দিল্লি, ২৩ জুলাই – তৃতীয় মোদি সরকারের প্রথম বাজেটকে ‘কুর্সি বাঁচাও’ বাজেট বলে তীব্র সমালোচনায় মুখর হল বিরোধী শিবির। কংগ্রেসের দাবি, এই বাজেট আসলে এনডিএর শরিকদের খুশি করার বাজেট। শুধু তাই নয় , এই বাজেট কংগ্রেসের ২০২৪ সালের ইস্তাহারকে নকল করে তৈরী হয়েছে বলেও দাবি করলেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধি। একই দাবি তৃণমূল, সমাজবাদী পার্টির মতো দলগুলিরও। বিরোধী দলগুলির বক্তব্য, লোকসভায় সংখ্যালঘু বিজেপি কেন্দ্রে সরকার বাঁচানোর স্বার্থেই দুই শরিক দলকে আর্থিক অনুদান দিয়ে সন্তুষ্ট রাখতে চেয়েছে। প্রসঙ্গত, বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার এবং অন্ধ্রের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডু শাসকজোট এনডিএ-র গুরুত্বপূর্ণ দুই শরিক। একে সামনে রেখেই মোদি সরকারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র দলগুলি।
মঙ্গলবার তৃতীয় মোদি সরকারের প্রথম বাজেট পেশ করলেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন। নির্মলার বাজেটে এনডিএর দুই শরিকদল টিডিপি এবং জেডিইউ শাসিত দুই রাজ্যের ঝুলি ভরে দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।বড় বড় আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে এই দুই রাজ্যের জন্য। বিরোধীদের আপত্তি সেখানেই। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধির দাবি নির্মলার বাজেট সারশূন্য। তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, এভাবে বৈষম্য তৈরি করা ঠিক নয়। সমাজবাদী পার্টি সুপ্রিমো অখিলেশ যাদবও একই সুরে কথা বলেন।
রাহুলের বক্তব্য, “এটা একটা কুরসি বাঁচাও বাজেট। শরিক দলগুলির দাবির কাছে মাথা নিচু করে অন্য রাজ্যগুলিকে বঞ্চিত করা হয়েছে। সাধারণ মানুষের সুরাহার কোনও দিশা নেই।” বিরোধী দলনেতার অভিযোগ, নির্মলার বাজেটে সাধারণ মানুষের জন্য স্বস্তির কোনও খবর নেই। উলটে, আম্বানি-আদানিদের উপকার হবে। কংগ্রেসের ইস্তেহার এবং পূর্ববর্তী বাজেটের কপি-পেস্ট করেছেন অর্থমন্ত্রী সীতারমন।” এই প্রসঙ্গে রাহুল ইংরাজিতে দুই ‘এ’র প্রসঙ্গ টানেন। কংগ্রেসের অন্দরের অনেকে মনে করছেন, দুই ‘এ’ বলতে তিনি শিল্পপতি মুকেশ অম্বানি এবং গৌতম আদানির পদবির আদ্যাক্ষরের দিকে ইঙ্গিত করেছেন।
কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে বলেন, ‘ এই বাজেট হতাশাজনক। এটা শুধু সরকারের চেয়ার বাঁচিয়ে রাখার জন্য। আমরা ন্যূনতম শস্যের সহায়ক মূল্য এবং সারে ভর্তুকি নিয়ে কিছু আশা করেছিলাম। সেটা হয়নি। রেলে এত ঘন ঘন দুর্ঘটনা ঘটছে। রেলের ট্র্যাক বা যাত্রীদের সুরক্ষা নিয়ে কোনও উন্নয়নের কথা ঘোষণা করা হয়নি। ‘
বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা পি চিদাম্বরম সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখেন, ‘ আমি জেনে আনন্দিত যে মাননীয় অর্থমন্ত্রী নির্বাচনের ফলাফলের পরে ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটের জন্য তৈরী কংগ্রেসের ইস্তাহার পড়েছেন। আমি খুশি যে তিনি কার্যত কংগ্রেসের ইস্তাহারের ৩০ পাতায় থাকা ‘কর্মসংস্থানের সঙ্গে জড়িত উৎসাহভাতা’ গ্রহণ করেছেন। কংগ্রেসের ইস্তাহারের ১১ পাতায় শিক্ষানবীশ স্কিম চালু করেছেন। অর্থমন্ত্রী যদি কংগ্রেসের ইস্তাহারের আরও কিছু প্রতিশ্রুতি নিয়ে নিতেন তাহলে ভালো হতো।’
সমাজবাদী পার্টির সুপ্রিমো অখিলেশ যাদবের অভিযোগ, শরিকদের খুশি করতে গিয়ে উত্তরপ্রদেশের উন্নয়নকে উপেক্ষা করা হয়েছে। অখিলেশের দাবি, বাজেটে কর্মসংস্থান সমস্যারও স্থায়ী কোনও সমাধান করতে পারেননি নির্মলা। উদ্ধব ঠাকরের শিব সেনা আবার অখুশি মহারাষ্ট্রের জন্য আলাদা বরাদ্দ না থাকায়। আদিত্য ঠাকরের প্রশ্ন, “বুঝলাম সরকার বাঁচাতে অন্ধ্র এবং বিহারকে বাড়তি টাকা দেওয়া হল। কিন্তু বিজেপিকে তো একনাথ শিণ্ডেও সমর্থন করেন। মহারাষ্ট্র কী পেল? মহারাষ্ট্র কী দোষ করল ?
শরিকি বাধ্যবাধকতার জন্য কেবল দু’টি রাজ্যকে আর্থিক সুবিধা দিয়ে কেন ‘যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে আঘাত’ করা হবে, সেই প্রশ্ন উঠছে। বাজেটে ‘মনরেগা’ বা ‘১০০ দিনের কাজ’ নিয়ে উল্লেখ না থাকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে বিরোধী দলগুলি। তিরুঅনন্তপুরমের কংগ্রেস সাংসদ শশী তারুর সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, “বাজেটে অনেক কিছুরই উল্লেখ নেই। এমনকি ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পের কথাও বলা হল না। দেশের প্রান্তিক স্তরে থাকা ৪০ শতাংশের উপার্জন বৃদ্ধির কোনও দিশা এই বাজেটে নেই।”
জয়রাম রমেশের দাবি, দশ বছর অস্বীকার করার পরে অবশেষে কেন্দ্রীয় সরকার স্বীকার করে নিল গণ বেকারত্ব ক্রমশ জাতীয় ইস্যুতে পরিণত হচ্ছে। তিনি আরও লেখেন, ‘ বাজেট বক্তৃতায় কাজের চেয়ে ভাবভঙ্গিতে বেশি মনোনিবেশ করা হয়েছে। ‘