উদ্বেগ বাড়িয়ে খুচরা মূল্যবৃদ্ধি ৫ শতাংশের নীচে

দিল্লি : খুচরো বাজারে গত মাসের মূল্যবৃদ্ধির কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান বের হল বুধবার৷ তার আগেই অবশ্য গোটা দেশের উদ্বেগ বাড়িয়েছে সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের করা এক সমীক্ষার রিপোর্ট৷ অর্থনীতিবিদদের নিয়ে করা ওই সমীক্ষায় পূর্বাভাস, টানা চার মাস কমার পরে গত মাসে ফের মাথা তুলতে পারে পণ্যের খুচরো মূল্যবৃদ্ধির হার৷ এর কারণ হতে পারে খাদ্যপণ্যের চডে় যাওয়া দাম৷
যদিও কনজিউমার প্রাইস ইনডেক্স (সিপিআই) এর উপর ভিত্তি করে ভারতের খুচরা মূল্যস্ফীতি মে মাসে তিন মাসের সর্বোচ্চ ৫%-এ পৌঁছে যা প্রাথমিকভাবে শাকসবজি এবং ডালের দাম বৃদ্ধির কারণেই বেড়েছে বলে খবর৷
এপ্রিল মাসে মুদ্রাস্ফীতি ছিল ৪.৮২%, এবং মে ২০২৩ ছিল ৪.৩১%৷ জাতীয় পরিসংখ্যান অফিস বুধবার মে মাসের সিপিআই-এর যে ডেটা প্রকাশ করেছে তাতে দেখা গিয়েছে মে মাসে সিপিআই অর্থনীতিবিদদের অনুমানের সঙ্গে প্রায় মিলে গিয়ে ৪.৫-থেকে ৫.২২% পর্যন্ত কম৷
খুচরো মূল্যবৃদ্ধি ইতিমধ্যেই ৫ শতাংশের নীচে নেমেছে৷ কিন্ত্ত এখনও আনাজ-সহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ছে ৮ শতাংশের বেশি হারে৷ বাজার করতে গিয়ে হাত পুড়ছে আমজনতার৷ সম্প্রতি মূল্যায়ন সংস্থা ক্রিসিলের সমীক্ষা দেখিয়েছে, টোম্যাটো, পেঁয়াজ এবং আলুর দাম বাড়ায় গৃহস্থের নিরামিষ রান্নার খরচ বেশ কিছুটা বেডে়ছে মে মাসে৷ হিসাব করতে বসে বিভিন্ন উপদেষ্টা সংস্থা বহু দিন ধরেই দাবি করছে, অত্যাবশ্যক পণ্য কেনার খরচ বেশি বলেই অনেকের হাতে বাড়তি টাকা থাকছে না৷ যা চাহিদা বৃদ্ধির পথ আটকাচ্ছে৷ আয়ের চেয়ে ব্যয় বেডে় যাওয়ায় একাংশ বিপাকে পড়ছেন৷ এই অবস্থায় মে মাসের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে রয়টার্সের সমীক্ষা কাঁপুনি বাড়াচ্ছে বলেই মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল৷
গত ৫-১০ জুন ৫০ জন অর্থনীতিবিদ সমীক্ষাটিতে অংশ নিয়েছেন৷ সেখানেই উঠে এসেছে মে মাসে সামান্য হলেও খুচরো মূল্যবৃদ্ধির মাথা তোলার আশঙ্কা৷ এপ্রিলে ছিল ৪.৮৩%৷ পূর্বাভাস, বেডে় হতে পারে ৪.৮৯%৷ একাংশ তা ৫.২০% ছুঁতে পারে বলেও ইঙ্গিত দিয়েছেন৷ তবে কারও কারও আশা, মূল্যবৃদ্ধির হার নামতে পারে ৪.৩০ শতাংশে৷ সব মিলিয়ে সমীক্ষা অনুযায়ী মূল্যবৃদ্ধির পূর্বাভাস ৪.৩০-৫.২০ শতাংশ৷
খুচরো বাজারে মূল্যসূচক হিসাবের অর্ধেক জুডে় খাদ্যপণ্যের দাম৷ ফলে মূল্যবৃদ্ধি চড়বে অনুমান করা অর্থনীতিবিদেরা একবাক্যে বলছেন, খাদ্যপণ্য দামি হবে বলেই এমনটা ঘটবে৷ ব্যাঙ্ক অব বরোদার অর্থনীতিবিদ অদিতি গুপ্ত বলেন, “আমাদের ধারণা, তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে পচনশীল ফল এবং আনাজের দাম অত্যন্ত বেডে় গিয়েছে৷ সেই জন্যই খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির হার আরও চডে় যাওয়ার আশঙ্কা করছি৷ সেই সঙ্গে ডালের দামও ঊর্ধ্বমুখী৷’’
গত বছর থেকেই খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি সার্বিক খুচরো মূল্যবৃদ্ধির হারের বেশি৷ গত বারের অনিয়মিত বর্ষার পরে এ বার পরিস্থিতি ঘোরালো করেছে চড়া গরম৷ আনাজ এবং ফলের জোগানে টান ধরায় বেডে়ছে দাম৷ মূলত খাদ্যপণ্যের দাম নিয়ে অনিশ্চয়তার কথা বলেই এ বারও সুদ অপরিবর্তিত রেখেছে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক৷ আর্থিক বৃদ্ধির পূর্বাভাস বাড়ালেও আরবিআই গভর্নর শক্তিকান্ত দাসের স্পষ্ট বার্তা, মূল্যবৃদ্ধিকে ৪ শতাংশে স্থায়ী ভাবে বাঁধা না গেলে সুদের হার বদলানো হবে না৷ আর খাদ্যপণ্যের দামে লাগাম পরানো না গেলে সেটা যে সম্ভব নয়, এ ব্যাপারে কারও সংশয় নেই৷ যে কারণে পণ্য পরিবহণ খাতে খরচ কমাতে ডিজ়েলের দাম আরও কমানোর দাবিও উঠছে দেশ জুডে়৷