকারি উদ্যোগেই এই যুদ্ধ জেতা সম্ভব নয়। এর জন্য মানুষের সার্বিক সহযোগিতা ও সমষ্টিগত উদ্যোগ প্রয়োজন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন এভাবেই আমরা করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারব।