শেয়ার বাজার নিয়ে মোদি – শাহের বিরুদ্ধে যৌথ সংসদীয় কমিটির তদন্ত দাবি রাহুলের

দিল্লি, ৬ জুন – ভেঙে গিয়েছে ১৭তম লোকসভা৷ নতুন সরকার এখনও গঠন হয়নি৷ তার আগেই, বৃহস্পতিবার , প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে কিছু গুরুতর অভিযোগ তুলে চাপ সৃষ্টি করলেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধি৷ নির্বাচন চলাকালীন, বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব বারংবার লগ্নকারীদের শেয়ার কেনার পরামর্শ দিয়েছিলেন৷ বৃহস্পতিবার সাংবাদিক বৈঠক করে রাহুল গান্ধি  বলেন, এক্সিট পোলের মাধ্যমে দেশের ৫ কোটি বিনিয়োগকারীর ৩০ লক্ষ কোটি টাকা লুঠ হয়েছে। সেই বিদেশি লগ্নিকারী কারা, যারা একদিনে শেয়ার বাজারে মাত্র ৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে বিপুল মুনাফা কামিয়ে নিল ? সেই বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থার সঙ্গে বিজেপির পেটোয়া এক্সিট পোল সংস্থার সম্পর্ক কী ? রাহুলের প্রশ্ন, কেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি  ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ ভোটের ফল প্রকাশের আগে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করার উপদেশ দিলেন ? মানুষকে বিনিয়োগের উপদেশ দেওয়া কি প্রধানমন্ত্রীর কাজ?

রাহুলের পাশে বসে কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ বলেন, ক্রোনোলজি বোঝার চেষ্টা করুন। প্রথমে মোদি ও অমিত শাহ শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করতে বললেন। তার পর এক্সিট পোলে বিজেপিকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে দেখানো হল। তার পর একদিনের মধ্যে কয়েকটি সংস্থা ট্রেডিং করে মোটা টাকা লুটে নিল। গরিব বিনিয়োগকারীরা পথে বসল। মোট ৩০ লক্ষ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে এতে।
 
রাহুলের বক্তব্য, ৩০ লক্ষ কোটি টাকার এই শেয়ার বাজার কেলেঙ্কারির জন্য যৌথ সংসদীয় কমিটির মাধ্যমে তদন্ত চাই। এই কেলেঙ্কারিতে কারা কারা লাভবান হয়েছে, কীভাবে এই কেলেঙ্কারি করা হয়েছে তা খুঁজে বের করতে হবে।
 
তৃণমূল সাংসদ সাকেত গোখেলও একই অভিযোগ তুলে সেবিকে চিঠি দিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, অ্যাক্সিস মাই ইন্ডিয়া ১ জুন জানায় চারশ ছুঁতে পারে এনডিএ। বাংলায় ২৬ থেকে ৩১টি আসন পেতে পারে বিজেপি। শনিবার এক্সিট পোলের ফল প্রকাশের পর সোমবার শেয়ার বাজার চাঙ্গা  হয়ে ওঠে । তৃণমূলের প্রশ্ন হল, ওই দিন কারা এক্সিট পোলকে ব্যবহার করে মুনাফা করল ? সাকেত বলেন, অ্যাক্সিস মাই ইন্ডিয়ার অন্যতম ক্লায়েন্ট হল বিজেপি। সুতরাং দেখতে হবে, এই চক্রে কে কার সঙ্গে জড়িত।


ফল প্রকাশের আগে এক সাক্ষাৎকারে অমিত শাহ বলেন, “৪ জুনের আগে শেয়ার কিনে নেবেন, ওটা শুট আপ করবে”। অর্থাৎ হু হু করে দাম বাড়বে। আবার প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৪ জুন ভোটের ফল প্রকাশের পর শেয়ার বাজার এমন তেজি হবে যে তাদের সমস্ত প্রোগ্রামিং ফেল করে যাবে। 

বুথ ফেরত সমীক্ষায় বিজেপির দুর্দান্ত জয়ের ইঙ্গিত পেয়ে, ফল প্রকাশের আগের দিন রেকর্ড বৃদ্ধি ঘটে শেয়ার বাজারে৷ কিন্ত্ত, পরদিন ফলাফল বুথ ফেরত সমীক্ষাগুলিকে মিথ্যে প্রমাণ করে দেওয়ার পরই, বড়-সড় ধস নামে শেয়ার বাজারে৷ মাথায় হাত পডে় খুচরো লগ্নিকারীদের৷ এই গোটা বিষয়টিকে এদিন ভারতের ইতিহাসে সবথেকে বড় স্টক মার্কেট কেলেঙ্কারি বলে দাবি করেছেন রাহুল৷ কংগ্রেসের পক্ষ থেকে ৪ জুন শেয়ার বাজারের বিপর্যয়ের বিষয়ে যৌথ সংসদীয় কমিটির তদন্ত দাবি করা হয়েছে৷

এরপর ৩ জুন, স্টক মার্কেট আগের সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছিল৷ আর ৪ জুন ভোটের ফল বের হওয়ার পর, এক ধাক্কায় পডে়ছিল স্টক মার্কেট৷ তথ্য দিয়ে তিনি জানান, ৩০ এবং ৩১ মে স্টক মার্কেটে, তার আগের দিনগুলির তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ লগ্নি এসেছিল৷ রাহুলের দাবি, যারা জানতেন স্টক মার্কেটে কিছু করসাজি চলছে, তাঁরাই এই সময়ে লগ্নি করেছিলেন৷ হাজার কোটি টাকা লগ্নি করা হয়েছিল৷ বিদেশি লগ্নিকারীরাও টাকা লাগান৷ এরপর, ৪ জুন ৩০ লক্ষ কোটি টাকার ক্ষতি হয় খুচরো লগ্নিকারীদের৷ এরপরই রাহুল বলেন, “এটা ভারতের স্টক মার্কেটের সবথেকে বড় কেলে ঙ্কারি৷”

রাহুল বলেন, “এটা যে একটা আর্থিক কেলেঙ্কারি, এই বিষয়ে আমাদের কোনও সন্দেহ নেই৷ ৫ কোটি ভারতীয় খুচরো লগ্নিকারীর ক্ষতি করে, হাজার হাজার কোটি টাকা লাভ করেছেন কেউ৷ আর তাঁদের স্টক কেনার জন্য ইঙ্গিত দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী৷ এটা পৌজদারি অপরাধ৷ তাই আজ আমরা দাবি জানাচ্ছি, যৌথ সংসদীয় কমিটি এই ঘটনার তদন্ত করুক৷”