দিল্লি, ২২ মার্চ– বৃহস্পতিবার রাতে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের দিল্লির বাড়িতে হানা দেয় ইডি৷ সেখানে তল্লাশি চালিয়ে মাত্র ৭০ হাজার টাকা উদ্ধার করেছে ইডি! কোনও নথিপত্র বা আর্থিক লেনদেনের প্রমাণও মেলেনি দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবন থেকে৷ বৃহস্পতিবার ইডির হাতে কেজরি গ্রেপ্তার হওয়ার পরে আপের তরফে এই তথ্য জানানো হয়৷ দিল্লির মন্ত্রী সৌরভ ভরদ্বাজ জানান, মাত্র ৭০ হাজার টাকা পাওয়া গিয়েছে কেজরির বাসভবন থেকে৷ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে তাঁর মোবাইল৷ সেই সঙ্গে আপের দাবি, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী থাকবেন কেজরিওয়ালই৷ দরকার হলে সরকার চালাবেন জেল থেকে৷ বৃহস্পতিবার আবগারি দুর্নীতি মামলায় কেজরিকে গ্রেফতার করার পর মাঝরাতে গ্রেপ্তারির বিরোধিতায় সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় আপ৷ যদিও রাতের বেলা সেই আবেদনের ভিত্তিতে কোনও পদক্ষেপ করেনি শীর্ষ আদালত৷ শুক্রবার এই মামলার শুনানি হয়৷
কেজরিওয়ালের গ্রেফতারির পরই একদিকে ফোন করেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অন্যদিকে কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি রাহুল গান্ধি৷ পরিবারের সঙ্গে কথা বলে আইনি সহায়তা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন রাহুল৷ শুক্রবার কেজরি পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে পারেন তিনি৷ কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধিও এই গ্রেপ্তারিকে ‘অসাংবিধানিক’ বলে তোপ দেগেছেন৷ অন্যদিকে, বিজেপির সদর দপ্তরের সামনে বিক্ষোভ দেখাতে ডাক দেওয়া হয়েছে আপ কর্মী-সমর্থকদের৷
তবে কেজরির গ্রেফতারিতে কংগ্রেস আপ তথা ধৃত মুখ্যমন্ত্রীর পাশে দাঁড়ালেও উল্টে গান গাইতে শোনা যায় প্রণবকন্যা শর্মিষ্ঠাকে৷ সরাসরি না হলেও পরোক্ষে তিনি এখনও কংগ্রেসের সঙ্গে যুক্ত৷ প্রণব মুখোপাধ্যায়ের কন্যা শর্মিষ্ঠা মুখোপাধ্যায় অরবিন্দ কেজরিওয়ালের গ্রেফতারিতে কতটা খুশি তা নিজেই সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে বুঝিয়ে দিলেন৷ স্পষ্ট বলে দিলেন, কর্মফল ভুগতে হবে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীকে৷
একদিকে কেজরির দলের আতিশি বিজেপি ও প্রধানমন্ত্রী মোদির বিরুদ্ধে চক্রান্তের অভিযোগ তুলেছেন৷ অন্যদিকে তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন প্রশ্ন তুললেন, নির্বাচনী প্রক্রিয়া শুরুর পর এই ধরনের ঘটনায় গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ কী হবে৷ কিন্ত্ত অন্য বিরোধী নেতা নেত্রীদের উলটো সুরে শর্মিষ্ঠা বলে দিলেন, ‘কেজরিওয়াল এবং আন্না হাজারের গ্যাং কংগ্রেসের বিরুদ্ধে সবচেয়ে ভিত্তিহীন, দায়িত্বজ্ঞানহীন এবং আজগুবি সব অভিযোগ তুলেছিল৷ এমনকী এটাও দাবি করেছিল শীলা দীক্ষিতের বিরুদ্ধে নাকি ট্রাঙ্ক ভর্তি সব প্রমাণ আছে৷ আজ অবধি সেই ট্রাঙ্ক তো কেউ দেখতে পেল না৷ কিন্ত্ত কেজরিওয়ালকে কর্মফল ভুগতে হবেই৷”
উল্লেখ্য, বারবার ইডি তলব করলেও হাজিরা এড়িয়ে গিয়েছেন অরবিন্দ কেজরিলয়াল৷ বৃহস্পতিবার নবমবার ডাকলেও তা এড়িয়ে গিয়ে আপ প্রধান দিল্লি হাইকোর্টে আবেদন করে বলেন, ইডি ডেকে জিজ্াসাবাদ করলেও গ্রেফতার করবে না এই মর্মে আশ্বাস দিলে তবেই তিনি ইডি দফতরে হাজিরা দেবেন৷ কিন্তু কেজরিওয়ালের এই আবেদনে সাড়া না দিয়ে আাদলত জানায়, তাঁকে কোনও সুরক্ষা দিচ্ছে না আদালত৷ আর এরপরই রাতে কেজরিওয়ালের বাড়িতে হানা দেয় ইডি৷ আর তারপরই গ্রেফতার৷
কেজরির গ্রেফতারি প্রসঙ্গে বলতে ছাড়েনি বিজেপিও৷ গেরুয়া শিবিরের কথায়, কেজরিওয়াল যা বুনেছেন তাই কেটেছেন৷ কিন্ত্ত তাঁর দল যেভাবে বলছে যে কেজরিওয়াল জেল থেকেই মুখ্যমন্ত্রীত্ব সামলাবেন, সেটা আসলে সংবিধানের অবমাননা৷ অবিলম্বে কেজরির ইস্তফা দেওয়া উচিত৷