• facebook
  • twitter
Friday, 11 April, 2025

৪৮ ঘণ্টার মধ্যে রাষ্ট্রপতির সই, আইনে পরিণত ওয়াকফ সংশোধনী বিল

শনিবার ওয়াকফ সংশোধনী বিলে সাক্ষর করলেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। এর ফলে সংসদে পাশ হওয়া বিলটি পরিণত হল আইনে।

ওয়াকফ সংশোধনী বিলে সাক্ষর করলেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। এর ফলে সংসদে পাশ হওয়া বিলটি পরিণত হল আইনে। লোকসভায় দীর্ঘ ১৩ এবং রাজ্যসভায় দীর্ঘ ১২ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে বিতর্ক চলার পরে উভয় কক্ষে পাশ হয়েছিল সংশোধনী বিল। এর পর নিয়ম অনুযায়ী বিলটি পাঠানো হয়েছিল রাষ্ট্রপতি ভবনে। শনিবার রাতে এই বিলে অনুমোদন দেন রাষ্ট্রপতি।

২ এপ্রিল লোকসভায় পেশ করা হয়েছিল ওয়াকফ সংশোধনী বিল। এই বিলে নিয়ে মধ্যরাত পর্যন্ত চলে বিতর্ক। বুধবার গভীর রাতে লোকসভায় পাশ হয় সংশোধিত ওয়াকফ বিল। বিলের পক্ষে ২৮৮ এবং বিপক্ষে ২৩২ জন সাংসদ ভোট দেন। মোট ভোট পড়ে ৫২০টি। এর পরে ১২৮-৯৫ ভোটে রাজ্যসভায় বৃহস্পতিবার গভীর রাতে পাশ হয়েছিল এই সংশোধনী বিল।

ভারত সরকারের গেজেটিয়রে ইতিমধ্যেই প্রকাশিত হয়েছে সংশোধনী আইনের বিজ্ঞপ্তি। বিজেপির দাবি, এই আইনের ফলে কোটি কোটি প্রান্তিক মুসলিম জনগণ উপকৃত হবেন। এতদিন ধরে গুটিকয়েক প্রভাবশালীর হাতে কুক্ষিগত ওয়াকফ সম্পত্তি মুক্ত হবে এবং সাধারণ মুসলিমরা উপকৃত হবেন। যদিও বিরোধীদের দাবি, এই বিল পুরোপুরি অসাংবিধানিক। এটা আসলে পরিকল্পিতভাবে সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমণ।

১৯৫৪ সালের আইনকে সংশোধন করে ১৯৯৫ সালে ওয়াকফ বোর্ডের ক্ষমতা অনেকটাই বাড়িয়েছিল ভারত সরকার। ৩০ বছর পর নতুন আইনে বোর্ডের ক্ষমতা এবং কার্যকারিতার খোলনলচে বদলে গেল। নয়া আইন মোতাবেক, তাই কোনও জমি ওয়াকফ কি না, সেই সম্পর্কিত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন সংশ্লিষ্ট জেলার জেলাশাসক। বোর্ডে এ বার থেকে থাকতে পারবেন অমুসলিম প্রতিনিধিরাও। নিয়ন্ত্রণ থাকবে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারেরও।

নতুন আইন অনুযায়ী, এবার থেকে ওয়াকফ কাউন্সিলে সর্বাধিক ৪ জন অমুসলিম প্রতিনিধি থাকবে। দু’জন মহিলা প্রতিনিধিও থাকবে। একটি কেন্দ্রীয় পোর্টালের মাধ্যমে ওয়াকফ সম্পত্তির নথিভুক্তিকরণ নিয়ন্ত্রণ করার প্রস্তাবও রয়েছে এই আইনে। ইতিমধ্যেই এই আইনকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছে কংগ্রেস ও এআইএমআইএম। তাঁদের যুক্তি, এই বিল ধর্মনিরপেক্ষ ভারতের সত্ত্বায় আঘাত। ওয়াকফ বোর্ডে অমুসলিমদের প্রবেশ নিয়ে প্রবল আপত্তি রয়েছে বিরোধী শিবিরের।

ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা যে সম্পত্তি ধর্মপ্রচার এবং সমাজের উন্নতিকল্পে দান করেন, সেটাকে ওয়াকফ বলে। এই ওয়াকফ সম্পত্তি বিক্রি করা যায় না বা ব্যবসায়িক স্বার্থে ব্যবহার করা যায় না। ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা মনে করেন, ওয়াকফ আসলে ঈশ্বরের সম্পত্তি। স্বাধীন ভারতে ১৯৫৪ সালে পাশ হয় ওয়াকফ আইন। ১৯৯৫ সালে ওয়াকফ আইন সংশোধন করে, ওয়াকফ বোর্ডকে সর্বোচ্চ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল। ২০১৩ সালেও একবার ওয়াকফ আইন সংশোধন করা হয়েছে। আর এবার আইনে পরিণত হল সংশোধিত ওয়াকফ বিল।

এই মুহূর্তে ওয়াকফ বোর্ডের সারা দেশে ৮.৭ লক্ষেরও বেশি সম্পত্তি রয়েছে, যা ৯.৪ লক্ষ একর জুড়ে বিস্তৃত। রেল এবং ভারতীয় সেনার পর দেশে সবচেয়ে বেশি সম্পত্তি রয়েছে ওয়াকফ বোর্ডেরই। পুরনো ওয়াকফ আইন অনুযায়ী, ওয়াকফ বোর্ড একচ্ছত্র অধিকার ভোগ করত। নতুন আইনেওয়াকফ বোর্ডের সেই একচ্ছত্র অধিকার কেড়ে নিয়ে কোনও সম্পত্তি ওয়াকফ কি না, সেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে জেলাশাসক বা সমপদমর্যাদার কোনও আধিকারিকের হাতে।