স্ত্রীয়ের মৃত্যুতে শোকাহত, হাসপাতালের আইসিইউ-তে গুলি চালিয়ে আত্মঘাতী অসমের স্বরাষ্ট্রসচিব

গুয়াহাটি, ১৯ জুন – ক্যান্সারের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে অসম লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলেন উত্তর-পূর্বের রাজ্য অসমের স্বরাষ্ট্রসচিবের স্ত্রী। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হার মানতে হয় তাঁকে। স্ত্রীয়ের এই মর্মান্তিক পরিণতি অসহনীয় হয়ে ওঠে স্বরাষ্ট্রসচিবের পক্ষে। স্ত্রীয়ের মৃত্যুর খবর সহ্য করতে না পেরে কিছুক্ষণের মধ্যেই দিশেহারা, ভগ্নহৃদয় শিলাদিত্য চেটিয়া হাসপাতালের মধ্যেই নিজের সার্ভিস রিভলভার দিয়ে গুলি চালিয়ে আত্মঘাতী হন। ঘটনাটি ঘটে মঙ্গলবার।      
 
দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ হয়ে গুয়াহাটির হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব শিলাদিত্য চেটিয়ার স্ত্রী আগমনী বারবারুয়ার। মৃত্যুপথ যাত্রী স্ত্রীয়ের পাশেই ছিলেন শিলাদিত্য চেটিয়া। স্ত্রীয়ের চিকিৎসার জন্য গত ৪ মাস ধরে ছুটিতে ছিলেন ২০০৯ সালের ব্যাচের ওই আইপিএস আধিকারিক। গুয়াহাটি শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে স্ত্রীকে ভর্তি করে চিকিৎসা চালাচ্ছিলেন তিনি। মঙ্গলবার বিকেলে গুয়াহাটির ওই হাসপাতালে মৃত্যু হয় শিলাদিত্যের স্ত্রী আগমনীর। শেষ পর্যন্ত হাসপাতাল থেকে স্ত্রীয়ের মৃত্যুর খবর দেওয়া হয় তাঁকে। চিকিৎসকদের তরফে মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর সেই শোক সহ্য করতে পারেননি ওই আধিকারিক। কয়েক মিনিটের মধ্যেই চরম পদক্ষেপ নিয়ে ফেলেন তিনি। পুলিশসূত্রে খবর , হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটের মধ্যেই নিজের সার্ভিস রিভলভার থেকে গুলি চালিয়ে আত্মঘাতী হন ৪৪ বছরের শিলাদিত্য।
 
হাসপাতালের এমডি চিকিৎসক হিতেশ বড়ুয়া বলেন, ‘স্ত্রীয়ের চিকিৎসা চলাকালীন হাসপাতালেই থাকতেন তাঁর আইপিএস স্বামী। তাঁরা দুজনেই প্রায় দু’মাস ধরে হাসপাতালে ছিলেন।’ সূত্রের খবর, অসমের স্বরাষ্ট্রসচিবের স্ত্রী প্রায় দুই বছর ধরে ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করছিলেন। অন্যত্রও চিকিৎসা করানো হয় তাঁর। কিন্তু গত দু’মাসে অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে। গুয়াহাটির বেসরকারি হাসপাতালেই শেষে তাঁর চিকিৎসা চলছিল। হাসপাতালে একটি পৃথক ঘর নিয়ে স্ত্রীয়ের সঙ্গেই থাকছিলেন শিলাদিত্য চেটিয়া। তাঁকে জানানোও হয়, স্ত্রীয়ের অবস্থার অবনতি হচ্ছে। মঙ্গলবার বিকেল ৪.৩০টে নাগাদ চিকিৎসক আগমনী বারবারুয়ার মৃত্যুর খবর জানান। ডাক্তার এবং একজন নার্স সেই সময় তাঁর সঙ্গে হাসপাতালের ওই ঘরেই ছিলেন। শিলাদিত্য চেটিয়া অনুরোধ করেন, তাঁরা যেন ঘর থেকে বেরিয়ে যান, তিনি প্রার্থনা করবেন। তাঁরা বেরিয়ে যাওয়ার মিনিট দশেক পরই ঘর থেকে একটি গুলির শব্দ শোনা যায়। নিরাপত্তারক্ষী থেকে চিকিৎসক, সকলেই ছুটে যান সেই ঘরের দিকে। দেখা যায় রক্তাক্ত অবস্থায় ঘরের মেঝেতে পড়ে রয়েছেন আইপিএস আধিকারিক।
 
৪৪ বছর বয়সী শিলাদিত্য চেটিয়া ২০০৯ ব্যাচের আইপিএস। অসমের ডিআইজি ব়্যাঙ্কে তিনি কর্মরত ছিলেন। অসম ক্যাডার থেকে একজন আইপিএস অফিসার হিসেবে তাঁর কর্মজীবনের শুরু। এর আগে গোলাঘাট, তিনসুকিয়া এবং সোনিতপুর জেলায় এসপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। পুলিশ ব্যাটেলিয়নের কমান্ড্যান্টের দায়িত্বেও ছিলেন তিনি। দুঁদে এই অফিসারকে হিমন্ত সরকারের স্বরাষ্ট্র ও রাজনৈতিক সচিবের দায়িত্ব দেওয়া হয়। সূত্রের খবর, স্ত্রী আগমনী  বারবারুয়ার অসুস্থতার জন্য তিনি গত চার মাস ছুটিতেই ছিলেন। স্ত্রীয়ের চিকিৎসায় কোনও ত্রুটি ছিল না তাঁর। কিন্তু স্ত্রীয়ের শোকে আগল ভেঙে গেল কর্ম জীবনে বলিষ্ঠ, ঋজু, দুঁদে এই আইপিএস আধিকারিকের। নিজেও আত্মহত্যার পথ বেছে নিলেন তিনি।