রাহুল-প্রিয়াঙ্কার সম্ভলে যাওয়া রুখল পুলিশ

রাহুল গান্ধী ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধী সম্বল যাওয়ার পথে গাজিপুর সীমান্তে বাধাপ্রাপ্ত হলেন। ছবি: এ এন আই

সম্ভলের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে যেতে পারলেন না রাহুল ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। তাঁদের আটকে দেওয়া হল দিল্লি-উত্তরপ্রদেশ বা গাজ়িপুর সীমানায়। বুধবার সকাল থেকেই এই নিয়ে কড়া নিরাপত্তার বলয়ে মুড়ে ফেলা হয়েছিল এলাকা। বসানো হয় পুলিশের ব্যারিকেড। যার জেরে অবরুদ্ধ হয় দিল্লি-মিরাট এক্সপ্রেসওয়ে। মঙ্গলবার যখনই জানা গিয়েছিল বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী সম্ভলের শাহি জামা মসজিদ পরিদর্শনে যাবেন। পরে জানা যায়, তাঁর সঙ্গে যোগ দেবেন ওয়েনাড়ের সাংসদ প্রিয়ঙ্কা গান্ধীও। তখনই প্রশাসনের তৎপরতা শুরু হয়ে যায়। যাতে কোনওভাবে রাহুল-প্রিয়াঙ্কা এলাকায় পা রাখতে না পারেন।

বুধবার সকাল ১০টা ১৫ মিনিট নাগাদ সম্ভলে যাওয়ার জন্য রওনা দেন রাহুলরা। ইতিমধ্যেই সম্ভলের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রাজেন্দ্র পেনসিয়া পার্শ্ববর্তী জেলার আধিকারিকদের আগাম নির্দেশ দেন, যাতে রাহুল গান্ধীকে সীমান্তেই আটকানো হয় এবং তাঁকে সম্ভলে ঢুকতে না দেওয়া হয়। আমরোহা, বুলন্দশহর, গাজিয়াবাদ ও গৌতম বুদ্ধ নগরের পুলিশ এবং প্রশাসনের কাছে এই বিষয়ে চিঠিও পাঠানো হয়। ১১টা নাগাদ রাহুল ও প্রিয়াঙ্কা গাজিপুরে পৌঁছলে আর এগোতে দেওয়া হয়নি তাঁদের কনভয়। তাঁদের উত্তরপ্রদেশে প্রবেশের অনুমতি না দেওয়ায় রীতিমত বিশৃঙ্খলার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। রাহুলদের সঙ্গে থাকা অনেক কংগ্রেস কর্মী-সমর্থক পুলিশের ব্যারিকেড টপকে এগোনোর চেষ্টা করেন। শুরু হয় পুলিশের ধরপাকড়। কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক কে সি বেণুগোপাল এক্স হ্যান্ডলে লিখেছেন, ‘আমাদের দেশের শান্তি ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার লক্ষ্যেই আক্রান্তদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে আমরা বদ্ধপরিকর। উত্তরপ্রদেশ সরকারকে আমাদের প্রতিনিধি দলকে সম্ভলে যাওয়ার অনুমতি দিতেই হবে।’ বেশ কিছুক্ষণ আটকে থাকার পর রাহুল-প্রিয়াঙ্কা দুজনেই দিল্লি ফিরে আসেন।

রাহুল-প্রিয়াঙ্কার এই সফর যে বুমেরাং হবে, তারাও বোধহয় তা জানতেন না। তাঁদের সম্ভল সফর নিয়ে সরব হলেন সমাজবাদী পার্টি। কংগ্রেস সাংসদদের এই সফরকে ‘ছবি তোলার রাজনীতি’ ও ‘নিছক লোক দেখানো’ সফর বলে কটাক্ষ করল সপা। এই সমালোচনার পর ইন্ডিয়া জোটের ফাটল আরও প্রকট হল।


দিন কয়েক ধরেই কংগ্রেস ও সমাজবাদী পার্টির বনিবনা হচ্ছিল না। সংসদে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে কংগ্রেসের ডাকা বিক্ষোভ কর্মসূচিতে যোগ দিতে দেখা যায়নি। তৃণমূলের সঙ্গে যোগ দেয়নি সমাজবাদী পার্টিকেও। সপা আগেই জানিয়েছিল, আদানি কাণ্ডের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ সম্ভলে হিংসার ঘটনা। এই ইস্যুতে বিরোধীদের সরব হওয়া উচিত। তখন কংগ্রেস সংসদে সপার দাবিকে গুরুত্ব দেয়নি। এরপর বুধবার সকালে রাহুল ও প্রিয়াঙ্কা সম্ভলের উদ্দেশে রওনা দিতেই কড়া সুরে আক্রমণ শানাল সপা। এদিন সপা সাংসদ রামগোপাল যাদব বলেন,’বার বার আবেদন করা সত্ত্বেও কংগ্রেস দল সংসদে সম্ভলের ঘটনা নিয়ে কোনও আলোচনার দাবি জানায়নি। এরপর রাহুল গান্ধী সম্ভলের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন। একে আর কী বলা যায়, উনি ছবি তোলার রাজনীতি করছেন ও নিছক লোক দেখানোর জন্য ওখানে যাচ্ছেন।’

এই ঘটনায় জাতীয় রাজনীতিতে অন্য অঙ্ক কষতে শুরু করেছে রাজনৈতিক মহল। সাম্প্রতিক হরিয়ানা, মহারাষ্ট্রের মতো রাজ্যগুলিতে কংগ্রেসের বড় ব্যর্থতার পর বিজেপি বিরোধী লড়াইয়ে কংগ্রেসের গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নের মুখে। বিজেপিকে হারাতে কংগ্রেস যে ব্যর্থ, দলে তা ক্রমশ প্রমাণিত সত্য হয়ে উঠছে। এই অবস্থায় ইন্ডিয়া জোটের শরিক হলেও সেখানে কংগ্রেসের আধিপত্য মানতে নারাজ বহু শরিক। তারই প্রতিফলন পাওয়া গেল সমাজবাদী পার্টির সমালোচনায়।