দিল্লি, ৬ জুন – একটি আসন রাহুল গান্ধির রাজনৈতিক জীবনকে রক্ষা করেছিল , অন্য আসনের সঙ্গে রয়েছে তাঁর আবেগের বন্ধন।২০১৯ -এ অমেঠি কেন্দ্র মুখ ফিরিয়ে নেয় তাঁর দিক থেকে। আর সেই দুর্দিনে তাঁকে দুই হাত উপচে ভোটে জিতিয়েছে কেরলের ওয়েনাড়। কিন্তু ছবিটা বদলে গেছে ২০২৪ – এ। মা সোনিয়া গান্ধির ছেড়ে যাওয়া দেওয়া আসন রায়বরেলি এবং নিজের পুরোনো আসন ওয়েনাড় – দুটি আসনেই বিপুল ভোটে জিতেছেন রাহুল গান্ধি। কিন্তু সংসদীয় নিয়ম অনুযায়ী তাঁকে যে কোন একটি কেন্দ্রের সাংসদ পদ ছাড়তে হবে। কোন আসনটি ছাড়বেন , তা এখনও জানা যায়নি। তবে স্মৃতি ইরানিকে হারিয়ে অমেঠি পুনুরুদ্ধার করা কংগ্রেস সাংসদ কিশোরীলাল শর্মার আর্জি, রাহুল রায়বরেলির সাংসদ থাকুন। কারণ এই কেন্দ্র থেকে জিততেন তাঁর ঠাকুমা, জিতে এসেছেন তাঁর মা-ও।
দুঃসময়ে পাশে দাঁড়ানো ওয়েনাড়, নাকি মা সোনিয়া গান্ধির ছেড়ে দেওয়া আসন রায়বরেলি ? কোন লোকসভা কেন্দ্রকে নিজের সংসদীয় ক্ষেত্র হিসাবে বেছে নেবেন রাহুল গান্ধি ? কোন কেন্দ্রের ভোটারদের নিরাশ করবেন? লোকসভা ভোটের ফল প্রকাশের পর এই প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে গেছে কংগ্রেস। রাহুলকে এই প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেছিলেন, তিনি এখনও বিষয়টি নিয়ে ভেবে উঠতে পারেননি। কারণ তাঁর এবং তাঁর দলের সামনে এখন অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে। সেই নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তবে খুব শীঘ্রই সবার সঙ্গে কথা বলে এ ব্যাপারে পরবর্তী কী করণীয় তা ঠিক করবেন তিনি।
এবার রায়বরেলিতে রেকর্ড ভোটে জয়ী হয়েছেন রাহুল। এই আসনে ২০১৯ সাল পর্যন্ত সাংসদ ছিলেন সোনিয়া। তারও আগে রায়বরেলি থেকে কংগ্রেসের সাংসদ ছিলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধি। তবে কংগ্রেসের এই পুরনো গড়ে রাহুল এই বছর মা সোনিয়া গান্ধির থেকেও বেশি ভোট পেয়েছেন। বিজেপির প্রার্থীকে তিনি হারিয়েছেন প্রায় চার লক্ষ ভোটে।
অমেঠিতে যখন নিজের জয় নিয়ে অনিশ্চয়তা ছিল রাহুল গান্ধির, তখন কেরলের এই লোকসভা কেন্দ্র ওয়েনাড় রাহুলকে দুই হাত ভরে ভোট দিয়েছিল। ২০১৯ সালে এই ওয়েনাড় থেকেই জিতেই সংসদে গিয়েছিলেন রাহুল। ওয়েনাড়ে এবছরও রেকর্ড ভোটে জিতেছেন রাহুল। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে বিপদের দিনে পাশে দাঁড়ানো ওয়েনাড়কে কি ছেড়ে চলে যাবেন রাহুল?
