মহারাষ্ট্রে ভালো ফল শিবসেনার, দলে উঠছে মুখ্যমন্ত্রী পদের দাবি

শিবসেনা দলের কর্মীরা। (Photo: IANS)

বুথ ফেরত সমীক্ষকরা মহারাষ্ট্র এবং হরিয়ানা বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস সহ বিরােধীদের উড়িয়ে দিয়ে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, দুটি রাজ্যেই ঝড় তুলতে চলছে গেরুয়া বাহিনী। যাবতীয় সমীক্ষাকে থামিয়ে দিয়ে মহারাষ্ট্রে জোর লড়াই চালালাে কংগ্রেস-এনসিপি জোট। জয়ের থেকে অনেক দুরে তাদের থামতে হয়েছে ঠিকই, কিন্তু একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায়নি।

অন্যদিকে হরিয়ানা ভােটগণনার শুরু থেকেই তুল্যমূল্য লড়াইয়ের মধ্যে ছিল কংগ্রেস জোট। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত যা খবর তাতে জয় এবং এগিয়ে থাকা নিয়ে বিজেপি জোট পেয়েছে ৪০টি আসন। এবং কংগ্রেস জোট দখল করেছে ৩০টি। অর্থাৎ ত্রিশঙ্কু বিধানসভা গঠনের মতাে জায়গায় নিজেদের লড়াইকে তুলে নিয়ে যেতে পেরেছে কংগ্রেস।

অন্যদিকে মহারাষ্টেও বিজেপি যে খুব সুবিধাজনক অবস্থায় আছে তা নয়। ভালাে ফল হওয়ায় শিবসেনার তরফে মুখ্যমন্ত্রী পদের দাবি উঠেছে। সেক্ষেত্রে অনেকটা আগ বাড়িয়ে সমর্থন করার কথা জানিয়ে রেখেছেন এনসিপি’র শরদ পাওয়ার। ফলে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পেলেও মহারাষ্ট্রে সরকার গঠন করা খুব একটা মসৃণ নাও হতে পারে বিজেপি’র পক্ষে। 


হরিয়ানায় এখনও পর্যন্ত যা প্রবণতা তাতে আশার আলাে নেই বিজেপির পক্ষে। এমনকী গণনার শেষ পর্যন্ত পিছিয়ে রয়েছেন খাট্টার মন্ত্রিসভার পাঁচ সদস্য। তবে ফল ত্রিশঙ্কু হলে, যার সম্ভাবনাই এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে উজ্জ্বল, সরকার গড়ার চাবিকাঠি হয়ে উঠতে পারে জননায়ক জনতা পার্টি। তারা দশটি আসনে এগিয়ে থাকায় শুরু হয়েছে জয়ােল্লাস। জেজেপি’র নেতা তথা ওমপ্রকাশ চৌতালার নাতি দুষ্যন্ত চোতালা বলেছেন, যে দল তাকে মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ার দিতে রাজি হবে, তাদের সঙ্গেই জোট বাঁধতে তিনি রাজি আছেন। তবে তিনি জানিয়েছেন, এখনও কারও সঙ্গে তার সেভাবে কথা হয়নি। চুড়ান্ত ফল প্রকাশের পরেই তারা এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে ৪০টি আসন পেয়ে একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসাবে ইতিমধ্যেই রাজ্যপালের কাছে সরকার গঠনের দাবি জানিয়েছেন। 

এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ১২টি আসনে এগিয়ে আছে জেজেপি। ৯০ আসনের হরিয়ানা বিধানসভায় বিজেপি এগিয়ে ৪১টি আসনে। কংগ্রেস এগিয়ে রয়েছে ৩০টি আসনে। ম্যাজিক ফিগার হল ৪৬টি আসন। স্বাভাবিকভাবেই ফল ত্রিশঙ্কু হওয়ার দিকেই এগােচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে, সেরকম কিছু হলে কিংমেকার হয়ে উঠবে জেজেপি। তবে কংগ্রেসের দাবি, তারাই সরকার গড়ছে হরিয়ানায়। দলের শীর্ষ নেতা তথা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ভূপিন্দর সিং হুদাকে যাবতীয় প্রয়ােজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশ দিয়েছে। এদিন সকালেই দিল্লিতে আহমেদ প্যাটেলের সঙ্গে দেখা করেছেন হরিয়ানা প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি কুমারী শৈলজা।

মহারাষ্ট্র বিধানসভা নির্বাচনে ভালাে ফল করেছে শিবসেনা। ভােটের ফল স্পষ্ট হওয়ার পরেই বিজেপি শিবিরে বার্তা দিয়ে উদ্ধব ঠাকরে মনে করিয়ে দিয়েছেন, চলতি বছরে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের সঙ্গে ৫০-৫০ চুক্তির কথা। তিনি বলেন, এই চুক্তিকে সমর্থন দিতে হবে। ১২৬টি আসনে লড়াই করে ৫৬টিতে জিতেছে শিবসেনা ২০১৪ সালের নির্বাচনে তারা জিতেছিল ৬৩টি আসনে।

এবার শিবসেনাকে ২৬টি আসন ছেড়েছিল বিজেপি। তারা নিজেরা লড়াই করেছে ১৫০টি আসনে। আগেই উপমুখ্যমন্ত্রী পদের দাবি জানিয়েছিল তারা। এদিন গণনা শুরু হতেই ভালাে আসন পাওয়ার ইঙ্গিত পায় শিবসেনা। তখনই ইঙ্গিত দেয়া হয় মুখ্যমন্ত্রী পদের। এদিন সকালেই শিবসেনার নেতা সঞ্জয় রাউত দাবি করে বসেন, মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী পদে বসাতে হবে উদ্ধব ঠাকরের পুত্র আদিত্য ঠাকরেকে।

এই সুযােগের সদ্ব্যবহার করতে বিন্দুমাত্র দেরি করেননি বর্ষীয়ান পােড় খাওয়া রাজনীতিবিদ শরদ পাওয়ার। শিবসেনার তরফ থেকে এই প্রস্তাব আসা মাত্রই তিনি সমর্থন করে দিয়েছেন। তাঁর দল জানিয়েছে, আদিত্যকে মুখ্যমন্ত্রী করে সরকার গঠন করতে আগ্রহী শিবসেনা। তবে জোটে থাকা আরেকটি বড় দল কংগ্রেস সরাসরি এ ব্যাপারে এখনও মন্তব্য না করলেও সমর্থন করার কথা ভাবতে পারে। তারাও সর্বশেষ খবরে ২৮৮ সদস্যের মহারাষ্ট্র বিধানসভায় বিজেপি দখল করেছে ১০৫টি আসন, শিবসেনা পেয়েছে ৫৬টি আসন, এনসিপি’র দখলে রয়েছে ৫৪টি, কংগ্রেসের ঝুলিতে ৪৪টি আসন এবং এমএনএস পেয়েছে ১টি আসন। অন্যান্যদের দখলে ২৮টি আসন।