আরজি কর-কাণ্ডে দেশজুড়ে চিকিৎসকে্দের কর্ম‍বিরতি , ‍বন্ধ আউটডোর, চরম নাকাল রোগীরা

আরজি কর হাসপাতালে ধর্ষণ–কাণ্ডে কড়া ‍বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ‍বন্দ্যোপাধ্যায়। এই ঘটনায় জড়িত কোন দোষীকে রেয়াত করা হ‍বে না ‍বলেও স্পষ্ট জানিয়েছেন তিনি। সোম‍বার খুন হওয়া মহিলা চিকিৎসকের বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সঙ্গে কথা ‍বলার পর মমতা ‍বলেন , ‘‘রবিবারের মধ্যে পুলিশ তদন্ত শেষ করতে না পারলে সিবিআইকে তদন্তভার দেওয়া হবে।’’
 
আরজি কর-কাণ্ডে মমতার এই কড়া ‍বার্তার মধ্যেই ঘটনার প্রতিবাদে সোম‍বার দেশ জুড়ে প্রতি‍বাদের ঝড় ওঠে । আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের শিক্ষান‍বিশ চিকিৎসককে ধর্ষণের ঘটনার ‍বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান সর্বভারতীয় স্তরের চিকিৎসকেরা। এর ফলে দেশের সর্বত্র চিকিৎসা পরিষেবা ব্যাহত হয়। সোমবার সংগঠনের ডাকে দেশের বড় বড় শহরে কর্মবিরতি আন্দোলনে শামিল হন চিকিৎসকরা।
 
দিল্লির ১০টি সরকারি হাসপাতালে সোম‍বার সকাল থেকে নিরাপত্তার দাবিতে কর্মবিরতি শুরু হয়। জরুরি বা আপৎকালীন পরিষেবা ছাড়া অন্যান্য পরিষেবা বন্ধ রাখায় ‍ব্যাহত হয় স্বাভাবিক চিকিৎসা পরিষে‍বা।। রাজধানীর মৌলানা আজাদ মেডিক্যাল কলেজ, আরএমএল হাসপাতাল, লেডি হার্ডিঞ্জ মেডিক্যাল কলেজ, ভিএমএমসি এবং সফদরজং হাসপাতাল, দীনদয়াল উপাধ্যায় হাসপাতাল, জিটিবি, আইএইচবিএএস, ডঃ বাবাসাহেব আম্বেদকর মেডিক্যাল কলেজ ও ন্যাশ্যনাল ইনস্টিটিউট অফ টিবি অ্যান্ড রেসপিরেটরি ডিজিজেস হাসপাতালের চিকিৎসকেরা কর্মবিরতিতে শামিল হন। সকাল ৯টা থেকে শুরু হয় কর্মবিরতি। আরডিএ সূত্রে জানা যায়, বহির্বিভাগ, অপারেশন থিয়েটার এবং ওয়ার্ড ডিউটি স্তব্ধ হয়ে পড়ে। শুধু এমার্জেন্সিতে কাজ চলে। ফেডারেশন অফ রেসিডেন্স ডক্টর্স অ্যাসোসিয়েশন এই কর্মবিরতির ডাক দেয়। তাতে সাড়া দিয়ে আরডিএ এই আন্দোলনে শামিল হয়।
 
সোমবার সকাল থেকে দিল্লির এইমস–এর হাসপাতালের বাইরে চিকিৎসক এবং মেডিক্যাল পড়ুয়াদের স্লোগান দিতে দেখা যায়। প্ল্যাকার্ড হাতে সকলে আর জি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে সোচ্চার হন। সি‍বিআই তদন্তের দাবি তুলেছেন সকলেইমধ্যপ্রদেশের ভোপাল এইমস-এর রেসিডেন্ট চিকিৎসকেরাও পথে নেমে বিক্ষোভ দেখান। মোমবাতি মিছিলও করেছেন তারা। স্লোগান উঠেছে, ‘নো সেফটি, নো ডিউটি।’
 
গোটা বিষয়টি নিয়ে ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের কর্নাটকের সভাপতি ডা. শ্রীনিবাস এস বলেন, ‘কলকাতার ঘটনা খুবই দুঃখজনক। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। পাশাপাশি, কেন্দ্রীয় সুরক্ষা আইন কার্যকরের দাবিও শোনা যায় ‍বিক্ষোভরত চিকিৎসকদের মুখে। আন্দোলনরত চিকিৎসকদের দাবি, শুধু ২৪ ঘণ্টা নয়, অনির্দিষ্ট কালের জন্য তাঁরা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।
 
চিকিৎসকদের বক্তব্য, কলকাতার হাসপাতালে যা ঘটেছে, তার সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। দোষীদের কঠোর শাস্তি দিতে হবে। একই সঙ্গে চিকিৎসকদের নিরাপত্তার দাবিও তোলা হচ্ছে চিকিৎসক সংগঠনগুলির তরফে। ফেডারেশন অফ রেসিডেন্ট ডক্টর্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট চিকিৎসক অভিরাল মাথুর বলেন, ‘‘এই ঘটনায় সকলের নিন্দা করা উচিত। আমাদের বেশ কিছু দাবি রয়েছে। সেই দাবি মানা না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি চলবে। তবে রোগীদের স্বার্থে জরুরি পরিষেবা চালু থাকছে। আমাদের সংস্থা প্রতিনিয়ত স্বাস্থ্য মন্ত্রালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছে।’’
 
আরজি কর হাসপাতালের চিকিৎসক খুনের ঘটনায় উত্তাল রাজ্য। হাসপাতালে নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার দাবিতে শনিবার থেকেই পথে নেমেছে চিকিৎসকদের একাংশ। সোম‍বার চিকিৎসকদের কর্মবিরতির জেরে সমস্যায় পড়েছেন রোগী এবং রোগীর পরিবার। চিকিৎসা করতে আসা রোগীরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। বন্ধ হাসপাতালের বহির্বিভাগ। এই পরিস্থিতিতে্ও দিল্লির এমসে আসা এক রোগী‍বলেন , ‘‘আমি সকাল ৭টায় হাসপাতালে এসেছি। চার-পাঁচ ঘণ্টা হয়ে গেল, কোনও চিকিৎসকের দেখা নেই। কলকাতায় যে ঘটনা ঘটেছে তা সত্যিই লজ্জাজনক। আমিও চাই দোষীর শাস্তি হোক।’’