• facebook
  • twitter
Tuesday, 14 January, 2025

বাংলাদেশেও ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ চাইছেন পুরীর শংকরাচার্য

সেচমন্ত্রী মানুষ ভূঁইয়া জানান, মারাত্মকভাবে গঙ্গাসাগরের বিচ ভাঙছে। তাই ৫,৫৭০ মিটার লম্বা সমুদ্র তীর নতুন করে তৈরি করা হয়েছে। এর জন্য ৫৪০০ কিউবিক মিটার মাটি লেগেছে।

নিজস্ব চিত্র

হীরক কর

গঙ্গাসাগর, ১৩ জানুয়ারি— পাকিস্তানে ঢুকে যেভাবে জঙ্গি মারা হয়েছে, ঠিক সেইভাবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও করতে হবে‌। অর্থাৎ বাংলাদেশেও ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ চাইছেন পুরীর শংকরাচার্য নিশ্চলানন্দ সরস্বতী। তিনি বলেন, বাংলাদেশে যারা থাকে তাঁদের বিষয়টা বোঝা উচিত। অদৃরদর্শিতা না দেখানো উচিত। তার মতে, ২০৪ টা দেশ নিয়ে বিশ্ব। এরমধ্যে ৫৪ টা দেশে হিন্দুদের রাজত্ব। বাকি যেখানে মুসলমানরা রাজত্ব করছে, সেখানে নিজেরা নিজেদের মধ্যে মারামারি করছে।

তার অভিমত, এখনকার রাজনৈতিক নেতাদের শাসন করার ক্ষমতা নেই। ব্যবসায়ীরা এখন দেশ চালাচ্ছেন । মাত্র তেরো জন ব্যবসায়ী সারা বিশ্ব চালাচ্ছে। রাজনৈতিক নেতাদের আগে রাজদণ্ড, অর্থনীতি, দেশের সংস্কৃতি সম্পর্কে অভিহিত হতে হবে। রাজনৈতিক নেতাদের সনাতন শাস্ত্র অনুযায়ী দেশ চালাতে হবে।

আজ সাগরদ্বীপে এক সাংবাদিক সম্মেলনে পুরীর শংকরাচার্য কথা প্রসঙ্গে বলেন, মানব নির্মিত বিশ্বের প্রথম রাজধানী অযোধ্যা। প্রাচীন বিশ্বে সবচেয়ে আগে ছিল হিন্দুত্ব। মোহাম্মদ, এমনকি যিশুখ্রিস্টের পূর্বে হিন্দু সমাজ ছিল। ফলে, মুসলিম এবং খ্রিস্টান সকলে হিন্দুত্ব থেকেই এসেছেন। হিন্দু এবং হিন্দুত্বের রক্ষা হলেই পুরো বিশ্ব রক্ষা হবে।

ইতিমধ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গঙ্গাসাগর মেলাকে ‘জাতীয় মেলা’ হিসেবে ঘোষণা করার দাবী জানিয়েছেন। এই প্রসঙ্গে নিশ্চিলানন্দ সরস্বতীর মত, ‘সাগরমেলা’ অনেক আগে থেকেই ‘জাতীয় মেলা’। বলেন, জাতীয় মেলা না হলে আমি কেন এখানে প্রতি বছর আসতাম। ৩০ বছর ধরে আমি এখানে আসছি।

ক্রমশ ভেঙে চলেছে সাগর তট। সমুদ্র ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে। কপিলমুনির মন্দিরের দিকে। শংকরাচার্যের ধারণা, বিকাশ অর্থাৎ উন্নয়নের নামে বৃক্ষ বিরোধ করা হচ্ছে। কোন মানুষই জলবায়ুর কথা চিন্তা করেনা। ফলে গঙ্গা, সমুদ্র দূষিত হচ্ছে। তাই উন্নয়নকে পরিভাষিত করতে সনাতন শাস্ত্রের দরকার। না হলে বিকাশের নামে বিনাশ হবে।

এবারে এলাহাবাদে অনুষ্ঠিত হওয়া মহাকুম্ভ প্রসঙ্গে বলেন, ১২ বছরে একটা করে কুম্ভ মেলা হয়। যাকে বলে পূর্ণ কুম্ভ। ১২ বছর ধরে ১২ টি কুম্ভ মেলা হবার পর ১৪৪ বছর হয়েছে। তাই এবারের কুম্ভ মেলাকে ‘মহাকুম্ভ’ বলা হচ্ছে। কুম্ভ মেলায় সবচেয়ে বড় ভিআইপি, যারা একমাস কষ্ট করে এখানে থাকে। তাদের জন্য মুখ্যমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী সেখানে হাজির হন। এটা সকলকে বোঝা দরকার। এরই মধ্যে কুম্ভ মেলার উদ্বোধক বিশুদ্ধানন্দ সরস্বতীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। সেই কারণেই পুরীর শংকরাচার্য জানান, তিনি বিষয়টা নিয়ে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের সাথে কথা বলবেন। বলেন, আমাকে মোদি, যোগী, দুজনেই ভীষণ ভয় করে চলেন। মোদি ও যোগী একই রকম। এখানকার তৃতীয়াও তাই।

