ভারতীয় অর্থনীতির গতি যে শ্লথ হয়েছে, তার প্রমাণ পাওয়া যায় শিল্প এবং উৎপাদনের বৃদ্ধির ক্রমহ্রাসমান হারের পরিসংখ্যানে। যানবাহন বিক্রি কমেছে, কমেছে জ্বালানির চাহিদা। কৃষিসমস্যা এবং বেকারি দূর করতে মস্ত বড় চ্যালেঞ্জ আজ সরকারের সামনে। এর মােকাবিলায় নরেন্দ্র মােদির দ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রিত্বের কালে সরকার কী নীতি প্রয়ােগ করবে, তা দেখার জন্য সাধারণ মানুষ এবং অর্থনীতিবিদরা তাকিয়ে আছেন আসন্ন ৫ জুলাইয়ের দিকে, যেদিন দ্বিতীয় মােদি সরকারের প্রথম পূর্ণাঙ্গ বাজেট পেশ করতে চলেছেন কেন্দ্রের নতুন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ।
এই প্রেক্ষাপটে শনিবার নীতি আয়ােগের ডাকা একটি বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদি মিলিত হয়েছিলেন দেশের ৪০ জন প্রথম সারির অর্থনীতিবিদের সঙ্গে। যে বিষয় নিয়ে এদিন বৈঠক ডাকা হয়েছিল, তার পােশাকি নাম দেওয়া হয়েছিল আর্থিক নীতি— ভবিষ্যতের পথ (ইকোনমিক পলিসি- দ্য রােড অ্যাহেড)।
ম্যাকরাে অর্থনীতির পাশাপাশি বেছে নেওয়া হয়েছিল পাঁচটি বিশেষ ক্ষেত্র, যেমন কর্মসংস্থানের সুযােগ, কৃষি, জল, রফতানি এবং স্বাস্থ্য। এইসব বিষয় নিয়ে এদিন অর্থনীতি বিশেষজ্ঞরা প্রধানমন্ত্রীকে তাদের মত বিশদ ব্যাখ্যা করে জানিয়েছেন। বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে অংশগ্রহণকারী সমস্ত অর্থনীতিবিদকে তাঁদের সুচিন্তিত মতামত জানানাের জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেছেন বলে জানা গেছে।
এই বৈঠকের আগে প্রধানমন্ত্রী নীতি আয়ােগের সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞ আধিকারিকদের সঙ্গে আলােচনা সেরে নেন। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর আলােচনার আগে নিজের নিজের ক্ষেত্রের সুযােগ এবং প্রাথমিকতা প্রধানমন্ত্রীকে বুঝিয়ে বলেন। এখন প্রশ্ন উঠছে হঠাৎ কেন বাজেটের আগে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতি বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলােচনার প্রয়ােজন পড়ল, যখন নীতি আয়ােগের অর্থনীতিবিদ, আধিকারিকরা প্রধানমন্ত্রীকে যাবতীয় পরামর্শ দিয়ে থাকেন?
যে প্রেক্ষাপটে এই আলােচনার আয়ােজন করেছিল নীতি আয়ােগ, সেখানে সরকারকে বিড়ম্বনায় ফেলেছে ২০১৮-১৯ সালের চতুর্থ ত্রৈমাসিকের আর্থিক উন্নয়নের পরিসংখ্যান। এই সময়ে ভারতের জিডিপি বা আর্থিক বিকাশের হার কমে দাঁড়িয়েছে ৫.৮ শতাংশে, যার ফলে আর্থিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে ভারত পিছিয়ে পড়েছে চিনের কাছে। পাশাপাশি, কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান অফিস (সেন্ট্রাল স্ট্যাটিসটিক্স অফিস) ২০১৮-১৯ সালের জিডিপি বা আর্থিক বিকাশের হার দেখিয়েছে ৬.৮ শতাংশ, যা পাঁচ বছরে সর্বনিম্ন।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদি দেশের অর্থনীতির এই শ্লথ গতি দেখে উদ্বিগ্ন। তাই তিনি সমস্ত দফতরের সচিবদের সঙ্গে বৈঠক করে জানিয়ে দিয়েছেন ভারতের অর্থনীতিকে বছরে পাঁচ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতির দেশে উন্নীত করতে হবে। তার স্বপ্ন পূরণের জন্য এখন থেকেই কাজ শুরু করতে হবে। আগামী বাজেট পেশের আগে তাই অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ সমস্ত রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় শাসিত অঞ্চলের প্রধানদের সঙ্গে কথা বলে তাদের দাবি দাওয়াও শুনে নিয়েছেন।
নীতি আয়ােগের পরিচালন কমিটির পঞ্চম বৈঠক হয়েছে গত শনিবার, যেখানে দেশে কিছু অঞ্চলে খরাজনিত পরিস্থিতি নিয়ে আলােচনা হয়েছে। পাশাপাশি, আলােচনা হয়েছে কৃষিসমস্যা, বৃষ্টির জল ধরে রাখা এবং দেশে কাঙিক্ষত জেলা প্রােগ্রাম সহ অন্যান্য বিষয় নিয়েও। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ৪০ জন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদের আজকের আলােচনায় মূলত অর্থনীতির শ্লথগতিকে কীভাবে আবার গতিময় করে তােলা যায়, তাই নিয়ে বিশদ আলােচনা হয়েছে, তার প্রতিফলন দেখা যেতে পারে ৫ জুলাইয়ের বাজেটে।
এদিন বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর পাশাপাশি বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী পীযূষ গােয়েল এবং পরিসংখ্যান ও প্রােগ্রামিং রাজ্যমন্ত্রী (স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত) রাও ইন্দ্রজিৎ সিং।