আলোচনার মাধ্যমে শাহিন বাগের সমাধান, বললেন মধ্যস্থতাকারীরা

সিএএ'র বিরুদ্ধে দিল্লির শাহিন বাগে বিক্ষোভ প্রদর্শনকারীদের সঙ্গে মধ্যস্থ করার জন্য সুপ্রিম কোর্টের নিজুক্ত করা দুই আইনজীবী সঞ্জয় হেগড়ে ও সাধনা রামচন্দ্রন। (Photo: IANS)

সিএএ’র বিরুদ্ধে দিল্লির শাহিন বাগে প্রায় দুই মাস ধরে রাস্তা অবরােধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শনকারীদের সঙ্গে আলােচনার জন্য সুপ্রিম কোর্ট দুই আইনজীবী সঞ্জয় হেগড়ে ও সাধনা রামচন্দ্রনকে মধ্যস্থ নিযুক্ত করেছে।

বুধবার অ্যাপেক্স কোর্ট বিক্ষোভ প্রদর্শনকে মৌলিক অধিকার হিসেবে গণ্য করে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আলােচনার মাধ্যমে তাদের সাধারণের ব্যবহারকারী সড়ক অবরােধ মুক্ত ব্রার জন্য অনুরােধ করা হয়েছে। মধ্যস্থ নিযুক্ত আইনজীবী সঞ্জয় হেগড়ে জানান, আদালতের নির্দেশে আলােচনার মাধ্যমে সড়ক অবরােধ মুক্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। সকলের সহযােগিতা পাওয়া যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

অন্য নিযুক্ত মধ্যস্থ আইনজীবী সাধনা রামচন্দ্রন সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ বিক্ষোভকারীদের পড়ে শােনান। সুপ্রিম কোর্ট বিক্ষোভ প্রদর্শনকে মৌলিক অধিকার হিসেবে গণ্য করেছে, কিন্তু বিক্ষোভের নামে সড়ক অবরােধ কোনও আইন মােতাবেক কাজ নয়। এতে সাধারণ মানুষের প্রাত্যহিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে এবং তারাও তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, সাধারণ মানুষ যাতে বিনা বাধায় নাগরিক পরিষেবাগুলি ব্যবহার করতে পারে তা দেখাও সকলের কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। আমাদের সকলের অধিকারই পারস্পরিক মর্যাদাদানের ওই প্রতিষ্ঠিত। তাই আলােচনার মাধ্যমে এই অবরােধ প্রত্যাহার করে সমস্যার সমাধান করে এক নজির সৃষ্টির আহ্বান জানানাে হচ্ছে।


বিচারপতি এস কে কাউল এবং কে এম যােশেফ তাদের নির্দেশে জানান, একশ্রেণির মানুষ তাদের অভিযােগ কর্তৃপক্ষের কাছে পৌছে দেওয়ার জন্য সাধারণের ব্যহারকারী সড়ক অবরােধকে হাতিয়ার করছে। এতে একই মনােভাবাপন্ন দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ এতে অনুপ্রাণিত হয়ে সাধারণের অসুবিধা সৃষ্টিকারী ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন তাদের অভিযোগ জানানাের জন্য। এতে দেশে এক বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হচ্ছে।

গণতন্ত্রে মানুষ তাদের মতামত ব্যক্ত করার অধিকার ভােগ করেন, কিন্তু সকলেরই নির্দিষ্ট সীমা সম্পর্কে অবহিত থাকতে হবে। একটি গােষ্ঠীর মানুষ সরকারের প্রণয়ন করা আইনের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ। আইনটি বিচার বিভাগের বিচারাধীন। কিন্তু তাই বলে সংশ্লিষ্ট আইনের বিরুদ্ধে মানুষ বিক্ষোভ দেখাতে পারবেন না সে কথা আদালত বলে না। কিন্তু এই বিক্ষোভ প্রদর্শন কোথায় করা উচিত এটা দেখতে হবে।

যেখানে অবরােধ করে বিক্ষোভ অবস্থান করা হচ্ছে সেখানে যান চলাচলে কোনও বাধার সৃষ্টি হচ্ছে কিনা তা দেখতে হবে। সড়ক কখনও অবরােধ বিক্ষোভের স্থান হতে পারে না। আজ একটি গােষ্ঠী এমন করছেন, ভবিষ্যতে অন্য এক গােষ্ঠী তাদের অভিযােগ জানাতে একই ব্যবস্থা গ্রহণ করলে দেশ অচল হয়ে পড়বে। দেশের বিভিন্ন অংশ অবরুদ্ধ হয়ে পড়বে। মানুষ তাদের এমন অবরােধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে থাকলে। এখন দিল্লির মতাে শহরে মানুষ যদি সড়ক অবরােধ করার মাধ্যমে তাদের ক্ষোভ বিক্ষোভ প্রদর্শনে নামে তাহলে এক চরম বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হতে বাধ্য বলে মন্তব্য করেছেন বিচারপতি এস কে কাউল।

দুই জনস্বার্থ মামলার একটির পক্ষে আইনজীবী জানান, বিক্ষোভকারীদের অবরােধের ফলে সাধারণ মানুষ অশেষ অসুবিধার মধ্যে পড়েছে। এলাকার ছেলে মেয়েদের স্কুল কলেজ যেতে অসুবিধা হচ্ছে, তেমনই বাজার অফিস যেতেও মানুষকে ঘুরপথে যেতে হচ্ছে। তাই দিল্লি পুলিশের উচিত বিক্ষোভকারীদের জন্য একটি নির্দিষ্ট স্থানে বিক্ষোভের অনুমতি দেওয়া এবং সরক অবরােধ মুক্ত করা।

আদালত নিযুক্ত মধ্যস্থ আইনজীবীদের কাছ থেকে আদালতের নির্দেশ শােনার পরও শাহিন বাগে অবরােধকারীরা বিক্ষোভ অবরােধ প্রত্যাহার করবেন না বলে জানান। বিক্ষোভকারীরা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলােচনা করতে প্রস্তুত বলে জানা গিয়েছে। বিক্ষোভকারীদের মধ্যে এক মহিলা জানান, কেন্দ্র সরকার সিএএ প্রত্যাহার করলেই সব সমস্যার সমাধান হয়। কিন্তু সরকার সেটা না করে বিক্ষোভকারীদেরই দাবি প্রত্যাহার করতে বলছে। আদালতে মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য হয়েছে ২৪ ফেব্রুয়ারি।