তিনি সকলকে সতর্ক করে দেন, তপস্থল যেন ভোগস্থলে পরিণত না হয়। তীর্থস্থলই তপস্থল হয়। তাকে পর্যটন কেন্দ্র বানিয়ে ভোগস্থল না করেই উচিত হবে। দীঘার নতুন জগন্নাথ মন্দির প্রসঙ্গে তাঁর মত, অরাজগতা করা ঠিক নয়। অনুকৃতি যেন অরাজকতার রূপ না ধারণ করে। পুরী তো পুরীই । নকল হচ্ছে নকলই। তাই, আক্কেল থাকা দরকার। অভিনয় করে অনেকেই রাম-সীতা হয়। কিন্তু তাই বলে কি তারা বাস্তবের সীতা-রাম হবে।

আরজিকর হাসপাতালে সাম্প্রতিক ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এর সঠিক বিচার হওয়া দরকার। আসল ঘটনাকে দাবিয়ে রাখলেও একদিন না একদিন সত্যটা বেরোবেই। এই ধরনের ঘটনা যেন কোনও কালেই কোনও যুগেই না হয়।

আজ পর্যন্ত সাগর মেলায় প্রায় চার লক্ষ পূর্ণ্যার্থ্রী ছবি সমৃদ্ধ শংসাপত্র সংগ্রহ করেছেন।‌ তীর্থযাত্রীদের বাস, লঞ্চ, ভেসেল, ইত্যাদির সঠিক অবস্থার সংগঠিত নির্ভুল তথ্যের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাগর মেলা ২০২৫ এ ইসরোর তৈরি এন এ বি আই সি নামে একটি বিশেষ প্রযুক্তির সাহায্য নেওয়া হচ্ছে। এটির মাধ্যমে দিকভ্রান্ত যেকোনো যাত্রীবাহী জলযানকে মেগা কন্ট্রোলরুম থেকে নির্দেশ দিয়ে সাহায্য করা যাচ্ছে। প্রত্যেকটি যানবাহনকে জিপিএস ট্রাকিং এর সাহায্যে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। মেগা কন্ট্রোল রুম থেকে ফিল্ডিং ট্রান্সপোর্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম অর্থাৎ কিছু একটি পরিবহন পরিচলন ব্যবস্থার মাধ্যমে রাত দিন পর্যবেক্ষণের আয়তায় নিয়ে আসা হয়েছে।

রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী অরুপ বিশ্বাস জানান, ২০১১ সালে গোটা মেলায় বিদ্যুৎ লাগতো মাত্র দুই মেগাওয়াট। আজ লাগে ৪৭ মেগাওয়াট। আক্ষরিক অর্থে সাগর মেলায় ভিড়ে একদমই নেই। আধিকারিকরা বলছেন, এলাহাবাদের কুম্ভ মেলার জন্য এবারে ভিড় অনেক কম। তা মানতে নারাজ মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। তার মতে, পয়লা জানুয়ারি থেকে সোমবার পর্যন্ত ৫৫ লক্ষ লোক গঙ্গাসাগরে এসেছেন। এবং পুণ্য স্নান করে চলেও গেছেন। আগামীকাল ও পরশু জনজোয়ার হবে। যদিও মুখ্যমন্ত্রী এই মেলার উদ্বোধন করেছেন ৯ জানুয়ারি। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, ১ জানুয়ারি থেকে হিসাব করলে তো ৩৬৫ দিনেরই হিসেব করতে হয়।

দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু বলেন, রুদ্রনগরের ফায়ার স্টেশন ছাড়াও মেলা উপলক্ষে ১৪ টা সাময়িক দমকল কেন্দ্র করা হয়েছে। বসানো হয়েছে ২৭২ টা হাইড্রেন্ট পয়েন্ট।

সেচমন্ত্রী মানুষ ভূঁইয়া জানান, মারাত্মকভাবে গঙ্গাসাগরের বিচ ভাঙছে। তাই ৫,৫৭০ মিটার লম্বা সমুদ্র তীর নতুন করে তৈরি করা হয়েছে। এর জন্য ৫৪০০ কিউবিক মিটার মাটি লেগেছে। জলযান সুষ্ঠুভাবে যাতায়াতের জন্য পাঁচ হাজার মিটার লম্বা ড্রেজিং হয়েছে। পাঁচটি ড্রিজার দশ হাজার কিউবে ট মিটার মাটি তুলেছে। তার মতে, মুখ্যমন্ত্রীর কথা অনুযায়ী, কপিল মুনির আশ্রমকে রক্ষা করা সম্ভব।