সিঙ্গারা ঘিরে তুলকালাম কাণ্ড হিমাচল প্রদেশে। এই সিঙ্গারার কারণেই শোকজ করা হয়েছে পাঁচ পুলিশকর্মীকে। শুধু তাই নয়, ওই ৫ জনের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। গোটা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছে সিআইডি। এদিকে ঘটনার কথা প্রকাশ্যে আসতেই মুখ্যমন্ত্রীকে একহাত নিয়েছে গেরুয়া শিবির। বিজেপির বক্তব্য, সরকার জনগণের সমস্যার চেয়ে মুখ্যমন্ত্রীর খাবার নিয়ে বেশি চিন্তিত।
সিঙ্গারার কাণ্ডের শুরু ২১ অক্টোবর। ওই দিন মুখ্যমন্ত্রী সুখবিন্দর সিং সুখু সাইবার উইং স্টেশনের উদ্বোধন করতে সিআইডির সদর দপ্তরে গিয়েছিলেন। একজন ইন্সপেক্টর জেনারেল এক সাব-ইন্সপেক্টরকে পাঁচতারা হোটেল থেকে তিন বাক্স সিঙ্গারা এবং কেক আনার নির্দেশ দেন। তৈলাক্ত এবং মশলাদার সিঙ্গারা যে মুখ্যমন্ত্রী খাবেন, তা বুঝে উঠতে পারেননি ওই পুলিশ কর্তা। তাই মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তা কর্মীদের পরিবেশন করা হয় সিঙ্গারা-কেক।
সিআইডির দপ্তরে সেদিন বহু বিশিষ্ট ব্যক্তি, আমলা, পুলিশ আধিকারিক উপস্থিত ছিলেন। সিআইডির ডিজি এসআর ওঝা, আইজি সন্তোষ পাতিয়াল, ডিআইজি (ক্রাইম) ডিকে চৌধুরী এবং ডিআইজি (সাইবার ক্রাইম) মোহিত চাওলা উপস্থিত ছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী সুখুর সঙ্গে ছিলেন স্থানীয় বিধায়ক হরিশ জনার্থ এবং গ্রামীণ উন্নয়ন ও পঞ্চায়েতি রাজ মন্ত্রী অনিরুদ্ধ সিংও। তাঁর জন্য আনার সিঙ্গারা নিরাপত্তা রক্ষীরা খেয়ে ফেলায় বেজায় ক্ষুব্ধ হন মুখ্যমন্ত্রী।
সিআইডি আধিকারিকরা মনে করছেন, নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য নিয়ে এই ধরনের ঘটনা ঘটানো হয়েছে। এর পূর্ণাঙ্গ তদন্ত প্রয়োজন। তদন্তে উঠে এসেছে, যে সাব-ইন্সপেক্টরকে আইজি সিঙ্গারা-কেক আনতে বলেছিলেন, তাঁর বদলে সিঙ্গারা নিয়ে আসেন এক সহকারী সাব-ইন্সপেক্টর এবং একজন হেড কনস্টেবল। আর ওই বাক্সগুলিতে যে সিঙ্গারা আছে, তা শুধু মাত্র ওই সাব-ইন্সপেক্টরই জানতেন। ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার এক মহিলা পুলিশ কর্মী কাউকে না জিজ্ঞেস করেই ওই সিঙ্গারা নিরাপত্তা রক্ষীদের জন্য দিয়ে দেন।
বৃহস্পতিবার বিজেপির প্রধান মুখপাত্র রণধীর শর্মা এক বিবৃতিতে বলেন, রাজ্যের উন্নয়ন নিয়ে সরকার চিন্তিত নয়। মুখ্যমন্ত্রীর সিঙ্গারাই সরকারের একমাত্র উদ্বেগ বলে মনে হচ্ছে। এই ঘটনা হিমাচল প্রদেশের রাজনৈতিক মহলে আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আসলে মুখ্যমন্ত্রীর মতো একজন ভিভিআইপির কর্মসূচিতে সমন্বয়ের অভাবের কারণে সরকার খুবই বিব্রত।
সিআইডি তদন্তের নির্দেশের বিষয়টি অস্বীকার করেছে হিমাচল সরকার। সুখুর চিফ মিডিয়া অ্যাডভাইজার নরেশ চৌহান বলেন, সরকার এ ধরনের কোনও তদন্তের নির্দেশ দেয়নি। এ বিষয়ে সরকারের কিছু করার নেই। বিষয়টি সিআইডি নিজস্ব পর্যায়ে তদন্ত করছে। মুখ্যমন্ত্রীকে যে জলখাবার দেওয়া হয়েছিল, তা কাকে দেওয়া হয়েছিল? সেটাই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
চৌহান বিজেপিকে পাল্টা আক্রমণ করে বলেন, অযথা বিষয়টি নিয়ে জলঘোলা করছে বিজেপি। যেহেতু বিজেপির কোনও ইস্যু নেই, তাই এই ইস্যু দিয়ে কংগ্রেস সরকারের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচার চালানো হচ্ছে।
মুখ্যমন্ত্রীর অনুষ্ঠানে জলখাবার পরিবেশন করেন পর্যটন বিভাগের কর্মীরা। তাঁদের কোনও গাফিলতি আছে কি না, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সুখুর এক ঘনিষ্ঠ সহযোগী বলেন, কিছু স্বাস্থ্য সমস্যার কারণে সুখুর ডায়েটে সিঙ্গারা, পকোড়া ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। তৈলাক্ত জিনিস এড়িয়ে চলতে বলা হয়েছে। এই বিষয়টি কারোরই অজানা নয়।