• facebook
  • twitter
Friday, 22 November, 2024

দাঙ্গা প্রশমনে ব্যার্থ মোদি প্রশাসন, অমিতের পদত্যাগ দাবি সোনিয়ার

বিজেপি নেতা অনুরাগ ঠাকুর, পরভেশ সাহিব সিং, কপিল মিশ্রের বিরুদ্ধে এফআইআর জারি ও বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবি জানিয়ে করা আবেদনের শুনানি করছে আদালত।

কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক। (Photo: IANS)

উত্তর-পূর্ব দিল্লির পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে সােনিয়া গান্ধি দাঙ্গা পরিস্থিতি মােকাবিলায় চরম ব্যর্থতার জন্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের পদত্যাগ করা উচিত বলে মন্তব্য করেন। জাফরাবাদ সহ পাশ্ববর্তী এলাকায় সংঘর্ষের ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাড়িয়েছে ২২। জখম ২৫০। তাদের মধ্যে অনেকের অবস্থা সঙ্কটজনক। নিহতদের মধ্যে একজন হেড কনস্টেবল রয়েছেন।

গত রবিবার থেকে উত্তর-পূর্ব দিল্লির রাস্তায় লােহার রড, লাঠি নিয়ে উদ্যম একদল লােককে দাপিয়ে বেড়াতে দেখা গেছে- এলাকায় বসবাসকারী মুসলিমদের বাড়িঘর ও দোকান লক্ষ্য করে ভাজুর চালানাে হচ্ছে। এখানেই শেষ নয়, তাদের ঘর বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সাধারণ মানুষের ওপর হামলা চালান হচ্ছে। লক্ষণীয় ঘটনা পুলিশ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে।

সুপ্রিম কোর্টের তরফে বলা হয়েছে, উত্তর-পূর্ব দিল্লির পরিস্থিতি শুধু উদ্বেগজনক নয়, দূর্ভাগ্যজনক। শীর্ষ আদালতের তরফে বলা হয়, পরিস্থিতি যে দিকে মােড় নিয়েছে তা উদ্বেগের কারণ হয়ে দাড়িয়েছে। সংশােধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরােধিতায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে জনস্বার্থ মামলার একগুচ্ছ আবেদন শীর্ষ আদালতে জমা পড়েছে। আজ ওই জনস্বার্থ মামলাগুলির শুনানি করতে গিয়ে শীর্ষ আদালতের তরফে বলা হয়, রাস্তা বন্ধ করে মাসের পর মাস প্রতিবাদ বিক্ষোভ প্রদর্শন করার ফলে সাধারণ মানুষজনকে চরম সমস্যার মধ্যে পড়তে হচ্ছে।

শাহিন বাগ সহ দিল্লির পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক করে তােলার লক্ষ্যে সচেষ্ট হওয়া আবশ্যক, তার জন্য প্রয়ােজন মহানুভবতার। শহরে শান্তি প্রতিষ্ঠা হওয়ার পরই জনস্বার্থ মামলার আবেদনগুলির শুনানি করা হবে। পাশাপাশি উত্তরপূর্ব দিল্লির দাঙ্গা পরিস্থিতির উল্লেখ করে যে আবেদন করা হয়েছে, তা খারিজ করে দিয়ে বলা হয়, শীর্ষ আদালত বর্তমান পরিস্থিতিকে আরও উত্তেজনাময় করে তােলার পক্ষে নয়।

উত্তরপূর্ব দিল্লির পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আদালতের তরফে বলা হয়, একমাত্র প্রশাসনই স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনতে পারে শুধু তাই নয়, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিশ্চিত করতে পারে।

উত্তরপূর্ব দিল্লিতে যারা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে কি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে– দিল্লি হাইকোর্টের তরফে দিল্লির পুলিশ কমিশনারকে নােটিশ পাঠিয়ে সাড়ে বারােটার মধ্যে জবাব পেশ করতে বলা হয়েছে। দিল্লি কোর্টের বিচারপতি এস মুরলীধর ও বিচারপতি তলওয়ান্ত সিং বলেন, কোর্টের নির্দেশের জন্য পুলিশের অপেক্ষা উচিত ছিল না, পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রয়ােজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া আবশ্যক ছিল।

বিজেপি নেতা অনুরাগ ঠাকুর, পরভেশ সাহিব সিং, কপিল মিশ্রের বিরুদ্ধে এফআইআর জারি ও বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবি জানিয়ে করা আবেদনের শুনানি করছে আদালত। সংশােধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে সােচ্চার প্রতিবাদকারীদের বিরুদ্ধে প্ররােচনামূলক মন্তব্য করেছিলেন ওই বিজেপি নেতারা। কপিল মিশ্রের মন্তব্যের ২৪ ঘন্টার মধ্যে উত্তর পশ্চিম দিল্লিতে সংঘর্ষ শুরু হয়। মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়াল পরিস্থিতি সামাল দিতে সেনা নামানাের আবেদন জানিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছেন। তিনি বলেন, পুলিশ চেষ্টা করেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ।

কংগ্রেসের তরফে জাফরাবাদ সহ উত্তরপূর্ব দিল্লিতে উদ্ভূত সংঘর্ষের পরিস্থিতির জন্য কেন্দ্র ও দিল্লি প্রশাসনকে দায়ি করে। পাশাপাশি এলাকায় স্বাভাবিকতা ফেরাতে ব্যর্থ হওয়ায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ’র পদত্যাগেরও দাবি জানায়। কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়াল ও তাঁর প্রশাসনের দিকে আঙুল তােলা হয়েছে। তারা সাধারণ মানুষের কাছে গিয়ে শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখার আবেদন জানায় নি।

দলের সদর দফতরে আয়ােজিত কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে গৃহীত প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, কেন্দ্র সরকার ও কেজরিওয়াল প্রশাসন যৌথভাবে দাঙ্গা দমনে ব্যর্থ, ফলে শহরে একটা ট্রাজিক ঘটনা হয়ে গেল। কমিটির বৈঠকে কংগ্রেস সভানেত্রী সােনিয়া গান্ধি, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমােহন সিং, গুলাম নবি আজাদ, প্রিয়াঙ্কা গান্ধি, জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া হাজির ছিলেন।

কয়েকদিন ধরে বিজেপি নেতারা প্ররােচনামূলক বক্তব্য দিয়ে ভয়ের পরিবেশ তৈরি করেছিল। পুলিশ নীরব দর্শকের ভূমিকা গ্রহণ করায় পরিস্থিতি ভয়ানক চেহারা নিয়েছে। ফলে প্রশ্ন উঠছে, কেন অতিরিক্ত বাহিনীকে দ্রুত মােতায়েন করা হয়নি, যখন স্পষ্ট হয়ে যায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। কোথায় ছিলেন দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী? মুখ্যমন্ত্রীও কোথায় ছিলেন? দলের নেতা ও কর্মীদের এলাকায় গিয়ে সাধারণ মানুষের পাশে দাড়াতে বলা হয়েছে।