“প্রধানমন্ত্রী, আপনার হাতে রক্ত রয়েছে!”, আগ্রায় অগ্নিবীরের আত্মহত্যার প্রসঙ্গে মোদীকে তোপ তৃণমূলের 

নিজস্ব প্রতিনিধি: বিতর্কের শেষ নেই অগ্নিপথ প্রকল্প নিয়ে। এবার এই বিতর্কের মাঝেই আত্মহত্যা করলেন বছর ২২ -এর এক অগ্নিবীর। অগ্নিপথ প্রকল্পের মেয়াদ এবং অগ্নিবীরদের ভবিষ্যত নিয়ে একাধিকবার প্রশ্ন তুলেছে বিরোধীরা। স্বল্প বয়সী অগ্নিবীরের মৃত্যুর ঘটনায় এবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে সরাসরি তোপ দাগল বাংলার শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস।
উল্লেখ্য, উত্তরপ্রদেশের আগ্রায় নিজেকে গুলি করে আত্মহত্যা করেছেন অগ্নিবীর শ্রীকান্ত কুমার চৌধুরী। তাঁকে আগ্রার এয়ারফোর্স স্টেশনের টেকনিক্যাল এলাকায় পোস্ট করা হয়েছিল। শুক্রবার রাত দেড়টার দিকে শ্রীকান্ত কুমার চৌধুরী ইনসাস রাইফেল দিয়ে গুলি করে আত্মহত্যা করেন। তবে কি কারণে আত্মহত্যার পথ বেছে নিলেন তিনি? তা এখনও অজানা। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে শাহগঞ্জ থানার পুলিশ। এই ঘটনা নিয়েই বিজেপির বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছে তৃণমূল। শনিবার সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের তরফ থেকে এ প্রসঙ্গে তাঁদের এক্স হ্যান্ডেলে লেখা হয়, “বিজেপি-র অগ্নিপথ প্রকল্পের প্রতি সম্পূর্ণ উপেক্ষাই ২২ বছর বয়সী অগ্নিবীরের আত্মহত্যার কারণ। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, আপনার হাতে রক্ত রয়েছে!”
তৃণমূল আরও লিখেছে, “বিজেপির অপরিকল্পিত অগ্নিপথ প্রকল্পের জন্যই এক তরুণ প্রাণ হারিয়েছেন। তাঁদের অন্তর্ভুক্তির এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যে কমপক্ষে ২০ জন অগ্নিবীর বিজেপির অপরিকল্পিত অগ্নিপথ প্রকল্পের জন্য নিজেদের প্রাণ শেষ করার পথ বেছে নেন।” আইএএফ সহ একাধিক সূত্র এমনই তথ্য দিচ্ছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ২০২২ সালে ‘অগ্নিপথ’ প্রকল্প চালু করেছিল কেন্দ্রের দ্বিতীয় মোদী সরকার। ওই প্রকল্পে সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয় সাড়ে ১৭ বছর থেকে ২১ বছর বয়সি তরুণদের জন্য। এর মধ্যে ৬ মাস প্রশিক্ষণ এবং বাকি সাড়ে ৩ বছর সেনা বাহিনীতে পরিষেবা দিতে পারেন অগ্নিবীররা। যাঁরা চার বছরের জন্য সেনাবাহিনীতে কাজ করবেন, তাঁদেরই নাম দেওয়া হয় ‘অগ্নিবীর’। মেয়াদ শেষে এঁদের মধ্যে ২৫ শতাংশকে আরও ১৫ বছরের জন্য বাহিনীতে কাজ করার সুযোগ দেওয়া হতে পারে। তা না হলে দেওয়া হতে পারে এককালীন অর্থ। ওই জওয়ানদের জন্য কোনও রকম পেনশনের সুবিধা দেয় না কেন্দ্র। এ ছাড়া সেনাবাহিনীর কর্মীদের যা যা সরকারি সুযোগসুবিধা বরাদ্দ থাকে, তা-ও থাকে না ‘অগ্নিবীর’দের জন্য। সেই কারণেই কার্যের মেয়াদ শেষে অধিকাংশ অগ্নিবীর হতাশ হয়ে পড়েন, মানসিক রোগে আক্রান্তও হন বাড়তি চিন্তার ফলে। সম্প্রতি জাতীয় কংগ্রেসের তরফ থেকেও প্রধানমন্ত্রীর এই প্রকল্পের নিন্দা করে বলা হয়েছিল, “অগ্নিবীরেরা হয়ে গিয়েছেন ইউজ অ্যান্ড থ্রো।” কংগ্রেসের পর এবার তৃণমূলও অগ্নিপথ প্রকল্প নিয়ে বিজেপি বিরোধিতায় নামলো।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, অগ্নিবীর শ্রীকান্ত কুমার চৌধুরীর আত্মহত্যার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছেছিল বিমান বাহিনী অফিসার ও জওয়ানরা। পরে শাহগঞ্জ থানার পুলিশও ঘটনাস্থলে যায়। মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়ে মামলার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। উল্লেখ্য, পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে বা অগ্নিবীর শ্রীকান্তের বাড়ি থেকে কোনও সুইসাইড নোট পায়নি। শ্রীকান্ত মূলত উত্তরপ্রদেশের বালিয়া জেলার বাসিন্দা। তাঁর বাড়ি পাচারুকিয়া গ্রামে। অগ্নিবীর শ্রীকান্তের আত্মহত্যার পরে তাঁর পরিবার আগ্রায় আসে এবং ময়নাতদন্তের পরে বালিয়ায় দেহ নিয়ে যায়। সরকারি ইনসাস রাইফেল দিয়ে চোখের কাছে মাথায় গুলি করে আত্মহত্যা করেছিলেন শ্রীকান্ত চৌধুরী। গুলি মাথার উপরিভাগ দিয়ে চলে গেলে তিনি মারা যান। পুলিশ ওই রাইফেলটি উদ্ধার করে পরীক্ষাগারে পাঠিয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে, পুলিশ জানতে পেরেছিল যে শ্রীকান্ত কুমার চৌধুরী দেড় বছর আগে অগ্নিবীর স্কিমের মাধ্যমে বায়ুসেনায় যোগ দিয়েছিলেন এবং সবকিছু স্বাভাবিক ছিল। তাঁকে এখানে পোস্ট করা হয়েছিল ৬ মাস আগে এবং তিনি ৩ জুন ছুটিতে বাড়িতে আসেন। ১০ দিনের ছুটি কাটিয়ে তিনি ডিউটিতে ফিরেছিলেন। ১৩ জুন শ্রীকান্ত এয়ারফোর্স স্টেশনে ডিউটিতে যোগ দেন। তারপরই ঘটে এই মর্মান্তিক ঘটনা। অগ্নিপথ প্রকল্প নিয়ে বহু সমস্যায় জর্জরিত যুবসমাজ। সূত্রের খবর, কেন্দ্রের কাছে এবার অগ্নিপথ প্রকল্পের বয়সসীমা ২১ বছর থেকে বাড়িয়ে ২৩ বছর করার আবেদন জানাতে পারে সেনাবাহিনীই। একইসঙ্গে অগ্নিবীরদের মধ্যে অন্তত ৫০ শতাংশকে সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার সুযোগের জন্য প্রস্তাব দেওয়া হতে পারে।