ইয়েস ব্যাঙ্কের ৪৯ শতাংশ মালিকানা কিনছে স্টেট ব্যাঙ্ক

স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার অফিস বিল্ডিং। (Photo: iStock)

স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (এসবিআই) ধুঁকতে থাকা ইয়েস ব্যাঙ্ক’কে উদ্ধারের পরিকল্পনা হিসেবে ওই ব্যাঙ্কের ৪৯ শতাংশ মালিকানা কিনে নেবে। একথা জানিয়েছেন এসবিআইয়ের চেয়ারম্যান রজনীশ কুমার। এক কথায় ইয়েস ব্যাঙ্কের আপৎকালীন পরিত্রাতা হয়ে উঠতে চলেছে স্টেট ব্যাঙ্ক।

পাশাপাশি আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ খবর হল, সংকটে পড়ার ঠিক আগে ইয়েস ব্যাঙ্ক থেকে ২৬৫ কোটি টাকা তুলে নিয়েছিল গুজরাতের একটি সংস্থা। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন ইতিমধ্যেই আমানতকারীদের আশ্বস্ত করে বলেছেন যে, তাদের টাকা মার যাবে না। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা কৃষ্ণমূর্তি সুব্রহ্মণ্যম ও রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর শক্তিকান্ত দাসও একই আশ্বাস দিয়েছেন।

আজ স্টেট ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান রজনীশ কুমার জানিয়েছেন, ইয়েস ব্যাঙ্কের আমানতকারীদের সঞ্চয় সুরক্ষিত রাখাই হবে তাদের মূল লক্ষ্য। তিনি বলেছেন, ইয়েস ব্যাঙ্কের সমস্যার মূল কারণ নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। তার ফলাফল আগামী সােমবারের মধ্যেই রিজার্ভ ব্যাঙ্ক’কে জানিয়ে দেওয়া হবে। বিপর্যস্ত ইয়েস ব্যাঙ্কের ৪৯ শতাংশ শেয়ার কিনে নেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে এসবিআইয়ের চেয়ারম্যান বলেন, দেশের বৃহত্তম ব্যাঙ্ক হিসেবে আমাদের কিছু দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। আমাদেরই সেই দায়িত্ব পালন করতে হবে। একটা প্রতিষ্ঠান কেন একজনের ভুলের খেসারত দেবে? ব্যাঙ্ক ধসে গেলে তার ভয়াবহ প্রভাব পড়ে। কিন্তু স্টেট ব্যাঙ্ক পাএশ দাঁড়ালে পরিস্থিতির অনেক উন্নতি হবে। তা সে বেসরকারি বা সরকারি মালিকানাধীন যে কোনও প্রতিষ্ঠানই হােক না কেন। দেশের যে কোনও প্রতিষ্ঠানই জাতীয় সম্পদ বলে তিনি মন্তব্য করেন।


এদিকে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ইয়েস ব্যাঙ্কের পরিচালন পর্ষদকে বাতিল করে দিয়েছে। সেই সঙ্গে ৩ এপ্রিল গ্রাহকদের টাকা তােলার সীমা ৫০ হাজার টাকায় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। গতকালের পর আজও ইডি কর্তারা ইয়েস ব্যাঙ্কের প্রতিষ্ঠাতা রানা কাপুরের মুম্বইয়ের বাড়ি সহ নানা জায়গায় তল্লাশি চালাচ্ছেন। এই তল্লাশি আরও কয়েকদিন ধরে চলবে বলে জানা গেছে।

ইয়েস ব্যাঙ্ক’কে খাদের থেকে তুলে আনতে শুক্রবারই স্টেট ব্যাঙ্ক কে ময়দানে নামানাের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়ে যায়। স্থির হয় বেসরকারি ইয়েস ব্যাঙ্কের ৪৯ শতাংশ মালিকানা কিনে নেবে স্টেট ব্যাঙ্ক। সে জন্য তাদের প্রায় ১১ হাজার ৭৬০ কোটি টাকা ঢালতে হবে।

এদিনও ইয়েস ব্যাঙ্কের গ্রাহকরা টাকা তুলতে গিয়ে নাস্তানাবুদ হন। সরকার আশ্বাস দিলেও তাদের আতঙ্ক কাটছে না। আতঙ্কিত ইয়েস ব্যাঙ্কের ২০ হাজার কর্মীও। পরিস্থিতি সামাল দিতে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী এদিন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কর্তাদের সঙ্গে দফায় দফায়ছ বৈঠক করেন। স্টেট ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান রজনীশ কুমার ও সেবি’র চেয়ারম্যান অজয় ত্যাগীর সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। যে পর্যন্ত টাকা তােলার ওপর কড়াকড়ি ও ঋণের ওপর বিধিনিষেধ জারি হয়েছে, সেই, এপ্রিলের মধ্যে ইয়েস ব্যাঙ্কের পুনরুজ্জীবনের পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করে ফেলাই অর্থ মন্ত্রক ও রিজার্ভ ব্যাঙ্ক’র লক্ষ্য।

