মুম্বই, ৪ জুন– মঙ্গলবার বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই দুটি বড়সড় পরিবর্তনের দিকে এগিয়ে গেল ভারত৷ এক রাজনৈতিক, দ্বিতীয় ব্যবসায়িক৷ একদিকে বাড়ছে লোকসভা নির্বাচনের গণনা৷ অন্যদিকে, ভোটফলের দিকে তাকিয়ে নামকে শেয়ার সূচক৷ মঙ্গলবার, ভোটফলের বিপরীত স্রোতে গত ২ বছরের মধ্যে সবথেকে বড় পত্তন দেখল শেয়ার বাজার৷ গণনা শুরু হতেই ব্যাপক লোকসান বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জে৷ বাজার খুলতেই ২ হাজার পয়েন্টেরও বেশি পড়ে গেল সেনসেক্সের সূচক৷ ২ শতাংশ কমেছে নিফটিও৷ বাজার খুলতে না খুলতেই ১৫ মিনিটেই বাজার থেকে উধাও হয়ে গেল ১৪ লক্ষ কোটি টাকা৷ শেষ খবর অনুযায়ী, ২১ লক্ষ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে শেয়ার বাজারে৷ যার ফলে প্রায় পথে বসার অবস্থা বহু মানুষের৷
উল্লেখ্য, ভোটগণনার শুরুতে এনডিএর সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি টক্কর দিচ্ছে ইন্ডিয়া জোট৷ সেই ইঙ্গিত মিলতেই ধস শেয়ার বাজারে৷ এদিন সকাল থেকেই বিপর্যয়ের মতো ধসে পড়ল শেয়ার বাজার৷ যাকে বাজার ব্যাপারিরা রক্তস্নান বলে বর্ণনা করেছেন৷ গত ২ বছরের মধ্যে একদিনে সর্বনিম্ন ধস নেমেছে দালাল স্ট্রিটে৷ সেনসেক্স ৩৭০০ পয়েন্ট এবং নিফটি ২২,১৪০ পয়েন্ট নেমে গিয়েছে৷
নির্বাচন শুরু হতেই যেখানে শেয়ারের গতি ধীর হয়, সেখানেই ভোটের ফল প্রকাশের পরই ঘুরে দাঁড়ায় শেয়ার বাজার৷ ইতিহাস এমনটাই বলছে৷ ১ জুন শেষ দফার ভোট গ্রহণ মিটতেই প্রকাশ পেয়েছিল এক্সিট পোল৷ আর এক্সিট পোলের পূর্বভাস দেখেই রকেট গতিতে উত্থান হয়েছিল সেনসেক্স-নিফটির৷ ৭৬ হাজার পার করেছিল সেনসেক্সের সূচক৷ নিফটিও পার করেছিল ২৩ হাজারের গণ্ডি৷ কিন্ত্ত আজ ভোট গণনা শুরু হতেই দেখা গেল সম্পূর্ণ উল্টো চিত্র৷
অষ্টাদশ লোকসভা নির্বাচন শেষ হয়েছে শনিবার৷ তার পর থেকেই প্রকাশ্যে এসেছে একের পর এক এক্সিট পোলের ফলাফল৷ সব এক্সিট পোলেই বিরাট ব্যবধানে এগিয়ে থেকে সরকার গড়ার দৌড়ে ছিল এনডিএ৷ ‘ফির একবার মোদি সরকার’ হওয়ার সম্ভাবনায় ঝড় ওঠে শেয়ার বাজারে৷ একলাফে ২ হাজার পয়েন্টেরও বেশি বেড়ে যায় সেনসেক্স৷ সর্বকালের সেরা সূচক ছুঁয়ে ফেলে৷ নজির গড়ে নিফটির সূচক৷ সোমবার এক্সিট পোলের উপর নির্ভর করে যে উত্থান এসেছিল, তা হুড়মুড় করে ভেঙে পডে় সকালে বাজার খুলতেই৷ বেলা ১১টা পর্যন্ত যখন এনডিএ-ইন্ডিয়া জোটের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলছে, তখন সেনসেক্স নেমে আসে ৩২০৩.৮২ পয়েন্টে অথবা ৪.১৯ শতাংশ৷ নিফটি ৯৭৩.৭০ পয়েন্ট পতন বা ৪.১৯ শতাংশ৷ এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, বিরোধীদের চোখে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ‘বন্ধু’ গৌতম আদানির সহযোগী কোম্পানিগুলির বিশাল পতন হয়েছে৷ লোকসানের মুখে পড়েছে কোল ইন্ডিয়া, ওএনজিসি, এইচডিএফসি ব্যাঙ্ক, আরআইএল, আইসিআইসিআই ব্যাঙ্কের মতো অধিকাংশ পিএসইউ ক্ষেত্র৷ আদানি-সহ বেশ কয়েকটি বড় সংস্থার শেয়ারেও ধস৷ জানা গিয়েছে, সবমিলিয়ে অন্তত ২১ লক্ষ কোটি টাকা হারিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা৷ বেলা সাড়ে তিনটে নাগাদ প্রায় ধ্বসের মুখে বন্ধ হয়ে যায় সেনসেক্সের সূচক৷
মঙ্গলবার আদানি উইলমার এবং আদানি টোটাল গ্যাস নেমেছে ৪ শতাংশ ও ৭ শতাংশ৷ পর্যায়ক্রমে ৩৫৩.৫০ টাকা এবং ১০৪৪.৯৫ টাকা৷ আদানি এন্টারপ্রাইজের শেয়ার পতন হয়েছে প্রায় ১০ শতাংশ, ৩২৮০.৭৫ টাকা৷ আদানি পোর্টস এবং বিশেষ অর্থনৈতিক করিডর বা সেজ নেমে এসেছে ৬.১৬ শতাংশ, ১৪৮৬.৩০ টাকায়৷ বিদু্যৎ ক্ষেত্রে আদানিদের দৈত্যাকার কোম্পানি আদানি পাওয়ারের শেয়ারে পতন ঘটেছে প্রায় ১৪ শতাংশ৷ টাকার হিসেবে ৭৫৬.৬৫৷ ভোটের ফলাফলের যে রকম প্রবণতা ধরা পড়ছে, সেই মুহূর্তে তার চিত্র ধরা পড়ছে দালাল স্ট্রিটেও৷ প্রতি সেকেন্ডে উত্থান-পতনের খেলা চলতে থাকলেও ভোটের ফল প্রকাশের দিন কয়েক লক্ষ কোটি টাকা যে জলে চলে গিয়েছে সে ব্যাপারে কোনও সন্দেহ নেই৷ এখন দেখার দিনের শেষে শেয়ার বাজার কী বার্তা নিয়ে আসে ব্যাপারিদের পকেটে৷