বাড়িতে ঢুকে সইফ আলি খানের ওপর হামলা, উদ্বেগ প্রকাশ মমতার

অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতীর হানায় আহত বলিউড অভিনেতা সইফ আলি খান। প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, তাঁকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানো হয়েছে। সইফের হাতে, গলায় এবং পিঠে চোট লেগেছে। বৃহস্পতিবারই অস্ত্রোপচার হয়েছে বলিউড় অভিনেতার। আপাতত আইসিইউতে রয়েছেন তিনি। লীলাবতী হাসপাতালের চিকিৎসক নীরজ উত্তমানি জানান, ভোর সাড়ে ৩টে নাগাদ সইফকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। অভিনেতার শরীরে ছ’টি ক্ষত রয়েছে, যার মধ্যে দু’টি ক্ষত গভীর।

সইফের বাড়ির সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে হামলাকারীকে চিহ্নিত করেছে মুম্বই পুলিশের অপরাধদমন শাখা। কিন্তু এখনও তাঁকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। সূত্রের খবর, বেশ কয়েকজন সন্দেহভাজনকে আটক করেছে পুলিশ। পুলিশের ১০ সদস্যের একটি দল ইতিমধ্যে শুরু করে দিয়েছে চিরুনি তল্লাশি। হামলাকারী বাড়ির এক পরিচারকের পূর্ব-পরিচিত বলেও জানতে পেরেছে পুলিশ। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, বুধবার রাতে একটি পার্টিতে গিয়েছিলেন করিনা। পরিবারের বাকিরা বাড়িতেই ছিলেন। রাত দেড়টা নাগাদ বাড়িতে ফেরেন করিনা। হলঘরে ঢুকে তিনিই প্রথম দেখতে পান হামলাকারীকে। করিনার চিৎকালে এক পরিচারিকা বেরিয়ে আসেন। দ্রুত ভিতরে ঢুকে যান করিনা। হলঘর থেকে স্ত্রীর চিৎকার শুনে সেখানে আসেন সইফ নিজে। পরিচারিকার সঙ্গে অচেনা ব্যক্তির ধস্তাধস্তি হচ্ছে দেখে তিনি বাধা দিতে যান। সেই সময়ে ধারালো ছুরি বার করে এলোপাথাড়ি কোপ মারেন অভিযুক্ত। তার পরেই হামলাকারী বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়।


মুম্বইয়ের লীলাবতী হাসপাতালে প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে সইফের অস্ত্রোপচার চলে। লীলাবতী হাসপাতালের চিকিৎসক নিতিন দাঙ্গে বলেছেন, শিরদাঁড়ায় ছুরি গেঁথে ছিল। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সেই ছুরি বার করা হয়েছে। ছুরি আটকে থাকার ফলে শিরদাঁড়া থেকে সেরিব্রোস্পাইনাল তরল নির্গত হচ্ছিল। ঘাড় ও হাতের চোট প্লাস্টিক সার্জারির মাধ্যমে ঠিক করা হয়েছে। প্রতি মুহূর্তে তাঁর শারীরিক অবস্থার দিকে নজর রাখা হচ্ছে।

সইফের ওপর হামলার ঘটনায় সোশাল মিডিয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এক্স হ্যান্ডেলে তিনি লিখেছেন, জনপ্রিয় অভিনেতা সইফ আলি খানের উপর হামলার খবর শুনে ভীষণ উদ্বিগ্ন। আমি ওঁর দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি। আমার বিশ্বাস, আইন আইনের পথে হাঁটবে। যে বা যারা এই কাণ্ড ঘটিয়েছে, শাস্তি পাবে। এই কঠিন সময়ে শর্মিলাদি, করিনা কাপুর এবং ওঁদের গোটা পরিবারের জন্য প্রার্থনা করছি।

করিনা কাপুর খান পরিবারের বন্ধু তথা শরদ পাওয়ারের মেয়ে সুপ্রিয়া সুলেও উদ্বেগ প্রকাশ করেন এই ঘটনায়। তিনি ফোনে সইফের শ্যালিকা করিশ্মা কাপুরের সঙ্গে কথাও বলেন। আম আদমি পার্টির নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়াল সইফের দ্রুত আরোগ্য কামনা করে পোস্ট করেছেন।

এই ঘটনায় মহারাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধী দলের নেতা-নেত্রীরা। শিবসেনার উদ্ধব শিবিরের রাজ্যসভার সাংসদ প্রিয়াঙ্কা চতুর্বেদী। তাঁর প্রশ্ন, যদি তারকারাই সুরক্ষিত না থাকে, তাহলে মুম্বইতে কে সুরক্ষিত? প্রিয়াঙ্কা বলেন, সইফ আলি খানের উপর এই হামলা মুম্বই পুলিশ ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ভূমিকা নিয়ে বড়সড় প্রশ্ন তুলে দিল। বাবা সিদ্দিকির হত্যা, সলমন খানের বাড়ি লক্ষ্য করে গুলির পরে সইফ আলি খানের উপর হামলা। সবই বান্দ্রাতে হয়েছে। যেখানে সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় তারকারা থাকেন।

এনসিপির শরদ পাওয়ার শিবিরের মুখপাত্র ক্লাইড ক্রাস্তোর প্রশ্ন, তারকারাই যদি সুরক্ষিত না থাকেন, তাহলে সাধারণ মানুষ কীভাবে সুরক্ষিত থাকবেন? কংগ্রেস সাংসদ বর্ষা গায়কোয়াড়ও মহারাষ্ট্রের সরকারকে নিশানা করেছেন। তিনি বলেন, মুম্বইয়ে ক্রমশ অপরাধ বাড়ছে। আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাজ্য সরকার কোনও পদক্ষেপ করছে না। যদিও বিরোধীদের কথায় কান দিতে নারাজ গেরুয়া শিবির। বিজেপির বক্তব্য, গোটা ঘটনার তদন্ত চলছে। দোষীদের উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।

বৃহস্পতিবার বিকেলে সইফের টিমের তরফে এক বিবৃতিতে জানানো হয়, সইফ আলি খানের অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়েছে। এখন তিনি বিপন্মুক্ত। তিনি আস্তে আস্তে সেরে উঠছেন। চিকিৎসকেরা তাঁর শারীরিক পরিস্থিতির দিকে কড়া নজর রাখছেন। পরিবারের সমস্ত সদস্য নিরাপদে রয়েছেন। পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।