রাশিয়ার উদ্দেশে রওনা হওয়ার আগে মোদি বলেন, এই দুই দেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হবে। দুই দেশে বসবাসকারী ভারতীয়দের সঙ্গেও কথা বলবেন তিনি। গত ১০ বছরে ভারত-রুশ সম্পর্ক, কৌশলগত অবস্থান অনেক এগিয়েছে। বিদ্যুৎ, প্রতিরক্ষা, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, স্বাস্থ্য, শিক্ষা-সংস্কৃতি, পর্যটন ক্ষেত্রে এই সম্পর্ক আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। ভ্লাদিমির পুতিনকে বন্ধু বলে উল্লেখ করে মোদি বলেন, দ্বিপাক্ষিক বিভিন্ন বিষয় ছাড়াও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নিয়ে তাঁদের আলোচনা হবে। বিশ্বশান্তি ও স্থায়িত্ব নিয়ে দুই দেশ সহযোগিতা চালিয়ে যাবে। মস্কোয় পৌঁছানোর দিনই পুতিন মোদীর সম্মানার্থে নৈশভোজ দিচ্ছেন।
সোমবারই মস্কোয় পা রাখছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি । এদিন ২২ তম ভারত-রাশিয়া বার্ষিক সম্মেলনে অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী। সম্মেলনের বাইরে একাধিক বিষয়ে পুতিনের সঙ্গে কথা হওয়ার সম্ভাবনা । পরের দিন অর্থাৎ ৯ জুলাই রুশ প্রবাসী ভারতীয়দের সঙ্গে আলাপচারিতায় ব্যস্ত থাকবেন মোদি। সেইসঙ্গে প্রেসিডেন্টের মূল কার্যালয়, যেখান থেকে গোটা দেশের প্রশাসনিক কাজকর্ম পরিচালিত হয়ে থাকে, সেই ক্রেমলিনেও তিনি যেতে পারেন বলে খবর। তৃতীয়বার ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিতে বসার কৃতিত্বকে উদযাপন করতে তাঁর এই সফরে বিশেষ আয়োজন করতে চলেছেন ‘বন্ধু’ পুতিন। সূত্রের খবর, মোদির জন্য বিশেষ নৈশভোজের আয়োজন করা হয়েছে। সেখানে দুজনে একান্তে খাওয়াদাওয়া সারবেন।
প্রসঙ্গত, মোদি-পুতিনের আলোচনার দিকে তাকিয়ে রয়েছে গোটা বিশ্ব, যার মধ্যে রয়েছে চিন এবং পাকিস্তানও। ইউক্রেনে আগ্রাসনের বিরুদ্ধে যখন পশ্চিমী দুনিয়া পুতিনের শত্রুতে পরিণত হয়েছে, তখন কমিউনিস্ট চিন পাশে দাঁড়িয়েছে রাশিয়ার। এই অবস্থায় ভারত-চিন এবং ভারত-পাকিস্তান বৈরিতা বিশেষত সীমান্ত সমস্যা নিয়ে রাশিয়ার মনোভাবের উপর অনেকটাই নির্ভর করবে নয়াদিল্লির কূটনৈতিক সম্পর্ক। প্রতিরক্ষা বা বাণিজ্য ক্ষেত্রে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারলে চিন-পাকিস্তান দুদেশই চাপে পড়ে যাবে।
উল্লেখ্য, ২০০০ সালে রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের একটি চুক্তি হয়েছিল। তাতে ঠিক হয়, প্রতি বছর দুই দেশের রাষ্ট্রপ্রধানেরা এক বার করে দেখা করবেন এবং দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন। ২০১৯ সাল পর্যন্ত চুক্তি অনুযায়ী বৈঠক হয়। ২০১৯ সালে মোদি রাশিয়া সফরে গিয়েছিলেন। তার পর ২০২০ সালে কোভিড অতিমারি শুরু হয়। ২০২১ সালে ভারতে এসেছিলেন পুতিন। কিন্তু তার পর থেকে নানা কারণে এই বৈঠক বন্ধ থেকেছে। রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর পুতিনের উপর সম্মিলিত চাপ বৃদ্ধি করে পশ্চিমি দুনিয়া। একাধিক বাণিজ্যিক বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। সে সময়ে ভারত সরাসরি রাশিয়ার বিরুদ্ধে কথা বলেনি। তবে চুক্তির শর্ত মেনে মোদিকে রাশিয়াতেও যেতে দেখা যায়নি। অবশেষে ২০২৪ সালে সেই বৈঠক আবার করতে চলেছেন মোদি এবং পুতিন। আমেরিকা-সহ পশ্চিমী দুনিয়ার নজরও থাকছে এই বৈঠকে।
মোদির রুশ সফরের দিকে যেমন নজর রেখেছে রাশিয়ার বরাবরের ‘শত্রু’দেশ আমেরিকা, ঠিক তেমনই ভারতের প্রধানমন্ত্রীর মস্কো যাত্রাকে হাতিয়ার করে পশ্চিমী দুনিয়াকে নিয়ে কটাক্ষ শুরু করেছে পুতিন প্রশাসনও। ‘মোদির সফরে ওরা ঈর্ষান্বিত’, বলে খোঁচা দিয়েছে ক্রেমলিনের মুখপাত্র।
তবে মোদির এই সফর নিয়ে যথেষ্ট আশাবাদী ক্রেমলিন। দেশের এক টেলিভিশনে সাক্ষাৎকারে আমেরিকা-সহ পশ্চিমী দুনিয়াকে একহাত নিয়ে রুশ প্রশাসনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভের দাবি, ”ওরা ভারতের প্রধানমন্ত্রীর এই সফরের দিকে তাকিয়ে আছে ঈর্ষান্বিত হয়ে। আমাদের কাছে এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা সফর। দুই রাষ্ট্রপ্রধানের মধ্যে একাধিক তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়ে সবিস্তার আলোচনা এবং তাতে দু দেশের সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে বলে আশাবাদী আমরা।”
এদিকে অস্ট্রিয়া সফর নিয়ে বিবৃতিতে মোদি লিখেছেন, ‘‘অস্ট্রিয়া আমাদের নির্ভরযোগ্য সঙ্গী। আমরা উভয়েই গণতন্ত্র এবং বহুত্ববাদের শরিক। প্রেসিডেন্ট আলেকজ়ান্ডার এবং চ্যান্সেলর কার্লের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাব আমি। গত ৪০ বছরে কোনও ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর এই প্রথম অস্ট্রিয়া সফর। আশা করি, নতুন ভাবনার মাধ্যমে আমরা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কটিকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারব।’’