সিএএ-র কিছু বিষয় ভারতীয় সংবিধানের ধারা লঙ্ঘন করতে পারে, মার্কিন কংগ্রেসের একটি নিরপেক্ষ গবেষণা দলের রিপোর্টে দাবি 

দিল্লি, ২২ এপ্রিল – নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন বা সিএএ-র কিছু বিষয় ভারতীয় সংবিধান সম্মত নয়। মার্কিন কংগ্রেসের একটি নিরপেক্ষ গবেষণা দলের রিপোর্টে এই দাবি করা হয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন বা সিএএ-র কিছু বিধান ভারতীয় সংবিধান লঙ্ঘন করতে পারে। মার্কিন কংগ্রেসের একটি স্বাধীন গবেষণা শাখার প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে এমনটাই বলা হয়েছে। সিএএ যা ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইনকে সংশোধন করে, এটি সংসদ দ্বারা অনুমোদনের প্রায় চার বছর পরে মার্চ মাসে প্রয়োগ করা হয়। এই সংশোধিত আইনে পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান থেকে শরণার্থী হয়ে ভারতে আসা নাগরিকত্বের প্রমাণহীন অ-মুসলিমদের নাগরিকত্ব প্রদানের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরের আগে পর্যন্ত যাঁরা ভারতে এসেছেন, তাঁদেরই কোনও নথি ছাড়াই নাগরিকত্ব দেওয়া হবে।

মার্কিন কংগ্রেসের নিরপেক্ষ গবেষণা রিপোর্টের দাবি, সিএএ-র মূল বিষয় হচ্ছে, তিনটি দেশ থেকে উদ্বাস্তু হয়ে আসা ৬টি ধর্মের মানুষকে নাগরিকত্ব প্রদানের দরজা খুলে দেওয়া। যার মধ্যে মুসলিমদের রাখা হয়নি। আর এতেই ভারতীয় সংবিধানের নির্দিষ্ট কিছু ধারা ভঙ্গ করা হয়েছে। এই রিপোর্টে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয়েছে, এনআরসি-র সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত সিএএ ভারতীয় মুসলিম জনসংখ্যার অধিকার বিপন্ন করতে পারে।  রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, বিজেপি হিন্দু সংখ্যাগুরুদের আধিপত্য চাপিয়ে দিতে চাইছে। তাদের মুসলিম বিরোধী কর্মসূচি ভারতের ধর্মনিরপেক্ষতার কাঠামোকে আঘাত করবে। যা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিধি ও আইনকে ভঙ্গ করবে। রিপোর্টে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, যারা সিএএ-র বিরোধিতা করছে তাদের শাসকদল বিজেপির উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।

মার্কিন রিপোর্টে সিএএ-কে বিজেপির রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমূলক ও নির্বাচনী চমক বলে বর্ণনা করা হয়েছে। সমালোচনার কথা উল্লেখ করে রিপোর্টে বলা হয়েছে, সিএএ শুধুমাত্র অনুমোদিত কিছু ধর্মের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। ভারতের ধর্মনিরপেক্ষতার ভাবমূর্তিকে খর্ব হবে এবং হিন্দু সংখ্যাগুরুদের শ্রেষ্ঠত্ব  প্রতিষ্ঠিত হবে। অহিন্দুদের দ্বিতীয় শ্রেণির মর্যাদা দেওয়া হবে।


উল্লেখ্য, এই  বেসরকারি গবেষণা রিপোর্ট মার্কিন কংগ্রেসের অঙ্গ। প্রসঙ্গত, এর আগে সিএএ বিজ্ঞপ্তি জারির পরেই বাইডেন প্রশাসন জানিয়েছিল তারা খুব কাছ থেকে এর উপর নজর রাখছে। যদিও ভারত সরকার সব ধরনের সমালোচনা অগ্রাহ্য করে জানিয়ে দিয়েছে, সিএএ লাগু থাকবে। কোনও অবস্থাতেই তা প্রত্যাহার করা হবে না। এর আগে বাইডেন প্রশাসন ভারতে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল। কিন্তু ভারত যাবতীয় সমালোচনা প্রত্যাখ্যান করে এবং ধারাবাহিকভাবে সিএএ প্রাথমিকভাবে নাগরিকত্ব প্রদানের লক্ষ্যে অবিচল রয়েছে। একটি বিবৃতিতে কেন্দ্র আশ্বাস দিয়েছে যে এই আইনের ফলে দেশের কোনও নাগরিক তাদের নাগরিকত্ব হারাবেন না।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, নারগিকত্ব সংশোধন আইন জারি হওয়ার পর থেকেই শুরু হয় দেশজুড়ে বিক্ষোভ।  আইনের বিরোধিতা করে সুপ্রিম কোর্টে মামলা হয় । মোট ২৩৭টি আবেদন জমা পড়ে শীর্ষ আদালতে।  এখনও পর্যন্ত এই আইনে কোনও স্থগিতাদেশ দেয়নি দেশের শীর্ষ আদালত।