হাসি ফিরিয়ে দিয়ে ‘মান’ রাখল পাঞ্জাব, কে এই ভগবন্ত?

ভগবন্ত মান (Photo-SNS)

পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা ভোটের ফলাফল প্রকাশিত হল আজ। এই তালিকায় আছে পাঞ্জাবও। ভোট গণনা শুরু হওয়ার পর থেকেই খবর পাওয়া যাচ্ছিল কংগ্রেসকে পিছনে ফেলে এগিয়ে যাচ্ছে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টি।

খুব কম সমীক্ষাতেই উঠে এসেছিল এভাবে পাঞ্জাবে নিরঙ্কুশ একাধিপত্য দেখাতে পারবে আপ। বেলা গড়াতেই সেই সম্ভাবনা বাস্তবে পরিণত হল। পাঞ্জাব জুড়ে এবার ঝাড়ুর দাপট। পাঞ্জাবে আম আদমি পার্টির মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী ছিলেন ভগবন্ত মান।

তিনি ধুরি বিধানসভা কেন্দ্র থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। ধুরি বিধানসভা কেন্দ্র থেকে বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সি নিজের নামে করলেন ভগবন্ত মান। পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথগ্রহণের পথে এবার মান। কে এই ভগবন্ত মান?


ভগবন্ত মান হলেন পাঞ্জাবে আপ এর সাংসদ। রাজনীতিতে পরিচিত মুখ না হলেও তিনি পাঞ্জাবীদের কাছের লোক। নেতার থেকেও তাঁর পরিচিতি বেশি কৌতুক অভিনেতা হিসাবে। রাজনীতিতে আসার আগে পাঞ্জাবের মানুষ তাঁকে অন্যরূপে চিনতেন।

অতি অল্প বয়স থেকে তিনি মানুষের মুখে হাসি ছড়িয়ে দিয়েছেন। ডিজিটাল মাধ্যমের রমরমা তখনও বাড়েনি। কেউ হাসির উপাদান বাছতে ইউটিউব বা ফেস বুক খুলে স্কুল করতেন না সে সময় স্ট্যান্ড আপ কমেডিয়ান হিসাবে উঠে এসেছিলেন যাঁরা, তাঁদের মধ্যে ছিলেন ভগবন্ত মানও।

পাঞ্জাবি ভাষায় একের পর এক কমেডি শো করে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন তিনি। তিনি যখন খ্যাতির মধ্যগগনে ছিলেন, তখনও ক্যাসেটের রমরমা বাজার ছিল। পাঞ্জাবের মাঠ ট্রাক্টরেও শোনা যেত কমেডি বাজছে।

পাঞ্জাবিদের নিজের ভাষায় কৌতুকের আকারে রাজনীতি সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় পৌঁছে দিতেন তিনি। রাজনৈতিক নেতাদের নিয়ে মজার মজার কথা বলতেন।

আজও পাঞ্জাবের বহু মানুষের মুখে হাসি ফোটে তাঁর নাম শুনলেই। রাজনীতি নিয়ে মজা করা মনুষটাই হতে চলেছন পাঞ্জাবের পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী।

আপের ঘরে জয়ের মুখ মান পাঞ্জাবে আপের যাত্রাপথে প্রথম থেকেই রয়েছেন মান। তাই দলের সবচেয়ে পুরনো সদস্যের ওপরেই ভরসা রেখেছেন আপ প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়াল।

পাঞ্জাব আপে যোগ দেওয়ার আগেই শুরু তাঁর রাজনৈতিক জীবন। ২০১১ সালে ভগবন্ত মান পিপলস পার্টি অব পাঞ্জাবে যোগ দিয়েছিলেন। যোগ দেওয়ার পর বিধানসভা নির্বাচনে হেরে যান তিনি।

এরপর আম আদমি পার্টি যখন পাঞ্জাবের রাজনীতিতে প্রবেশ করতে শুরু করে, তখন কেজরিওয়ালের হাত ধরেন মান। পাঞ্জাবের সাংরুর লোকসভা কেন্দ্ৰ থেকে আম আদমি পার্টির টিকিটে ২০১৪ সালে লোকসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন।

২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস এবং আকালি দলের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকা সত্ত্বেও চার লক্ষেরও বেশি ভোট পেয়ে জয়লাভ করেছিলেন মান। পাঞ্জাবে আপের ঘরে জয়ের মুখ ছিলেন এই মানই।

এবার আবারও ভাগ্যবন্তের হাত ধরে পুনরায় বড় জয় পেল আম আদমি পার্টি। মেডেল অভিনয় ছিল তাঁর পেশা কলেজে পড়ার সময় কমেডি ফেস্টিভ্যালে যোগ দিয়ে দুটি সোনার জিতেছিলেন তিনি। কলেজের পাঠ মন সম্পূর্ণ করতে পারেননি।

অভিনয় কেই বেছে নিয়েছিলেন পেশা হিসাবে। টেলিভিশনে জুগনু কেন্দা হ্যায় নামে একটি কমেডি শো করতেন তিনি। পরে পাঞ্জাবের একটি চ্যানেলে জুগনু মস্ত মস্ত নামেও একটি শো করেছেন অংশ নিয়েছিলেন গ্রেট ইন্ডিয়ান লাফটার চ্যালেঞ্জ শোতে।

শুধু দেশেই নয়, কানাডা ও ব্রিটেনের মটিতেও কমেডি শো করে বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন। একটি জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত ছবিতে অভিনয়ও করেন তিনি। মদ্যপান নিয়ে বিতর্কে মান!

২২-এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে কংগ্রেস ও অন্যান্য বিরোধী দল মানের বিরুদ্ধে মদ্যপানের অভিযোগ তুলেছিলেন। মানের মদ্যপানে আসক্তি নিয়ে প্রচারে ঝড় তোলেন বিরোধীরা।

তাঁর বিরুদ্ধে মদ্যপ অবস্থায় ও সংসদে প্রবেশের অভিযোগ উঠেছিল। সেই অভিযোগের ড্যামেজ কন্ট্রোল করতে হয়েছিল তাঁকে। নিজের মাকে পাশে দাঁড় করিয়ে তিনি বলেছিলেন তাঁরস্বভাবের জন্য দলকে যাতে বিপদে পড়তে না হয় সে জন্য মদ্যপান পুরোপুরি ছেড়ে দিচ্ছেন তিনি।

অরবিন্দ কেজরিওয়ালের সঙ্গে জনসভায় দাঁড়িয়ে তিনি স্বীকার করেছিলেন, মাঝেমধ্যে মদ্যপান করার বদভ্যাস ছিল তাঁর। শুধু তাই নয়, সংসদে দাঁড়িয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় লাইভ স্ট্রিমিং করেছিলেন ভগবন্ত মান।

২০১৬ সালে সেই ঘটনার জেরে সংসদে তাঁর বিরুদ্ধে নিরাপত্তা ক্ষুণ্ন করার অভিযোগ উঠেছিল। তবে এবার সব বিতর্ক সরিয়ে পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রীর গদিতে বসতে চলেছেন কৌতুক অভিনেতা মান।