দিল্লি, ৮ জুন– ভারতের মতো গণতান্ত্রিক দেশে বিরোধী দলের গুরুত্ব প্রচুর৷ কেননা বিরোধী দলই পারে শাসকদলের কাজগুলিকে সঠিক পথে পরিচালনা করতে৷ কেননা বিরোধীদলের প্রশ্ন-বিতর্ক, জবাবদিহির জন্যই শাসকদল লাগামছাড়া হয়ে ওঠে না৷ কিন্তু ভারতের ক্ষেত্রে এর অন্যথাই দেখা গিয়েছে বিগত ১০ বছর৷ লোকসভা গত ১০ বছর বিরোধী দলনেতা ছাড়াই চলেছে৷ যদিও এবার সেই ছবি পাল্টাতে যাচ্ছে৷ একদশক পর পর বিরোধী দলনেতা পাচ্ছে দেশ৷ আর সেই পদে দলের প্রধান মুখ রাহুল গান্ধিকে চাইছে কংগ্রেস৷ শনিবার দিল্লিতে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে রাহুলকে বিরোধী দলনেতা হিসাবে দায়িত্ব নিতে অনুরোধ করে প্রস্তাব পাশ হয়ে গিয়েছে৷ একই সঙ্গে সোনিয়া গান্ধিকে দলের সংসদীয় দলের নেতৃত্ব দিতে অনুরোধ করে প্রস্তাব পাশ করানো হয়েছে৷
২০১৪ এবং ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে সাফল্য পেয়েছে কংগ্রেস৷ ৯৯ আসন জিতে বিরোধী দলের মর্যাদাও পুনরুদ্ধার করেছে৷ সেই সঙ্গে বিজেপি-কে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া থেকে রুখে দেওয়া সম্ভব হয়েছে৷ এই ঘটনাক্রমের পর শনিবার বসেছিল কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক৷ সোনিয়া গান্ধি, রাহুল গান্ধি, প্রিয়ঙ্কা গান্ধি ভদ্রা, মল্লিকার্জুন খাড়গে, জয়রাম রমেশ, কেসি বেণুগোপাল ছাড়াও এখাধিক কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন শনিবারের বৈঠকে৷ সেখানেই আগামী দিনে ইন্ডিয়া জোটকে অটুট রেখে এগিয়ে চলার পক্ষে সওয়াল উঠেছে৷ বৈঠকের পর মল্লিকার্জুন খাড়্গে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ইন্ডিয়া জোটকে সামনে রেখেই লড়াই চালাবে কংগ্রেস৷ লোকসভার ফল ‘ঘৃণা এবং বিদ্বেষমূলক’ রাজনীতিকে প্রত্যাখ্যানের রায় বলেও উল্লেখ করেছেন খাড়গে৷ বিজেপির একাধিপত্য রুখে দেওয়ার ক্ষেত্রে ইন্ডিয়া জোটের আঞ্চলিক দলের ভূমিকাও স্বীকার করা হল বৈঠকে৷
তবে গোটা দেশে কংগ্রেসের ফল যে আশানুরূপ হয়নি, তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে কংগ্রেসের বৈঠকে৷ বিশেষত কংগ্রেস শাসিত যে রাজ্যগুলিতে লোকসভা ভোটে দলের ফল খারাপ হয়েছে, সেগুলিতে বিশেষ ভাবে নজর দেওয়ার কথা বলেছেন খাড়গে৷ কংগ্রেস শীর্ষনেতৃত্ব মনে করছেন, পশ্চিমবঙ্গ, ছত্তিশগড়, মধ্যপ্রদেশ, অন্ধ্রপ্রদেশ, ওডি়শা, উত্তরাখণ্ড এবং কংগ্রেস শাসিত কর্ণাটক ও হিমাচল প্রদেশে দলের ফল খুবই খারাপ হয়েছে৷ তবে এসবের বাইরে যে জয় কংগ্রেস হাসিল করেছে তার জন্য রাহুল গান্ধিকে কৃতিত্বও দেওয়া হয়েছে৷ এসসি, এসটি, পিছিয়ে পড়া এলাকায় কংগ্রেসের ফলাফল তুলনামূলক ভালো হয়েছে বলে জানানো হয়েছে বৈঠকে৷ ছ’মাস আগে বিধানসভা ভোটে বিপুল ভাবে জেতা তেলঙ্গানাতেও বিজেপি কড়া টক্কর দিয়েছে৷ কংগ্রেস শাসিত হিমাচলের চারটি লোকসভাই বিজেপি জিতেছে৷ কেন এই সব জায়গায় ফল প্রত্যাশিত হবে না, তা নিয়ে পর্যালোচনা করে যথোপযুক্ত পদক্ষেপ করার কথাও জানিয়েছেন খাড়্গে৷
বিরোধী দলনেতার পদ পেতে হলে লোকসভায় মোট আসনের ১০ শতাংশ পেতে হয়৷ অর্থাৎ ৫৫ জন সাংসদ প্রয়োজন পড়ে৷ ২০১৪ সালে এবং ২০১৯ সালে নূ্যনতম সেই সংখ্যাও জোগাড় করতে পারেনি কংগ্রেস৷ এবার পরিস্থিতি অন্য৷ এবার কংগ্রেসের হাতে ৯৯ জন সাংসদ৷ সঙ্গে রয়েছে ইন্ডিয়া জোটের শরিকদের সমর্থন৷ ফলে কংগ্রেসের হাতে সরকারকে কোণঠাসা করার ভালো সুযোগ রয়েছে৷ সেক্ষেত্রে রাহুল বিরোধী দলনেতা হলে লড়াইটা জোরাল হবে বলে মনে করছে কংগ্রেসের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারক কমিটি৷