সংসদের রেকর্ড থেকে রাহুলের বিতর্কিত ‘হিন্দু’ মন্তব্য সরল,ফেরানোর দাবিতে স্পিকারকে চিঠি রাহুলের 

দিল্লি, ২ জুলাই – লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লার নির্দেশে সংসদের রেকর্ড থেকে মুছে দেওয়া হয়েছে বিরোধী দল নেতা রাহুল গান্ধির ‘বিতর্কিত’ মন্তব্য। এর প্রতিবাদে এবার স্পিকারকে চিঠি দিলেন কংগ্রস সাংসদ। মঙ্গলবার বিরোধী দলনেতা হিসাবে নিজের প্রথম ভাষণ দেন রাহুল গান্ধি। তিনি সোমবার বলেছিলেন, হিন্দুরা নয়, হিংসা ও ঘৃণা ছড়ায় বিজেপি । স্পিকারকে দেওয়া চিঠিতে তিনি জানান, তাঁর বক্তব্যের অংশটি সংসদের ৩৮০ ধারার মধ্যে পড়ে না।  বিরোধী দলনেতার আরও দাবি, তিনি যা বলেছেন তা প্রকৃতপক্ষে চরম ‘সত্যি’। পাশাপাশি সংসদের রেকর্ড থেকে সরিয়ে দেওয়া তাঁর মন্তব্য পুনরুদ্ধারের আর্জি জানিয়েছেন রাহুল গান্ধি । 
সংসদের রেকর্ড থেকে মুছে দেওয়া হয়েছে রাহুল গান্ধির মন্তব্যের একাংশ। সোমবার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধির বিজেপিকে উদ্দেশ্য করে  হিংসা ও ঘৃণা ছড়ানোর মন্তব্যে বিতর্কের ঝড় ওঠে। প্রতিবাদে সোচ্চার হন শাসক দলের নেতারা। মঙ্গলবার রাহুলের ভাষণে হিন্দু ধর্মের উল্লেখ নিয়ে একাধিক মন্তব্য সরিয়ে দেন স্পিকার ওম বিড়লা। এই সিদ্ধান্তে ফের ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন রাহুল। নিজের মন্তব্যের সমর্থনে তিনি বলেন, “সত্যি শুধু সত্যিই হয়। মোদির দুনিয়ায় সব সময়ে সত্যিকে মুছে ফেলা হয়।”
 
 রাহুল গান্ধি তারিখ ও সময় উল্লেখ করে জানিয়েছেন, যে যুক্তিতে তাঁর মন্তব্যকে সরানো হয়েছে তা ধারা ৩৮০-ধারার মধ্যে পড়ে না। কারণ তিনি কোনও ‘কুমন্তব্য’ বা ‘অপশব্দ’ ব্যবহার করেননি। রাহুলের কথায়, “আমার ভাষণের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ যেভাবে সরানো হয়েছে তা দেখে আমি বিস্মিত। আমি সংসদের অধিবেশনে যা বলেছি তা নিখাদ সত্যি। সংসদের প্রতিনিধিরা জনগণের সম্মিলিত কণ্ঠস্বরকে তুলে ধরেন। এটাই ভারতীয় সংবিধানের ১০৫ (১) ধারার বাক স্বাধীনতা। সাধারণ মানুষের হয়ে কথা বলা সংসদের প্রত্যেক সদস্যের অন্যতম অধিকার।” রাহুল আরও বলেন, “আমার মন্তব্য রেকর্ড থেকে সরিয়ে নেওয়া সংসদীয় গণতন্ত্রের নীতির পরিপন্থী।”

 

উল্লেখ্য, সোমবার সংসদে নিট প্রশ্নফাঁস কাণ্ড এবং বিরোধীদের কণ্ঠরোধে কেন্দ্রীয় এজেন্সির ব্যবহার নিয়ে সরব হন বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধি।  তিনি বিজেপির বিরুদ্ধে ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করার অভিযোগ আনেন। রাহুল বলেন, “হিন্দুরা কখনও হিংসা ছড়ায় না। কিন্তু বিজেপি গোটা দেশে হিংসা এবং ঘৃণা ছড়িয়ে চলেছে। যদিও আমাদের মনে রাখতে হবে যে বিজেপি এবং আরএসএসই সম্পূর্ণ হিন্দু সম্প্রদায় নয়।” রাহুল আরও বলেন, “এই দেশ ভয়ের দেশ নয়। আমাদের পূর্বপুরুষরা অহিংসার কথা বলেছেন। ভগবান শিব তাঁর গলায় সাপ রাখেন অভয়মুদ্রায়। ত্রিশুল হাতে থাকে না। অন্যদিকে, যারা নিজেদের হিন্দু বলছে তাঁরা দিনরাত শুধু হিংসা, অসত্য ও ঘৃণা ছড়িয়ে চলেছে। আপনারা হিন্দুই না। হিন্দুধর্মে স্পষ্ট লেখা হয়েছে, সত্যের সঙ্গে দাঁড়াও। সত্যের জন্য লড়াই করো।” একইসঙ্গে তিনি বলেন, ”বিজেপি কিংবা আরএসএস হিন্দু সমাজ নয়।” 

কংগ্রেস নেতার এই মন্তব্যের পরেই সরব হন  প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি । রাহুলকে উদ্দেশে তিনি বলেন, “আপনি এভাবে গোটা হিন্দু সম্প্রদায়কে দোষারোপ করতে পারেন না।” এরপর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ এবং সংসদীয় প্রতিমন্ত্রী কিরেন রিজিজু সোমবার রাতে স্পিকারের সঙ্গে দেখা করে বিরোধী দলনেতার ভাষণের বড় অংশ নিয়ে আপত্তি জানান। সংসদেও  সোমবার রাহুলের বিরুদ্ধে বক্তব্যের বিরোধিতা করেন শাহ। তিনিই প্রথম দাবি তোলেন রাহুলকে ক্ষমা চাইতে হবে। 


স্পিকারের অফিস সুত্রে জানা গিয়েছে সরকারের দাবি মেনে রাহুলের ভাষণের অনেকটাই বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছে সংসদের রেকর্ড থেকে।তবে উল্লেখযোগ্য হল , হিন্দুত্ব নিয়ে রাহুলের বক্তব্যের বিরুদ্ধে পদ্ম শিবির পথে নামলেও ওই বক্তব্য বাদ দেওয়ার দাবি সরকার পক্ষ জানায়নি।

সোমবার রাহুল অগ্নিবীর প্রকল্প নিয়ে বলেছিলেন, এটা সেনা বাহিনী নয়, প্রধানমন্ত্রীর মস্তিষ্ক প্রসূত প্রকল্প। স্পিকার সেই  বক্তব্য বাদ  দেন।  বাদ দেওয়া হয়েছে প্রধানমন্ত্রীকে জড়িয়ে আদানি, আম্বানি সম্পর্কে মন্তব্য। রাহুল বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রীকে ইদানীং আর  হাসতে দেখি না। সরকার ও স্পিকারের কাছে বিরোধী দলনেতার এই বক্তব্যও আপত্তিজনক মনে হয়েছে। ফলের বাদ দেওয়া হয় সেও অংশও।