দিল্লি, ৬ ফেব্রুয়ারি– বাংলার মুখ্যমন্ত্রী সাফ জানিয়ে দিয়েছেন আলোচনা পর্বে কংগ্রেস তাঁর প্রস্তাবে সম্মতি দেয়নি, তাই তিনি জোটে যাবেন না, কিন্তু তাঁর সঙ্গ ছাড়তে রাজি নয় কংগ্রেস৷ শুধু তাই নয় মমতা যে জোটের কতবড় গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার তা বহুবার বোঝানো হয়েছে মল্লিকার্জুন খাড়গে, রাহুল গান্ধির মতো কংগ্রেসের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের তরফে৷ বার-বার মমতার মন জয় করে জোটের জট কাটানোর চেষ্টা করা হচ্ছে বলেই কংগ্রেসের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে৷
বহুবার কংগ্রেসের আসন ভাগাভাগি নিয়ে প্রশ্ন তুললেও মমতাকে কটাক্ষ করা তো দূর তার প্রশংসাই করে গিয়েছে কংগ্রেস৷ সম্প্রতি তারই প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে বাংলায় ন্যায় যাত্রা করার সময় রাহুল গান্ধি একবারের জন্যও মমতা বা তৃণমূলের নাম মুখে আনেননি৷ দলের তরফে বর্ষীয়ান নেতা জয়রাম রমেশ বরং তৃণমূলের সঙ্গে জোটের বিষয় নিয়ে সংবাদমাধ্যমে মুখ খোলেন৷ কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ কিছুটা অনুযোগ প্রকাশ করেই বলেছিলেন, ‘একজন হঠাৎ করে বলে দিলেন আলোচনা বন্ধ হয়ে গেছে, আমরা ৪২ আসনেই লড়ব, এটা সঠিক নয়৷’ তবে অবশেষে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জোট নিয়ে মুখ খুললেন রাহুল৷
ওড়িশায় ভারত জোড়ো যাত্রার মাঝেই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হলে রাহুলকে সরাসরি প্রশ্ন করা হয়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কি ইন্ডিয়া জোটে আর নেই? যার উত্তরে রাহুল গান্ধি বলেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিঃসন্দেহে ইন্ডিয়া জোটের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ৷ তা মমতাজির নিজের স্টেটমেন্ট শুনলেই বোঝা যাবে৷’
ইন্ডিয়া জোটের একতা নিয়ে নানা রাজ্যে ঘটতে থাকা নানা টানাপোড়েন নিয়ে এদিন কংগ্রেস সাংসদ বলেন, ‘যারা প্রথম থেকে ইন্ডিয়া জোটের অংশ ছিলেন, তাঁরা এখনও রয়েছেন৷ তবে হ্যাঁ, মিস্টার নীতীশ কুমার ইন্ডিয়া জোট থেকে বিজেপির সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেছেন৷ সে কেন বেঁধেছেন আপনারা ভালো করেই জানেন৷ আমার বাকি শরিক দলগুলি জোট বেঁধেই বিহারে লড়ব৷ যেমন ইন্ডিয়া জোট আগে কথা দিয়েছিল, তাই হবে৷’ রাহুলের স্পষ্ট বক্তব্য, ‘এ কথা সত্য নয়, অনেক দল ইন্ডিয়া জোট ছেডে় বেরিয়ে যাচ্ছে৷ যেমনভাবে জোট তৈরি হয়েছিল, তেমনই রয়েছে৷’
গত কয়েকদিন ধরেই ইন্ডিয়া জোটের আসন ভাগাভাগি নিয়ে একাধিক জলঘোলা চলছে৷ সেই প্রশ্নে রাহুলের জবাব, ‘বাংলায় আসন সমঝোতা নিয়ে এখনও কথাবার্তা চলছে৷’ তাঁর দাবি, খুব দ্রুত আসন ভাগাভাগি নিয়ে আলোচনা সম্পন্ন হবে৷ তবে রাহুল যাই বলুন না কেন বাংলার ক্ষেত্রে তৃণমূল-জোট জটের জন্য যে কংগ্রেসের কিছু নেতাই দায়ী তা অস্বীকার করা যায়না৷ যেমন, অধীর রঞ্জন চৌধুরীকেই বাংলায় ইন্ডিয়া জোট না হওয়ার জন্য দায়ী করেছিলেন তৃণমূল কংগ্রেস নেতারা৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বাংলার শাসকদল নিয়ে তাঁর লাগাতার আক্রমণ ভালো চোখে নেয়নি তৃণমূল৷ এরপর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেন, লোকসভায় তিনি একলা চলো নীতি নিয়ে চলবেন৷ কংগ্রেসকে স্পষ্ট বার্তা দেন, বাংলায় কোনও জোট হবে না৷ যদিও নাছোড়বান্দা ছিল কংগ্রেস৷ দলের সম্পাদক জয়রাম রমেশ বলেন, ‘কিছু পেতে গেলে কিছু দিতে হয়৷’ এর মাঝেই ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রায় বাংলায় পৌঁছন রাহুল গান্ধি৷ সেখানে মুর্শিদাবাদে একটি বিডি় শ্রমিকের বাডি় যান তিনি৷ বিষয়টি নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কটাক্ষ করে বলেন, ‘এখন নতুন একটা ফ্যাশন হয়েছে৷ এখানে এসে শুধু ফটোশু্যট করছে৷ জীবনে কখনও চায়ের দোকানে বসেনি৷ শিশুদের আদর করেনি৷ শিশু কী জিনিস, জানে না৷ জীবনে কখনও বিডি় বাঁধেনি৷ এখন শুধু ফটোশু্যট করছে৷’