• facebook
  • twitter
Wednesday, 2 October, 2024

কেন্দ্রকে বক্তব্য জানাতে চার সপ্তাহের সময় দিল সুপ্রিম কোর্ট

সুপ্রিম কোর্ট দেশের সমস্ত হাইকোর্টকে নির্দেশ পাঠিয়েছে সংশােধিত নাগরিকত্ব আইন সংক্রান্ত মামলার শুনানি না করতে।

সুপ্রিম কোর্ট (Photo-File)

সংশােধিত নাগরিকত্ব আইনের (২০১৯) বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলির শুনানির পর বুধবার দেশের সর্বোচ্চ আদালত কেন্দ্রীয় সরকারকে অভিযােগগুলির উত্তর দেওয়ার জন্য চার সপ্তাহের সময় দিল। আগামী পাঁচ সপ্তাহের পর ফের এই মামলাগুলির শুনানির জন্য তালিকাভুক্ত করা হবে। 

উক্ত আইনের সাংবিধানিক বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তােলা হয়েছে এই সব মামলার আবেদনে। আবেদনকারীদের মধ্যে কেউ কেউ আবার এই মামলাগুলির চুড়ান্ত নিষ্পত্তি পর্যন্ত সংশােধিত নাগরিকত্ব আইনের উপর স্থগিতাদেশ জারি করার আবেদনও জানায় এদিন সুপ্রিম কোর্টে। 

কিন্তু প্রধান বিচারপতি এস এ বােবড়ের বেঞ্চ এদিন উক্ত আইনের উপর স্থগিতাদেশ দেয়নি। বেঞ্চের তরফে বলা হয়েছে এই আইনের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলির শুনানি হবে পাঁচ বিচারপতি বিশিষ্ট সাংবিধানিক বেঞ্চে। পাঁচ সপ্তাহের মধ্যে এই বেঞ্চ গঠন করা হবে। এই সাংবিধানিক বেঞ্চই উক্ত আইনের উপর স্থগিতাদেশ জারি করার আবেদনগুলি শুনবে এবং তার রায় দেবে। 

সুপ্রিম কোর্টে সংশােধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই ১৪৩টি মামলা হয়েছে। এদের মধ্যে অসম ও ত্রিপুরায় এই আইনের ভিন্ন প্রেক্ষিতকে মাথায় রেখে এই দুটি রাজ্যের মামলার আলাদাভাবে শুনানি করবে সুপ্রিম কোর্ট। 

বরিষ্ঠ আইনজীবী বিকাশ সিং শীর্ষ আদালতে বলেন, বাংলাদেশের জন্য অসমের সমস্যা একটু ভিন্ন। সেখানে আগে অসমে প্রবেশ করার কাট-অফ তারিখ ধার্য করা হয়েছিল ১৯৫০। পরে এটাকে পরিবর্তন করে কাট-অফ তারিখ করা হয় ১৯৭১। 

বর্ধিত সময়সীমাকেই চ্যলেঞ্জ জানানাে হয়েছে অসম থেকে দায়ের হওয়া মামলাগুলিতে। সুপ্রিম কোর্ট এই সব আবেদনের প্রেক্ষিতে দ্বিতীয়বার নােটিশ জারি করল কেন্দ্রীয় সরকারকে। 

কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষের আইনজীবী অ্যাটর্নি জেনারেল কে কে ভেনুগোপাল এদিন আদালতকে জানান, কেন্দ্রীয় সরকার উত্তর দেওয়ার জন্য আরও সময় চায়। কারণ প্রথার কেন্দ্রীয় সরকারকে যে নােটিশ জারি করেছিল আদালত, তারপর আরও ৮০টি মামলা দায়ের হয়েছে উক্ত আইনের বিরুদ্ধে। 

এদিন সুপ্রিম কোর্ট দেশের সমস্ত হাইকোর্টকে নির্দেশ পাঠিয়েছে সংশােধিত নাগরিকত্ব আইন সংক্রান্ত মামলার শুনানি না করতে। 

গত ১৮ ডিসেম্বর প্রধান বিচারপতি এস এ বােবড়ের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ বিভিন্ন আবেদনের জবাব দিতে নােটিশ পাঠিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকারকে। এদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হল ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন মুসলিম লিগ (আইইউএমএল) ও কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশের দায়ের করা আবেদনে। 

সংশােধিত নাগরিকত্ব আইনে পাকিস্তান, বাংলাদেশ এবং আফগানিস্তান থেকে ভারতে আগত হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ জৈন খ্রিস্টান এবং পার্সি সম্প্রদায়ের মানুষকে ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এরা যদি ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে যদি ভারতে এসে থাকেন, তাহলে তারা আইনত ভারতীয় নাগরিকত্ব পাবেন। সম্প্রদায়গুলির তালিকা থেকে আইনে বাদ রাখা হয়েছে মুসলিমদের। এই আইনে ধর্মের ভিত্তি বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়েছে এই অভিযােগ জানিয়ে প্রতিবাদে সরব হয় বহু মানুষ দেশে এবং বিদেশে। 

তাদের আরও অভিযােগ, এটা ভারতের প্রথম আজ যেখানে ধর্মের ভিত্তিতে ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে, যা ভারতীয় সংবিধানের ১৪ এবং ১৫ ধারার পরিপন্থী। ভারতের সংবিধানের মৌলিক অধিকার এই আইনের ফলে ক্ষুন্ন হয়েছে। এই বিতর্কিত আইন গত ১০ জানুয়ারি বলবৎ হয়েছে। 

আইইউএমএল সংশােধিত নাগরিকত্ব আইন ছাড়াও বিদেশি আইন (সংশােধিত) ২০১৫ এবং পাসপাের্ট আইন (সংশােধিত) ২০১৫-এর উপরও স্থগিতাদেশের আবেদন জানিয়েছে। তারা অভিযােগ করেছে সরকারের এই আইন সংবিধানের মূলনীতির বিরুদ্ধে। কারণ প্রকাশ্যেই নাগরিকত্ব দেওয়ার ব্যাপারে মুসলিম সম্প্রদায়ের সঙ্গে বৈষম্য করা হয়েছে। 

জয়রাম রমেশ তাঁর আবেদনে জানিয়েছে, এই আইন ভারতের মৌলিক অধিকারের উপর আঘাত, কারণ ভারতের সংবিধান অনৈক্যের মধ্যে ঐক্যের বার্তা তুলে ধরেছে। তিনি আইনের প্রশ্ন তুলে বলেছেন, ভারতের নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য ধর্ম কোনও শর্ত হতে পারে না। 

সংশােধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে যে শতাধিক মামলা দায়ের হয়েছে সুপ্রিম কোর্টে, এদের মধ্যে রয়েছে আরজেডি নেতা মনােজ ঝা, তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র, এআইএমআইএম নেতা আসাদুদ্দিন ওয়েসি, জামিয়াত-এ-উলেমা-এ হিন্দ, অল অসম স্টুডেন্টস ইউনিয়ন, পিস পার্টি, সিপিআই-এর দায়ের করা মামলাও। বুধবার যেহেতু সুপ্রিম কোর্টে এই মামলাগুলির শুনানি ছিল, এদিন এই আইনের প্রতিবাদে সকাল থেকে উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলি ছাত্র প্রতিবাদের জেরে বনধের চেহারা নেয়।