নিরপেক্ষ তদন্ত এ‍বং নিরাপত্তার দা‍বিতে নাড্ডাকে চিঠি দিল একাধিক চিকিৎসকদের সংগঠন

জগৎপ্রকাশ নাড্ডা। (File Photo: IANS)

দিল্লি, ১৩ আগস্ট একগুচ্ছ দা‍বিদাওয়া জানিয়ে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জেপি নাড্ডাকে চিঠি লিখল দেশের রেসিডেন্স ডক্টর্স অ্যাসোসিয়েশন। শুধু তাই নয়, এদেশের চিকিৎসকদের ইতিহাসে আর জি কর হাসপাতালের ঘটনাকে ‘সবচেয়ে নিকষ্ট ঘটনা’ বলে উল্লেখ করেছে চিকিৎসকদের এই সংগঠন। ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের তরফেও আলাদা একটি চিঠি লেখা হয়েছে নাড্ডাকে। দাবি করা হয়েছে, চিকিৎসকদের উপর হিংসার বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় আইন আনতে হবে এবং হাসপাতালগুলিকে ‘সেফ জোন’ হিসে‍বে গড়ে তুলতে হবে।
 

নাড্ডাকে লেখা চিঠিতে বলা হয়েছে, দেশের সমস্ত হাসপাতালগুলিকে ‘সেফ জ়োন’ হিসাবে ঘোষণা করা হোক। সমস্ত বড় হাসপাতালগুলিতে পুলিশ ক্যাম্প তৈরি করা হোক। একইসঙ্গে নিয়োগ করা হোক পর্যাপ্ত নিরাপত্তা রক্ষী

ইন্ডিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের দাবি, একই রকম নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হোক বড় বেসরকারি হাসপাতালগুলিতেও। বিপদের সম্ভাবনা রয়েছে এমন এলাকা চিহ্নিত করে সিসি ক্যামেরা বসানো হোক। কেন্দ্রীয় স্তরে একটি আইন করার জন্য ২০১৯পেশ হওয়া ‘দ্য হেলথ কেয়ার পার্সোনেল অ্যান্ড ক্লিনিক্যাল এস্টাবলিশমেন্ট বিল-২০১৯’ ফেরানো হোক।
 
শুক্রবার সকালে আরজি কর হাসপাতালের সেমিনার রুম থেকে উদ্ধার হয় ৩১ বছরের তরুণী চিকিৎসকের ক্ষতবিক্ষত, ধর্ষিত দেহ। এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই প্রতিবাদের ঢেউ আছড়ে পড়ে আরজি কর হাসপাতাল–সহ গোটা দেশে। এই নৃশংস ঘটনার প্রতি‍বাদে গোটা দেশজুড়ে কর্ম‍বিরতি পালন শুরু করেন চিকিৎসকরা।
 
কলকাতা পুলিশ ইতিমধ্যেই একজনকে গ্রেফতার করেছে। অভিযুক্ত অপরাধের কথা স্বীকার করে নিয়েছে। তবে প্রতিবাদীদের দাবি, অভিযুক্ত সঞ্জয় শুধু নয়, এই ঘটনায় আরও কেউ জড়িত রয়েছে। আসল অপরাধীদের ধরে শাস্তি দিতে হবে।পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছে ৪৮ ঘণ্টা সময় দিয়ে দাবি করা হয়েছে, অবিলম্বে নিরপেক্ষ তদন্তের বন্দোবস্ত করা হোক। ঘটনার প্রেক্ষিত খতিয়ে দেখতে বিস্তারিত অনুসন্ধান করা হোক। চিকিৎসকদের এবং বিশেষত মহিলা চিকিৎসকদের কর্মস্থলে নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে অবিলম্বে পদক্ষেপ করুক রাজ্য সরকার। ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে এই চিঠি লিখেছেন।
 
দেশের সর্বত্র প্রতিবাদ-আন্দোলন শুরু হওয়ায় চিকিৎসা পরিষেবা ব্যাহত হয়েছে নানা প্রান্তে। সোমবার থেকেই চিকিৎসক সংগঠনের ডাকে দেশের বড় বড় শহরে কর্মবিরতি আন্দোলনে শামিল হয়েছেন ডাক্তারি-পড়ুয়া ও ডাক্তাররা।দিল্লির ১০টি সরকারি হাসপাতালে এদিন সকাল থেকে নিরাপত্তার দাবিতে কর্মবিরতি শুরু হয়। জরুরি বা আপৎকালীন পরিষেবা ছাড়া অন্য পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়েছে। রাজধানী শহরের মৌলানা আজাদ মেডিক্যাল কলেজ, আরএমএল হাসপাতাল, লেডি হার্ডিঞ্জ মেডিক্যাল কলেজ, ভিএমএমসি এবং সফদরজং হাসপাতাল, দীনদয়াল উপাধ্যায় হাসপাতাল, জিটিবি, আইএইচবিএএস, ডঃ বাবাসাহেব আম্বেদকর মেডিক্যাল কলেজ ও ন্যাশ্যনাল ইনস্টিটিউট অফ টিবি অ্যান্ড রেসপিরেটরি ডিজিজেস হাসপাতালের ডাক্তাররা কর্মবিরতিতে শামিল হয়েছেন।এমনকি এইমস হাসপাতালেও রোগী ভর্তিই প্রায় বন্ধ হওয়ার মুখে। অস্ত্রোপচারও কমে গেছে ৮০ শতাংশ। চিকিৎসকরা শুরু করেছেন কর্মবিরতি।উত্তরপ্রদেশের কিং জর্জ মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটিতেও আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে চিকিৎসা পাননি রোগীরা। ডাক্তারদের দলবেঁধে আউটডোরে গিয়ে চিকিৎসা বন্ধ করে দিতে দেখা যায়। রোগী পরিবার-আত্মীয়দের সঙ্গে সংঘাতও বাঁধে। মুম্বইতেও দেখা যায় একই ছ‍বিজেজে হাসপাতাল, সিয়ন হাসপাতাল, নায়ার হাসপাতাল এবং কিং এডওয়ার্ড মেমোরিয়াল হাসপাতালে বন্ধ হয়ে যায় চিকিৎসা। গতকালই রেসিডেন্স ডক্টর্স অ্যাসোসিয়েশন জানায় কর্মবিরতির কথা। বহির্বিভাগ, অপারেশন থিয়েটার এবং ওয়ার্ড ডিউটি স্তব্ধ হয়ে পড়ে সর্বত্র। শুধু এমার্জেন্সিতে কাজ চলছে কাল থেকে। তবে মুমূর্ষু রোগীর চিকিৎসাও করা হচ্ছে।