শ্রীনগর, ৯ জুলাই – জম্মু ও কাশ্মীরের কাঠুয়ায় সেনার কনভয়ে গ্রেনেড হামলার ঘটনায় পাকিস্তান-যোগের খবর মিলল। শুধু তা-ই নয়, সোমবার যে হামলার ঘটনা ঘটে, তাতে আমেরিকায় তৈরী অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছিল বলেও সেনাসূত্রে দাবি করা হয়েছে। সূত্রের খবর, পাকিস্তান থেকে সীমান্ত পেরিয়ে জঙ্গিরা জম্মু ও কাশ্মীরে প্রবেশ করে। সেখানে স্থানীয় সাহায্য পায় তারা।হামলা চালাতে জঙ্গিরা এম৪ কার্বাইন রাইফেল ব্যবহার করেছিল। অত্যাধুনিক এই অস্ত্র তৈরি করেছে আমেরিকান সংস্থা। সোমবারের ঘটনায় পাঁচ জন জওয়ান নিহত হন বলে খবর মেলে। আরও ছয় জওয়ান গুরুতর আহত হয়েছেন। শনিবারের পর ফের সোমবার জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটায় উত্তপ্ত সমগ্র উপত্যকা। এই ঘটনার কড়া নিন্দা করে বড় হুঁশিয়ারি দিয়েছে ভারত।ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রক এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করে স্পষ্ট হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, প্রতিশোধ নেওয়া হবে। শহিদ জওয়ানদের বলিদান বৃথা যাবে না।
জানা গিয়েছে, সোমবার বিকেলে নিয়মমাফিক টহলদারি দিচ্ছিল সেনাবাহিনীর গাড়িগুলি। কাঠুয়া জেলা থেকে ১৫০ কিলোমিটার দূরে মাচেদি এলাকায় ওই কনভয় লক্ষ্য করে গ্রেনেড হামলা চালায় জঙ্গিরা। আকস্মিক এই আক্রমণের পাল্টা জবাব দেয় সেনাও। হামলা চালানোর পরই পাশের জঙ্গলে পালিয়ে যায় জঙ্গিরা। তাদের খুঁজতে সেনা এবং জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ জঙ্গলে তল্লাশি অভিযান চালায়। সেনা সূত্রে খবর, যে স্থানে হামলা চালানো হয়, সেখানকার রাস্তা ভাল ছিল না। গাড়ি ঘণ্টায় ১০-১৫ কিলোমিটারের বেশি বেগে চালানো সম্ভব ছিল না। কনভয়ের গাড়িগুলি খুব আস্তে চলছিল। সে সময়ই হামলা চালায় জঙ্গিরা। এক সেনা আধিকারিকের কথায়, ‘‘আমাদের পাঁচ জন সহকর্মীকে হারিয়েছি। আহতদের দ্রুত হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তাঁদের মধ্যে দু’জনের অবস্থা সঙ্কটজনক।’’
কাঠুয়াতে পাক মদতপুষ্ট জঙ্গিরা ব্যবহার করেছিল মার্কিন অস্ত্র। ইতিমধ্যে পাক জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই মহম্মদের ছত্রছায়ায় থাকা কাশ্মীর টাইগার সংগঠন এই হামলার দায় স্বীকার করেছে। সেনা সূত্রে জানা গেছে, পাকিস্তানের সীমান্ত পেরিয়েই জঙ্গিরা উপত্যকায় ঢুকেছিল। তাদের হাতে ছিল আমেরিকায় তৈরি হওয়া এম৪ কার্বাইন রাইফেল। এও অনুমান করা হচ্ছে, কাঠুয়াতে হামলার জন্য বেশ কয়েক দিন আগে থেকে পরিকল্পনা করেছিল জঙ্গিরা।
ঘটনার প্রতিক্রিয়া দিয়ে দেশের প্রতিরক্ষা সচিব বলেছেন, ”৫ জন জওয়ানের বলিদান বৃথা যাবে না। গোটা দেশ তাঁদের বীরত্বের কথা মনে রাখবে সারাজীবন। আর যারা এই সন্ত্রাসের মূলে, তাদের ছেড়ে কথা বলা হবে না। ভারত এর বদলা নেবেই।”
কাশ্মীরে সেনাদের উপর বার বার হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক শোরগোল। লোকসভার বিরোধী দলনেতা তথা কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধি কেন্দ্রকে তোপ দেগে বলেন, “শুধু ‘ফাঁপা বক্তৃতা এবং মিথ্যা প্রতিশ্রুতি’ দিলে চলবে না। সন্ত্রাস হানার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ করতে হবে।”
উল্লেখ্য, গত কয়েকদিন ধরেই জম্মু ও কাশ্মীরের নিরাপত্তা রক্ষীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ চলছে। শনিবার কুলগামে জঙ্গিদের সঙ্গে লড়াইয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ২ সেনা। পাল্টা ছয় জঙ্গিকে খতম করেছে জওয়ানরা। এরপর রবিবার রাজৌরিতে সেনা ক্যাম্প লক্ষ্য করে হামলা চালায় জঙ্গিরা। দুটি ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই ফের কাঠুয়াতে হামলার ঘটনা ঘটেছে।
প্রসঙ্গত, অমরনাথ যাত্রার মধ্যেই জম্মু -কাশ্মীরে পরপর জঙ্গি হামলার ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে। এদিকে অমরনাথ যাত্রা শেষ হওয়ার পরই উপত্যকায় বিধানসভা ভোট হওয়ার কথা। গত বৃহস্পতিবার গভীর রাত পর্যন্ত জম্মু-কাশ্মীরের বিজেপি নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সূত্রের খবর, সেই বৈঠকে বিধানসভা ভোট নিয়েই আলোচনা হয়েছে। তিনি উপত্যকার বিজেপি নেতাদের ভোটের জন্য প্রস্তুতি নিতে বলেছেন। তাই মনে করা হচ্ছে, অমরনাথ যাত্রা শেষ হলেই ভূ-স্বর্গের ভোটের প্রস্তুতি শুরু করে দেবে নির্বাচন কমিশন।