মুখ্যমন্ত্রী যােগী আদিত্যনাথ ও পুলিশ প্রশাসনকে বিক্ষোভকারীদের ওপর দমনপীড়ন চালানাের ঘটনার নিন্দায় মুখর কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধি একহাত নিয়ে বলেন, ‘নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে সােচ্চার বিভােক্ষকারীদের নিশানা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী যােগী, নিরীহ মানুষগুলাের প্রতিশােধ নিতে চান। শুধু তাই নয়, কোনও অনুসন্ধান ছাড়া মানুষকে গ্রেফতার করা হচ্ছে। বিক্ষোভকারীদের ওপর পুলিশ দমনপীড়ন চালাচ্ছে। ভুল কাজে মুখ্যমন্ত্রী ও পুলিশ প্রশাসন দোসর’।
তিনি বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী যােগী প্রতিশােধ নিতে চান, তাই পুলিশ বেপরােয়াভাবে ধরপাকড় করছে। মুখ্যমন্ত্রী যােগী বলেছিলেন নাগরিকত্ব আইনের বিরােধিতায় যারা সােচ্চার হয়েছে তাদের প্রতিশােধ নেওয়া হবে’।
লখনউয়ে পুলিশি নিগ্রহের শিকার হওয়ার দু’দিন পর কংগ্রেস নেত্রী সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে জানান, ‘আমি স্ব-নিরাপত্তার বিষয়ে উদ্বিগ্ন নই। আমার নিরাপত্তা কোনও বড় ব্যাপার নয়। আমরা দেশের সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে কথা বলছি। ৫৫০০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে কয়েকজনকে জেলে পাঠানাে হয়েছে। পুলিশ ও কর্তৃপক্ষ ভুল কাজে দু’জনেই দোসর। ভারতে কোনও শত্রুতা, হিংসা ও প্রতিশােধ নেওয়ার জায়গা ছিল না’।
প্রিয়াঙ্কা বলেন, ‘যােগী জি গেরুয়া বসন পড়েন- কিন্তু এটা তার রং নয়, গেরুয়া রং দেশের ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিকতার প্রতীক। হিন্দু ধর্মের প্রতীক। ওনার উচিত ধর্মকে অনুসরণ করা। হিন্দু ধর্মের মধ্যে শত্রুতা, প্রতিশোধ ও হিংসার কোনও জায়গা নেই’।
নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে উত্তরপ্রদেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে বাহিনী মােতায়েন করা হয়েছে। একুশটি জেলায় ইন্টারনেট পরিষেবা সাসপেন্ড করে দেওয়া হয়েছে। প্রশাসনের তরফে নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে নতুন করে যাতে সংঘর্ষের শুরু না হয়, সে কারণে ইন্টারনেট পরিষেবা সাসপেন্ড করে দেওয়া হয়েছে। বিজনাের, বুলন্দশর, মুজাফফরনগর, মিরাট, আগ্রা, ফিরােজাবাদ, সম্বল, আলিগড়, গাজিয়াবাদ, রামপুর, সীতাপুর, কানপুরে ইন্টারনেট সাসপেন্ড করা হয়েছে। পাশাপাশি লখনউতেও ইন্টারনেট সাসপেন্ড করে রাখা হয়েছে।
গত সপ্তাহের পুলিশ-বিক্ষোভকারী খন্ড যুদ্ধ হয়েছিল। পুলিশের তরফে জানানাে হয়, সােশ্যাল মিডিয়ার ওপরও নজরদারি চালানাে হচ্ছে। টানা কয়েকদিন ধরে চলা সংঘর্ষে প্রচুর মানুষ জখম হয়েছে, পুলিশের গুলিতে ২১ জনের দেহ ঝাঝড়া হয়ে গেছে। যদিও পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালানাের কথা অস্বীকার করে, ও প্ল্যাস্টিকের প্যালেট ও রবারের বুলেট ব্যবহার করা হয়েছে বলে জানায়। পুলিশ বিজনােরে গুলি চালনার কথা স্বীকার করে।
তিনি বলেন, আমি বিজনােরে গেছিলাম- ওখানে সংঘর্ষের ঘটনার শিকার দুটো শিশু, একজন কফি বিক্রেতা ও আইপিএস পদ প্রার্থী। কফি বিক্রেতা দুধ কিনতে যাবে বলে ইচ্ছা প্রকাশ করতে ছেলেটির বাবা তাকে নিষেধ করেছিল। সে দুধ কিনতে গেছিল। স্থানীয়রা জানিয়েছে, পুলিশ ছেলেটিকে তুলে নিয়ে যায়। আধ ঘন্টা পর তারা জানতে পারে ছেলেটির দেহ পাওয়া গেছে। পুলিশ ছেলেটির পরিবারকে হুমকি দিয়েছে।
আইপিএস পদপ্রার্থী দ্বিতীয় জন নমাজ পড়তে গেছিল। বিজনাের পুলিশ জানিয়েছে, আত্মরক্ষার্থে সুলমনকে হত্যা করা হয়েছে। উত্তরপ্রদেশ পুলিশের বেআইনি কার্যকলাপের বিরুদ্ধে কংগ্রেস বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি করেছে।
প্রিয়াঙ্কা বলেন, ‘আম্বেদকরের অনুগামী একজন আইপিএসকে তার বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার বাড়িতে গেলে বােঝা যায় তিনি কি ধরণের মানুষ। তিনি শান্তিপূর্ণ উপায়ে প্রতিবাদ দেখানাের আর্জি জানিয়েছিলেন। তার বৃদ্ধা স্ত্রীও অসুস্থ।
উপ মুখ্যমন্ত্রী দীনেশ শর্মা বলেন, কংগ্রেস উত্তরপ্রদেশ পুলিশের বিরুদ্ধে নিন্দনীয় অভিযােগ করেছেন। তিনি বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী ঐতিহ্যবাহী হিন্দু পরিবারে বেড়ে উঠেছেন। কংগ্রেস বাগওয়া নিয়ে মন্তব্য করেছে যা থেকে স্পষ্ট তারা জানেন না ওটা কি। এটা হিংসার প্রতীক নয়। কংগ্রেস ভােট কমে যাওয়ার চিন্তা করছে, আর যারা সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করেছেন, তাদের আড়াল করার চেষ্টা করা হচ্ছে’।