সেনাবাহিনীতে মহিলাদের অধিকার সুনিশ্চিত করে সুপ্রিম কোর্টের রায় দেওয়ার। কেন্দ্রকে কটাক্ষ করেছিলেন কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধি । তাঁর সেই মন্তব্যের জবাব দিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি। রাহুলকে বিদ্রুপ করে তিনি বললেন, ‘বেগানি শাদি মে আবদুল্লা দিওয়ানা।’
বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় ও বিচারপতি অজয় রাস্তোগির বেঞ্চ সােমবার জানিয়ে দিল, মহিলাদেরও এ বার থেকে সেনাবাহিনীতে স্থায়ী ভাবে নিয়ােগ করতে হবে। অর্থাৎ, তাঁরাও সেনাবাহিনীতে ‘কম্যান্ড’ করতে পারনে। একমাত্র কমব্যাট উইং ছাড়া সেনাবাহিনীর সব স্তরে আগামী তিন মাসের মধ্যে এই নিয়ম চালু করতে বলা হয়েছে কেন্দ্রকে। সেখানে মহিলারা যাতে পুরুষদের মতাে সমান সুযােগ সুবিধা পান, সে দিকেও নজর রাখতে বলা হয়েছে। সেনাবাহিনীতে নিয়ােগের ক্ষেত্রে কেন্দ্রের দেওয়া যুক্তি লিঙ্গবৈষম্যমূলক, পুরােনাে ধারণাপ্রসুত এবং বিরক্তিকর বলেও মন্তব্য করেছে আদালত।
এই রায়ের পর রাহুল গান্ধী টুইটে লেখেন, মহিলা অফিসাররা পুরুষদের থেকে খাটো হওয়ায় তাঁরা কম্যান্ডিং পােস্টে যেতে পারেন না, সুপ্রিম কোর্টে এই মর্মে সওয়াল করে প্রত্যেক ভারতীয় মহিলাকে অশ্রদ্ধা করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। দেশের সব মহিলাকে উঠে দাঁড়িয়ে বিজেপি সরকারকে ভুল প্রমাণ করার জন্য ধন্যবাদ।
রাহুলের এই মন্তব্যে জবাব দিয়ে স্মৃতি টুইটে বলেছেন, ‘বেগানি শাদি মে আবদুল্লাহ দিওয়ানা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদি’ই সশস্ত্র বাহিনীতে মহিলাদের জন্য স্থায়ী কমিশন গঠন করেছেন আপনাদের সরকার যখন এই ইস্যুকে বুড়াে আঙুল দেখিয়েছিল, তখন এটি তুলে ধরে বিজেপি মহিলা মাের্চা। ট্যুইটের আগে টিমকে বললা চেক করে নিতে।’
ভারতীয় সেনায় লিঙ্গবৈষম্য দূর করতে এই যুগান্তকারী রায়ে কেন্দ্রকে এ দিন তীব্র ভৎর্সনা করে দুই বিচারপতির বেঞ্চ। কারণ কেন্দ্রের যুক্তি ছিল, মহিলাদের শারীরিক ক্ষমতা পুরুষদের তুলনায় কম। সেনাবাহিনীর অধিকাংশ সদস্য যেখানে গ্রাম থেকে আসেন, সেখানে মহিলাদের হাতে কম্যান্ড কার ক্ষমতা থাকা কাঙিক্ষত নয়। তাই তাঁরা ‘কম্যান্ড রােল’ পাওয়ার যােগ্য নন।
কেন্দ্রের ব্যাখ্যা হল, সেনার অধিকাংশ জওয়ানই আসেন গ্রামীণ অঞ্চল থেকে, এই কারণে তাঁরা মহিলা আধিকারিকদের থেকে নির্দেশ গ্রহণে অভ্যস্ত নন। পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের শারীরিক সক্ষমতা কম। তাই মুখােমুখি যুদ্ধ করা ইউনিটে মহিলাদের যােগদান সম্ভব নয়। দুর্গম এলাকায় যুদ্ধে যােগ দিতে গেলে যে শারীরিক সক্ষমতার প্রয়ােজন হয়, তা মহিলাদের নেই, তাই তাদের সেনার সর্বস্তরে স্থায়ী নিয়ােগ করা সম্ভবপর নয়। তা ছাড়া তাঁদের মাতৃত্ব, শিশুপরিচর্যা, যুদ্ধক্ষেত্রে বিপক্ষের হাতে ধরা পড়ার বিপদও মাথায় রাখতে হবে।’
এই সব যুক্তিই উড়িয়ে দিয়ে সরকারকে সুপ্রিম কোর্ট বলে, ‘বস্তাপচা মানসিকতার বদল করতে হবে। কেন্দ্রীয় সরকারের যুক্তি লিঙ্গবৈষম্যকারী, খুবই বিরক্তিকর। পুরােনাে ধারণাপ্রসূত এই যুক্তির স্থান নেই। মহিলাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে তাঁদের অধিকারে কোনও সম্পর্ক নেই। মহিলাদের ক্ষমতা, দক্ষতা সম্পর্কে কোনওরকম সন্দেহ প্রকাশ করার অর্থ, শুধু তাঁদের অপমান করা হয় না, গােটা ভারতীয় সেনাবাহিনীকে অপমান করা।’
এত দিন পর্যন্ত মহিলাদের শুধুই শর্ট সার্ভিস কমিশন অর্থাৎ ১৪ বছর সময়সীমার জন্য নিয়ােগ করা হত। তাঁরা স্থায়ী ভাবে অর্থাৎ পার্মানেন্ট কমিশনড অফিসার হিসেবে ছর চাকরির সুযােগ পেতেন না। এবার থেকে তা কার্যকর হবে। এর অর্থ হল, কোনও মহিলা আধিকারিক কর্নেল পদের উঁচুতে উঠতে পারবেন, তিনি সেনা ব্যাটেলিয়নের নেতৃত্ব দিতে পারলে, তাঁর পদোন্নতি ও আর্থিক সুবিধা হবে পুরুষদের সমতুল। তত্ত্বগত ভাবে মহিলাদের সর্বোচ্চ পদে যেতেও আর বাধা রইল না। তবে ‘কমব্যাট উইং’এ তাঁদের নিয়ােগ নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট এদিন কোনও নির্দেশ দেয়নি। ফলে তাঁদের যুদ্ধ ক্ষেত্রে পাঠানাে হবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।