এদিকে আরেকটি তাৎপর্যপূর্ণ খবর হল, ধুকতে থাকা ইয়েস ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তােলার ওপর রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নিষেধাজ্ঞা ঘােষণার দু’দিন আগেই ওই ব্যাঙ্কে জমা রাখা ২৬৫ কোটি টাকা তুলে নিয়েছিল গুজরাতের একটি সংস্থা ‘বদোদরা স্মার্ট সিটি ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড’। এই সংস্থার সঙ্গে বিশেষ কয়েকটি উন্নয়নমুলক প্রকল্প যৌথভাবে করে বদেদরা পুরসভা। পুরসভার উপ পুর কমিশনার এবং এসপিভি’র চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার সুধীর প্যাটেল শনিবার একথা জানিয়েছেন।

এই ঘটনার সূত্রেই রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে, ইয়েস ব্যাঙ্ক যে এই পরিস্থিতিতে পড়তে চলেছে, তার খবর কি আগেই রাজনীতিকদের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছিল তাদের ঘনিষ্ঠ মহলে? বিপদ থেকে বাঁচার জন্য কি তাই কেউ কেউ আপৎকালীন ব্যবস্থা নিয়েছিলেন? একই অভিযােগ উঠেছিল চার বছর আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদির নােটবন্দি ঘােষণার পর। যখন দেখা গেল, কালাে টাকা উদ্ধারে নােটবন্দি চাল হলেও, কালাে টাকা উদ্ধার হয়েছিল নামমাত্রই।

বদোদরা পুরসভার উপ পুরকমিশনার এবং এসপিভি’র চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার সুধীর প্যাটেল শনিবার জানিয়েছেন, যে ২৬৫ কোটি টাকা আরবিআইয়ের মােরাটোরিয়াম ঘােষণার আগেই গুজরাতের সংস্থাটি ইয়েস ব্যাঙ্কে র স্থানীয় শাখা থেকে তুলে নিয়েছিল, বদোদরা শহরে স্মার্ট সিটি গড়ার জন্য কেন্দ্র সেই টাকাটা অনুদান দিয়েছিল। পুরাে অর্থটাই জমা রাখা হয়েছিল বদোদরা শহরে ইয়েস ব্যাঙ্কের স্থানীয় শাখায়।

টাকাটা তুলে নেওয়া হয় গত মঙ্গলবার। তার দু’দিনের মাথায়, গত বৃহস্পতিবার মােরাটোরিয়াম ঘােষণা করে আরবিআই। আমানতকারীদের টাকা তােলার ঊর্ধ্বসীমা ৫০ হাজার টাকা বেঁধে দেওয়া হয়। বদোদরা পুরসভার পুর কমিশনার প্যাটেল জানিয়েছেন, ইয়েস ব্যাঙ্কের বদোদরা শাখা থেকে টাকাটা তুলে নিয়ে তা জমা করা হয় ব্যাঙ্ক অফ বরােদার স্থানীয় শাখায়। তার জন্য ওই ব্যাঙ্কে একটি নতুন অ্যাকাউন্ট খােলা হয়।

এদিকে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা কংগ্রেস নেতা পি চিদম্বরম সংকটে জর্জরিত ইয়েস ব্যাঙ্ক কে উদ্ধারের সরকারি পরিকল্পনাকে ‘উদ্ভট’ আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন, ২০১৪ সাল থেকে বকেয়া ঋণের পরিমাণ প্রতি বছর ৩৫ শতাংশ করে বাড়তে দেওয়া হয়েছে। এটা বিজেপির নেতৃত্বাধীন সরকারের দুরদর্শিতার বিরাট অভাবেরই পরিচয়।

চিদম্বরম বলেন, উদ্ধার পরিকল্পনায় বিপুল পরিমাণ অর্থ ঢেলে স্টেট ব্যাঙ্ক ইয়েস ব্যাঙ্কের ৪৯ শতাংশ শেয়ার কিনবে। শেয়ারের দাম নিশ্চয় ১০ টাকার কম হবে না, যার ফেস ভ্যালু মাত্র ২ টাকা। যে ব্যাঙ্কের মুল্য শুন্য সেখানে এই পরিকল্পনা উদ্ভব ব্যাপার ছাড়া কিছু নয়। স্টেট ব্যাঙ্ক স্বেচ্ছায় এই উদ্ধার অভিযানে নামছে বলে আমি বিশ্বাস করি না। ওপর থেকে নির্দেশ দিয়ে এই কাজ করানাে হচ্ছে।