ত্বকের সাদায় লজ্জা, চিকিৎসায় মুক্তি

সমাজ যতই উন্নত হোক না কেন, আমরা বিদ্যা-বুদ্ধির যতই বড়াই করি না কেন কিছু কিছু ক্ষেত্রে আসলে আমরা ভীষণ অশিক্ষিত, ভীষণ কুসংস্কারি৷ এই যেমন ধরুন ত্বকের সাদা রোগ বা গোদা বাংলায় যাকে বলা হয় স্বেতীগ্রস্ত কাউকে দেখলেই এমন ভাব দেখাই যেন তাঁকে ছুঁলেই আমারও স্বেতী হয়ে যাবে৷ একবারও ভাবি না এটা এক ধরনের ত্বকের অসুখ, যা ছোঁয়াছেও নয়৷ যার ফলে এই রোগ যাদের হয় তারাও লজ্জা বোধ করেন নিজেদের ত্বক দেখে৷ সমাজ থেকে নিজেদের প্রায়ই অছু্যত রাখতে শুরু করেন৷ আরে বাবা আর পাঁচটা রোগের মতো এটিও একটি রোগ যা সঠিক চিকিৎসায় সেরে যেতে পারে৷ তাই ছু্যত/অছু্যতের বিচার না করে নিজেদের কিছুটা উন্নত করুন৷ এই রোগ সম্পর্কে  ও কিভাবে সেরে ওঠা যায় তা বিস্তারিত জানুন৷
আসলে ত্বকের স্তরে মেলানোসাইট নামের একটি কোষ থাকে৷ এই কোষ থেকে মেলানিন নামের একটি পিগমেন্ট তৈরি হয়, যা আমাদের গায়ের রং তৈরিতে ভূমিকা পালন করে থাকে৷ বিভিন্ন কারণে যখন মেলানিন তৈরিকারক মেলানোসাইট কোষগুলো চামড়ার কোনো নির্দিষ্ট জায়গায় সম্পূর্ণ ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়ে যায়, তখন সে জায়গা হয়ে যায় একদম পুরোপুরি সাদা এবং এ রকমভাবে ত্বকের এক বা একাধিক জায়গা ধবধবে সাদা হয়ে যাওয়ার নামই শ্বেতি৷
কারণ
শ্বেতি রোগের সুনির্দিষ্ট কারণ এখনো আবিষ্কার করা না গেলেও এটাকে চিকিৎসাশাস্ত্রের ভাষায় অটো ইমিউন ডিজিজ বলে মনে করা হয়, যেখানে কোনো বিচিত্র রহস্যময় কারণে শরীর নিজের মধ্যে থাকা স্বাভাবিক কোষকেই নিজের শত্রু মনে করে সেগুলাকে নিজেই ধ্বংস করে ফেলে৷
তবে এ ধরনের ঘটনার সঙ্গে রোগীর বংশপরম্পরা যেমন একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে, তেমনি মানসিক চাপ, হতাশা, দুশ্চিন্তা, দুঃখ, অবসাদ এবং এ ধরনের সব নেতিবাচক মানসিকতা ও সঠিক জীবনযাপনপ্রণালী পালন না করার কারণে নিজের শরীরের স্বাভাবিক প্রতিরোধব্যবস্থা বাধাপ্রাপ্ত হওয়াও এ রোগের উৎপত্তির একটি বিরাট কারণ বলে মনে করা হয়৷
চিকিৎসা
শ্বেতি রোগের চিকিৎসার ফলাফলের ক্ষেত্রে তিনটি বিষয় বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে—
* যত কম সময় ধরে রোগটি শুরু হয়৷
* যত কম বয়সে রোগটির আবির্ভাব ঘটে৷
* যত কমসংখ্যক আক্রান্ত স্থান থাকে, রোগটি নিরাময় হওয়ার সম্ভাবনা ততই বৃদ্ধি পায়৷
বিজ্ঞানের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে শ্বেতির চিকিৎসায়ও এসেছে বহু নতুন বাঁক এবং নতুন চিকিৎসাপদ্ধতি৷ মূলত শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে যে ধরনের খাবার খাওয়া উচিত তার সবই এই রোগের অন্যতম প্রধান চিকিৎসার অন্তর্গত৷
তাই শাকপাতা ও ভিটামিন সি সংবলিত খাবার এখন এই রোগ নিরাময়ের জন্য বিশেষভাবে নির্দেশিত৷ চিকিৎসার অন্যান্য পদ্ধতির মধ্যে বিভিন্ন ধরনের ক্রিমজাতীয় ওষুধ রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে বেশ ভালো ফল দিয়ে থাকে৷
তবে ক্রিমজাতীয় ওষুধ ব্যবহারের সময় চিকিৎসকের নির্দেশনা সঠিকভাবে মেনে চলা এবং তাঁর সঙ্গে নির্দেশিত সময়ে সাক্ষাৎ করা বিশেষভাবে জরুরি৷
সূর্যালোকের সঙ্গে এই রোগের চিকিৎসার বিশেষ একটি সম্পর্ক আছে৷ সে জন্য অনেক সময়ই কিছু বিশেষ ওষুধ আক্রান্ত স্থানে লাগিয়ে নির্দিষ্ট সময় রোদ লাগালে সেখানে মেলানোসাইট কোষ নতুন করে তৈরি হওয়ার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় এবং ধীরে ধীরে আক্রান্ত ত্বক তার স্বাভাবিক রং ফিরে পায়৷