ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার সদস্যপদ থেকে ইস্তফা , বিজেপিতে যোগ দিলেন সীতা সোরেন 

রাঁচি, ১৯ মার্চ – ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার সদস্যপদ থেকে ইস্তফা দিলেন বিধায়ক সীতা সোরেন।  মঙ্গলবার সকালে দলের সমস্ত পদ ছাড়ার কথা ঘোষণা করেন তিনি। তিনি দলের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে ইস্তফাপত্র পাঠান। লোকসভা নির্বাচনের আগে সীতার আচমকা এই পদত্যাগে জল্পনা শুরু হয়ে যায় ।  এরপরই ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার প্রতিষ্ঠাতা শিবু সোরেনের পুত্রবধূ তথা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনের বৌদি সীতা সোরেন বিজেপিতে যোগ দেন।
 
লোকসভা নির্বাচনের আগে পরিবারই বিবাদের জেরে বড়সড় ধাক্কা খেল ঝাড়খন্ড মুক্তি মোর্চা। দিল্লিতে বিজেপির সদর দফতরে গিয়ে সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক বিনোদ তাওড়ের উপস্থিতিতে পদ্ম শিবিরে যোগ দেন জেএমএম বিধায়ক সীতা। সেখানে হাজির ছিলেন ঝাড়খণ্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক লক্ষ্মীকান্ত বাজপেয়ী। ঝাড়খণ্ডের রাজনৈতিক মহলের খবর, মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে স্বামীর দল ছেড়ে বিজেপিতে যাচ্ছেন সীতা। এদিকে মহিলা আদিবাসী মুখ সীতাকে সামনে রেখে পুনরায় ঝাড়খণ্ডে কুর্সি দখল করার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে পদ্ম শিবির। নভেম্বর ডিসেম্বরে ঝাড়খণ্ড বিধানসভার ভোট হওয়ার কথা। বিজেপি তার আগেই  ক্ষমতায় ফিরতে চাইছে। দুমকা লোকসভা কেন্দ্রে সীতাকে প্রার্থী করতে পারে বিজেপি।
 
জেএমএম-এর বিরুদ্ধে সীতা সোরেনের অভিযোগ , দল ও সোরেন পরিবার তাঁকে , তাঁর পরিবারকে একঘরে করে দিয়েছে।  সীতা সোরেন ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।  সেসব জানতে পেরেই এমন চরম সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানান সোরেন পরিবারের বধূ। তাঁর কথায়, “পরিবার এবং দল থেকে আমাদের আলাদা করে দেওয়া হয়েছে, যা মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে।” সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সব কিছুই ঠিক হয়ে যাবে বলে আশা করেছিলেন। কিন্তু এই দলকে তিলে তিলে আরও মজবুত করার জন্য তাঁর স্বামী যে কাজ করে গেছেন, সেই ভূমিকাকেও স্বীকার করা হচ্ছে না বলেও উষ্মা প্রকাশ করেছেন সীতা।
 
দুমকা জেলার জামা কেন্দ্রের তিন বারের বিধায়ক সীতা জেএমএম প্রতিষ্ঠাতা শিবু সোরেনের জ্যেষ্ঠ পুত্র প্রয়াত দুর্গা সোরেনের স্ত্রী। হেমন্ত সক্রিয় রাজনীতিতে আসার আগে দুর্গাই ছিলেন শিবুর রাজনৈতিক সহকারী। বিধানসভাতেও দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। ২০০৯ সালে দুর্গার মৃত্যুর পরে সক্রিয় রাজনীতিতে আসেন সীতা। রাজনীতিতে আসার পর থেকে বহুবার হেমন্তের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়েছেন তিনি। জেএমএম সূত্রের খবর, মন্ত্রী না করায় দীর্ঘ দিন ধরেই ক্ষুব্ধ ছিলেন সীতা। সীতার আক্ষেপ, জেএমএম সুপ্রিমো শিবু সোরেন পরিবারের সব সদস্যকে এক ছাতার তলায় রাখার অনবরত চেষ্টা করে গিয়েছেন। কিন্তু তিনি জানতে পেরেছেন, তিনি এবং তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। আর এই সামগ্রিক পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করেই তিনি দলের সমস্ত পদ থেকে ইস্তফা দিচ্ছেন।
জানুয়ারিতে দুর্নীতি মামলায় ইডি গ্রেফতার করতে সক্রিয় হলে স্ত্রী কল্পনাকে রাঁচীর কুর্সিতে বসানোর পরিকল্পনা করেছিলেন হেমন্ত। কিন্তু সীতার নেতৃত্বে চার জন জেএমএম বিধায়ক ‘বিদ্রোহ’ করায় পিছু হটতে হয় তাঁকে। কিন্তু পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী চম্পেই সোরেনের মন্ত্রিসভাতেও স্থান  পাননি সীতা। তাঁর এই দলত্যাগের ফলে নতুন করে ঝাড়খণ্ডে বিরোধী জোটের সরকারের অস্থিরতা তৈরি হতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ। এদিকে ঝাড়খণ্ডের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন এখন ইডির হেফাজতে।