কেরলের বিধস্ত ওয়ানাড়ে দুর্গতদের পাশে রাহুল-প্রিয়ঙ্কা

প্রতিকূল আবহাওয়ায় লড়তে সেনার দাবি রেকো রেসকিউ ও রিমোট সেন্সিং যন্ত্র 
ওয়ানাড়, ১ আগস্ট– বেবুধবার পরিস্থিতি খারাপ থাকায় যাওয়ার অনুমতি না পেলেও বৃহস্পতিবার কথামত ধস-বিধ্বস্ত ওয়েনাড়ে পৌঁছলেন কংগ্রেসের দুই শীর্ষ নেতা রাহুল গান্ধি  ও প্রিয়াঙ্কা বড়রা।  বিমানে কান্নুর বিমানবন্দরে নেমে সেখান থেকে ওয়ানাড় রওনা দেন কংগ্রেসের বিরোধী দলনেতা তথা ওয়ানাড় থেকেই নির্বাচিত প্রাক্তন সাংসদ। এখানে তাঁর সঙ্গে বোন ও ওয়ানাড় কেন্দ্রের উপনির্বাচনে কংগ্রেসের সম্ভাব্য প্রার্থী প্রিয়ঙ্কা গান্ধি। সোজা পৌঁছন ক্ষতিগ্রস্ত চুরালমালা গ্রামে। বিপর্যয়ে ওয়ানড়ের যে চারটি গ্রাম সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তার মধ্যে একটি চুরালমালা। সেখানে পৌঁছে দু’জনেই বিপর্যস্তদের সঙ্গে কথা বলেন। গায়ে নীল রঙের রেইনকোট জড়িয়ে পায়ে হেঁটে পর্যবেক্ষণ করেন গোটা গ্রাম। ঘুরে দেখেন ত্রাণশিবির। কংগ্রেস সূত্রের খবর, স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গেও ত্রাণ বিলি এবং উদ্ধারকাজ নিয়ে কথা বলেন তাঁরা।
সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত ওয়ানাড় জেলায় এ পর্যন্ত প্রায় প্রায় ৩০০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে আশঙ্কা। জলের তোড়ে ও ধসে জখমের সংখ্যা ২০০। আরও আড়াইশো মানুষ এখনও নিখোঁজ। মুন্ডাক্কাই এবং চুরামালায় নিখোঁজদের কেউ বেঁচে নেই বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন। যদিও নিখোঁজদের উদ্ধার ও যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক করার চেষ্টা চালাচ্ছে সেনাবাহিনী।
যদিও উদ্ধারকাজ চালাতে সেনাবাহিনীর প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়াচ্ছে প্রতিকূল আবহাওয়া। যার ফলে সেনাবাহিনীও প্রায় খাবি খাচ্ছে উদ্ধারকার্যে নেমে। কেন্দ্রের কাছে তারা ন্যাশনাল টেকনিক্যাল রিসার্চ অর্গানাইজেশনের অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তি চেয়ে পাঠাচ্ছে। তার মধ্যে রয়েছে এনটিআরও-র রেকো রেসকিউ সিস্টেম এবং রিমোট সেন্সিং ইকুইপমেন্ট। 

 

রেকো হল উদ্ধারকাজে ব্যবহৃত একটি বিশেষ অত্যাধুনিক প্রযুক্তির যন্ত্র। যা সাধারণত ভূগর্ভের নীচে আটকে থাকা প্রাণ অথবা দেহের সন্ধান দিতে পারে। এনটিআরও-র কাছে এ ধরনের যন্ত্র আছে। যা চেয়ে পাঠাচ্ছে সেনাবাহিনী। কেননা কয়েকশো বর্গকিমি এলাকায় কাদামাটির নীচে এখনও বহু মানুষ রয়ে গিয়েছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এই পরিস্থিতিতে রেকো রেসকিউ সিস্টেম দিয়ে খোঁজ চালাতে চাইছে সেনাবাহিনী। সাধারণত এই প্রযুক্তি খনি ধস বা তুষারধসে চাপা পড়াদের খোঁজে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এর সেন্সর মাটির নীচে চাপা পড়া মানুষের খোঁজ দিতে সক্ষম। হারমোনিক রাডার সিস্টেমের মাধ্যমে এটা কাজ করে। রেকো ডিটেক্টর ব্যবহার হয় প্রধানত পেশাদারি উদ্ধারকার্য এবং স্কি টহলের কাজে। বিশ্বের প্রায় ৩২ দেশের ৯০০ স্কি রিসর্টে এই ডিটেক্টর রয়েছে।


