প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ তুললেন বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী। রবিবার রাহুল এক্স হ্যান্ডেলে দাবি করেন, সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলিতে বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত আরএসএস অনুগামীদের বসানো হচ্ছে। পরিকল্পনা করেই এমনটা করা হচ্ছে। রাহুলের মন্তব্য, আইএএস অফিসারদের বাদ দিয়ে বেসরকারি সংস্থার পদস্থ আধিকারিকদের প্রশাসনের অন্দরে নিয়ে আসছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। এর ফলে সরকারের অন্দরে আমলাদের প্রভাব-প্রতিপত্তি কমছে। রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘের প্রভাব বাড়লে। ফলে ইউপিএসসি-র প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা অর্থহীন হয়ে পড়ছে।
প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতির দাবি, ‘আইএএস-এর বেসরকারিকরণ’ হল সংরক্ষণ শেষ করার ‘মোদির গ্যারান্টি’। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীই একমাত্র নন যিনি এই বিষয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। সমাজবাদী পার্টি সুপ্রিমো অখিলেশ যাদব এবং আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদবও গোটা বিষয়টিকে ‘মোদি সরকারের ষড়যন্ত্র’ বলে অভিহিত করেছেন।
রাহুল গান্ধী সোশাল মিডিয়ায় লিখেছেন, চ পরিবর্তে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের মাধ্যমে সরকারি কর্মচারী নিয়োগ করে নরেন্দ্র মোদি সংবিধানকে আক্রমণ করছেন। কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রকের গুরুত্বপূর্ণ পদে ল্যাটারাল এন্ট্রির মাধ্যমে নিয়োগ করে প্রকাশ্যেই এসসি, এসটি এবং ওবিসি ক্যাটাগরির সংরক্ষণ কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। আমি সবসময় বলে আসছি, কেন্দ্রীয় প্রশাসনের উচ্চপদে পিছিয়ে পড়া শ্রেণির মানুষদের প্রতিনিধিত্ব নেই। সেটা তো করা হচ্ছে নাম, উল্টে ল্যাটারাল এন্ট্রির মাধ্যমে তাদের শীর্ষ পদ থেকে অপসারণ করা হচ্ছে।
লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী বলেন, এটি ইউনিয়ন পাবলিক সার্ভিস কমিশনের জন্য প্রস্তুত হওয়া প্রতিভাবান যুবকদের অধিকারের উপর ডাকাতি। এটালে সুবিধা বঞ্চিতদের জন্য সংরক্ষণ সহ সামাজিক ন্যায়বিচারের ধারণার উপর আক্রমণও বলা যেতে পারে। কর্পোরেটের প্রতিনিধিরা গুরুত্বপূর্ণ সরকারি পদে বসে শোষণ ছাড়া আর কি করবেন? এর একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হল সেবি, যেখানে প্রথমবারের মতো প্রাইভেট সেক্টর থেকে একজন ব্যক্তিকে চেয়ারপার্সন করা হয়েছিল। বিরোধীদের জোট ইন্ডিয়া এই জাতীয় পদক্ষেপের তীব্র বিরোধিতা করবে। এমন পদক্ষেপ প্রশাসনিক কাঠামো এবং সামাজিক ন্যায়বিচার উভয়কেই আঘাত করে। আইএএস-এর বেসরকারিকরণ মোদির সংরক্ষণ শেষ করার গ্যারান্টি।
অবশ্য শুধু রাহুল গান্ধী একা নন, বিরোধীদের জোট ‘ইন্ডিয়া’র অন্যতম শরিক সমাজবাদী পার্টি এবং আরজেডিও এই প্রসঙ্গে মোদি সরকারকে তুলোধনা করেছেন। অখিলেশ যাদব অভিযোগ করেছেন, এই পদ্ধতি আজকের আধিকারিকদের, এমনকী যুবকদের জন্য, বর্তমান এবং ভবিষ্যতে উচ্চ পদে পৌঁছানোর পথ বন্ধ করে দেবে। সাধারণ মানুষ শুধু বাবু ও পিয়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে। আসলে পুরো কৌশলটি হল পিছিয়ে পড়া শ্রেণির মানুষদের থেকে সংরক্ষণ এবং অধিকার কেড়ে নেওয়া।
আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব এক্স-এ একটি পোস্টে লিখেছেন, ‘কেন্দ্রের মোদি সরকার কীভাবে একটি জঘন্য তামাশা করছে এবং বাবা সাহেবের লেখা সংবিধান এবং সংরক্ষণ নিয়ে খেলছে তার একটি ছোট উদাহরণ এই বিজ্ঞাপনটি। ইউনিয়ন পাবলিক সার্ভিস কমিশন প্রকাশ করেছে ৪৫ জন জয়েন্ট সেক্রেটারি, ডেপুটি সেক্রেটারি এবং ডিরেক্টর লেভেলের চাকরি সরাসরি ল্যাটারাল এন্ট্রির মাধ্যমে কিন্তু তাদের মধ্যে সংরক্ষণের কোনও ব্যবস্থা নেই। ইউনিয়ন পাবলিক সার্ভিস কমিশনে যদি সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার মাধ্যমে ৪৫ জন আইএএস নিয়োগ করত, তাহলে সেই পদগুলি এসসি/এসটি এবং ওবিসি-র মধ্যে ভাগ করে দেওয়া যেত। ২৩ জন প্রার্থী দলিত, অনগ্রসর এবং উপজাতি বিভাগ থেকে নির্বাচিত করা হত। মোদি সরকার খুব সুশৃঙ্খল, পদ্ধতিগত, পরিকল্পিত এবং দুষ্ট উপায়ে সংরক্ষণের অবসান ঘটাচ্ছে।’