রাহুলের ওয়েনাড় আসন ছাড়ার ব্যাপারে কেরলের কংগ্রেস নেতৃত্বের মতামত জানতে চাওয়া হলে তাঁরাও বিষয়টি এড়িয়েও যান। দলীয় সূত্রে খবর, কেরলের কংগ্রেস নেতাদের একাংশ মনে করে , যদি দলের চাপের কারণে এবং কংগ্রেসের ভবিষ্যতের কথা ভেবে রাহুলকে রায়বরেলী আসনটি রাখতেই হয়, তবে কংগ্রেসের উচিত রাহুলের পরিবর্ত প্রার্থী হিসাবে প্রিয়াঙ্কা গান্ধিকে ওয়েনাড়ে নিয়ে আসা।
নিয়ম অনুসারে ভারতের লোকসভা নির্বাচনে দুটি আসন থেকে একজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন। তবে দুটি আসন থেকে জিতলেও তাঁকে যে কোনও একটি আসন ছেড়ে দিতে হয়। জনপ্রতিনিধিত্ব আইন, ১৯৫১ অনুযায়ী ফলাফল ঘোষণার ১৪ দিনের মধ্যে যে কোনও একটি আসন ছেড়ে দিতে হয়। সেক্ষেত্রে জয়ী প্রার্থী যে আসনটি ছেড়ে দিলেন সেই আসনে উপনির্বাচন হবে। উপনির্বাচনে অন্য এক প্রার্থী দিতে হবে দলকে।
ভারতের সাধারণ নির্বাচনে, দু’টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা নতুন নয়। অতীতে ১৯৯৬ সালে লোকসভা নির্বাচনের সময় প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী গান্ধিনগর এবং লখনউ আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। উভয় আসনেই জয় পান। তাই গান্ধিনগরে উপনির্বাচন হয়েছিল। লখনউ আসনটি ধরে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও ২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে উত্তর প্রদেশের বারাণসী ও গুজরাটের ভাদোদরা উভয় আসনে লড়াই করেন। দুই আসনে জয়ী হয়ে বারণসী আসনটি ধরে রাখার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। অন্য আসনটিতে উপনির্বাচন হয়।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, জনপ্রতিনিধিত্ব আইন, ১৯৫৫-এর ৩৩(৭) ধারাকে চ্যালেঞ্জ করে ২০২৩ সালে মামলা দায়ের করেছিলেন অশ্বিনী কুমার উপাধ্যায়। এই ধারা বাতিলের আবেদন জানান তিনি। পিটিশনে একাধিক নির্বাচনী এলাকায় একই প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বিতার নিয়ম বন্ধ করতে নির্বাচন কমিশন এবং কেন্দ্রের হস্তক্ষেপের দাবি জানান তিনি।
এদিকে ১ লক্ষ ৬৭ হাজার ১৯৬ ভোটে স্মৃতি ইরানিকে হারিয়ে অমেঠি পুনুরুদ্ধার করেছেন কিশোরীলাল। গান্ধি পরিবারের ঘনিষ্ঠ কিশোরীলালের মন্তব্য, ‘রাহুল কী করবেন সেটা তাঁর ব্যাপার। কিন্তু আমি চাইব উনি রায়বরেলিতেই থাকুন। ‘
গোটা উত্তপ্রদেশেই দারুন ফল করেছে কংগ্রেস এবং সমাজবাদী পার্টির জোট। অন্যদিকে কেরোপ্লেও অপ্রত্যাশিত ফল করেছে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউডিএফ জোটের। কেরলের কংগ্রেস নেদের ইচ্ছে, রাহুল যদি ওয়েনাড় ছাড়েন , তাহলে সেখান থেকে প্রিয়াঙ্কা গান্ধি লড়ুন।
সময় হল, দুই জায়গার সঙ্গেই কংগ্রেসের বহু পুরোনো যোগ রয়েছে। ফলে, কোনও একটিকে বেছে নেওয়া বেশ কঠিন হয়ে উঠবে রাহুলের পক্ষে।