অন্যদিকে, রিমোট সেন্সিং ইক্যুইপমেন্টও প্রায় একই জাতীয় প্রযুক্তি। যা দেখতে না পাওয়া বা ছুঁতে না পারা কোনও বস্তুর খোঁজ দেয়। এখন এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে ওয়ানাড়ে জীবিত প্রাণের খোঁজ চালাতে চাইছে সেনাবাহিনী। একদিকে সেনাবাহিনী অন্যদিকে রাজ্য সরকার নিরলস চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে উদ্ধারকাজে। তদারকিতে ওয়ানাড়ে ঘাঁটি গেড়ে রয়েছেন রাজস্বমন্ত্রী, বনমন্ত্রী, পিডব্লুডি এবং পর্যটনমন্ত্রী ও এসসি-এসটি দফতরের মন্ত্রী।

এদিন ওয়ানাড় চুরালমালা এলাকার মেপ্পাড়ির কমিউনিটি হেল্থ সেন্টারে গিয়ে দুর্গতদের সঙ্গে কথা বলেন রাহুল-প্রিয়াঙ্কা । এরপর তাঁরা স্থানীয় একটি হাসপাতাল এবং দুটি ত্রাণশিবিরও দেখতে যান। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন এআইসিসির সাধারণ সম্পাদক তথা আলাপ্পুঝার সাংসদ কেসি বেণুগোপাল।
গত ৩০ জুলাই, মঙ্গলবার ভারী বৃষ্টির জেরে ধস নেমেছিল ওয়েনাড়ে। যার জেরে চুরালমালা, মুন্ডাক্কাই, অট্টামালা, নুলপুঝার মতো গ্রামগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যে ওয়েনাড় পর্যটকদের অন্যতম পছন্দের, সেখানে এখন মৃত্যুপুরীর নিস্তব্দতা, ওয়েনাড়ে এখন শুধুই স্বজন হারানোর কান্নার রোল।
উল্লেখ্য, রাহুল ২০১৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ওয়ানড়ের সাংসদ ছিলেন। ২০২৪ সালেও ওই কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত হন। কিন্তু মায়ের ছেড়ে যাওয়া আসন রায়বরেলি হাতে রাখার জন্য ওয়ানড়ের সাংসদ পদ ছাড়েন তিনি। ওই কেন্দ্রের উপনির্বাচনে লড়বেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধি । ওয়ানড়ে বিপর্যয়ের পরদিন অর্থাৎ বুধবারই ওয়ানড়ে যাবেন বলে মনস্থ করেছিলেন রাহুল গান্ধি এবং প্রিয়াঙ্কা গান্ধি । কিন্তু খারাপ আবহাওয়ার জন্য যাওয়ার অনুমতি পাননি। বুধবার সোশাল মিডিয়ায় রাহুল গান্ধি বার্তা দেন, খারাপ আবহাওয়ার জন্য তাঁদের পক্ষে ওয়ানড় যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। পরিস্থিতি অনুকূলে এলেই তিনি এবং প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ওয়ানড়বাসীর দুঃখ ভাগ করে নিতে হাজির হবেন। সেই কথা রেখে বৃহস্পতিবারই রাহুলরা ওয়ানড়ে।