শাহিন বাগ বিক্ষোভ পরিস্থিতি মােটের ওপর শান্তিপূর্ণ হলেও উত্তরপূর্ব দিল্লির পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করল সুপ্রিম কোর্ট । পাশাপাশি স্পষ্ট করে দেওয়া হয়, শাহিন বাগ নিয়ে কোনও অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশ জারি করা হবে না। উত্তরপূর্ব দিল্লির পরিস্থিতিকে ‘দুর্ভাগ্যজনক’ বলেও মন্তব্য করে শীর্ষ আদালতের তরফে বলা হয়, পরিস্থিতি যে দিকে মােড় নিয়েছে তা উদ্বেগের কারণ হয়ে দাড়িয়েছে।
সংশােধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরােধিতায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে জনস্বার্থ মামলার একগুচ্ছ আবেদন শীর্ষ আদালতে জমা পড়েছে। আজ ওই জনস্বার্থ মামলাগুলির শুনানি করতে গিয়ে শীর্ষ আদালতের তরফে বলা হয়, রাস্তা বন্ধ করে মাসের পর মাস প্রতিবাদ বিক্ষোভ প্রদর্শন করার ফলে সাধারণ মানুষজনকে চরম সমস্যার মধ্যে পড়তে হচ্ছে। শাহিন বাগ সহ দিল্লির পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক করে তােলার লক্ষ্যে সচেষ্ট হওয়া আবশ্যক, তার জন্য প্রয়ােজন মহানুভবতার। শহরে শান্তি প্রতিষ্ঠা হওয়ার পরই জনস্বার্থ মামলার আবেদনগুলির শুনানি করা হবে। ২৩ মার্চ শাহিন বাগ মামলার পরবর্তী শুনানি হবে। পাশাপাশি উত্তরপূর্ব দিল্লির দাঙ্গা পরিস্থিতির উল্লেখ করে যে আবেদন করা হয়েছে, তা খারিজ করে দিয়ে বলা হয়, শীর্ষ আদালত বৰ্তমান পরিস্থিতিকে আরও উত্তেজনাময় করে তােলার পক্ষে নয়।
উত্তরপূর্ব দিল্লির পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আদালতের তরফে বলা হয়, একমাত্র প্রশাসনই স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনতে পারে শুধু তাই নয়, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিশ্চিত করতে পারে। দিল্লি পলিশকে একহাত নিয়ে শীর্ষ আদালতের বিচারপতি কে এম জোসেফ ও এস কে কউলের বেঞ্চের তরফে বলা হয়, পুলিশের পেশাদারিত্বের চুড়ান্ত খামতি ছিল- কারণ পুলিশ যদি বহিরাগতদের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলাে দিয়ে প্রবেশের সময় বাধা দিত, তাহলে সংঘর্ষের পরিস্থিতি তৈরি হত না।
সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আদালত পুলিশের মনােবল ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করছে। সুপ্রিম কোর্টের তরফে বলা হয়, আপনি ভুল বুঝবেন না। বেঞ্চের তরফে দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্যের কথা মাথায় রেখে মত প্রকাশ করা হয়েছে। দিল্লি কোর্টও সংঘর্ষের ঘটনার শুনানি করছে। আবেদনকারীরা আইনি পথে যেতে পারেন, কোনও বাধা নেই।
শাহিন বাগ নিয়ে দুই মধ্যস্ততাকারী অ্যাডভােকেট সাধনা রামচন্দ্রণ ও সিনিয়র অ্যাডভােকেট সঞ্জয় হেগড়ের দেওয়া রিপাের্ট পড়ে দেখে শীর্ষ আদালতের তরফে বলা হয়, রিপাের্টর একাধিক জায়গায় স্পষ্টতার অভাব চোখে পড়েছে। অ্যাডভােকেট সাধনা রামচন্দ্রণ ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বলেন, আদালত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে মধ্যস্থতাকারীদের রিপাের্টকে গুরুত্ব দিয়েছে। বেঞ্চ সময় দিয়েছে। পুরােটা শিক্ষা মূলক অভিজ্ঞতা ছিল। পাশাপাশি স্পষ্ট করে বলে দেওয়া হয়, জনস্বার্থ মামলার আবেদনকারী, কেন্দ্র ও দিল্লি পুলিশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে রিপাের্টটি শেয়ার করা হবে না। প্রাক্তন মুখ্য তথ্য কমিশনার ওয়াজাহাত হাবিবুল্লা বলেছিলেন, শাহিন বাগ থেকে জোর করে প্রতিবাদকারীদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হলে তা বিক্ষোভকারীদের সুরক্ষা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে।
তিনি শীর্ষ আদালতে হলফনামা জমা দিয়ে বলেন, আমি শাহিন বাগে গেছি। পুলিশ সেখানে কিভাবে ব্যারিকেড দিয়েছে তা নিজের চোখে দেখেছি। শাহিন বাগ ও সংলগ্ন এলাকায় প্রচুর রাস্তা রয়েছে, যেগুলির সঙ্গে প্রতিবাদ স্থলের কোনও যােগাযােগ নেই। কিন্তু ওই রাস্তাগুলােতে পুলিশ অকারণে ব্যারিকেড দিয়ে নিজেদের দায়িত্ব অস্বীকার করে বিক্ষোভকারীদের ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছে। ফলে স্থানীয় মানুষদের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। দেশের প্রায় সর্বত্র জাতীয় জনসংখ্যা রেজিস্টার, জাতীয় নাগরিকপঞ্জী ও সংশােধিত নাগরিক আইনের বিরােধিতায় মানুষজন প্রতিবাদ করছেন।
শীর্ষ আদালত পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে সিনিয়র অ্যাডভােকট সঞ্জয় হেগড়ে ও অ্যাডভােকেট সানা রামচন্দ্রণকে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলে সমাধান সূত্র খোঁজার পাশাপাশি হাব্দুিল্লা ও চন্দ্রশেখর আজাদের সহায়তা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।