অযােধ্যায় বামনি ঝর্নায় হড়পা বান, রুদ্ধশ্বাস লড়াইয়ের পর কলেজ পড়ুয়াদের বাঁচাল পুলিশ

(Photo: Statesman News Service)

এ যেন কোনাে ইংরেজি অ্যাকশান ছবির একেবারে ক্লাইমেক্স। প্রবল গর্জনে ফুসছে অযােধ্যা পাহাড়ের বামনি ঝর্না। তার মাঝে পাথরের খাঁজে আটকে রয়েছে দুই কলেজ পড়ুয়া। অসহায় হয়ে আর্তনাদ করছে তাদের বাকি তিন সঙ্গী। যে কোন সময় প্রবল জলরাশি দুজনকে পাথরের খাঁজ থেকে ফেলে দিতে পারে।

এতটুকু পা ফসকালে তারা কোথায় গিয়ে পড়বে কেউ জানে না। এমনই পরিস্থিতিতে বাঘমুণ্ডির ওসি রজত চৌধুরীর নেতৃত্বে বলতে গেলে অসাধ্য সাধন করল পুলিশ। জলের তােড় বাড়তেই শুধু অসহায় কথাটুকু পাঁচ কলেজ পড়ুয়া জানাতে পেরেছিল পুলিশকে। পাহাড়ে হড়পা বান কেমন আসে, তা ভালভাবেই জানেন বাঘমুণ্ডি থানার পুলিশ কর্মীরা।

এক মিনিটও দেরি না করে ওসি রজতবাবু হাতের কাছে যত দড়ি ছিল নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। সঙ্গে নেন এএসআই জয়ন্ত চক্রবর্তী এবং নাজিমুল হুদাকে। এছাড়াও তার টিমে ছিলেন ভিলেজ পুলিশ রূপ সিং সহ সিভিক ভলান্টিয়াররা। পাহাড়ে তখন তােড়ে বৃষ্টি হচ্ছে। তার মধ্যেই সুড়িপথ বেয়ে উদ্ধারকারীরা নেমে যান বামনি ঝর্নার সেই জায়গায়।


পুলিশ বাহিনী দেখেই বাঁচার আশায় চিৎকার করতে থাকে আটকে থাকা কলেজ পড়ুয়ারা। পাঁচজনের মধ্যে ছিল তিন তরুণ ও দুই তরুণী। পরস্পরের বন্ধু এই পড়ুয়ারা এদিন পাহাড়ে ঘুরতে এসেছিল। বেলা এগারােটা নাগাদ বামনি ঝর্নায় নামার কিছুক্ষণ পরই শুরু হয়ে যায় বৃষ্টি।

এমনিতেই আগের দিন বৃষ্টি হওয়ায় ঝর্নায় জলের তােড় ভাল ছিল। এরপর আরও বৃষ্টি হওয়ায় ধীরে ধীরে উপর থেকে থেকে ঝরে পড়া ঝর্না আরও উত্তাল। হতে শুরু করে জল বাড়তে দেখে প্রথমে বেশ রােমাঞ্চিত হয়ে যায় তরুণের দল। তারা বুঝতেও পারেনি কি ভয়ানক বিপদ এগিয়ে আসছে।

হঠাৎই হড়পা বানের মতাে প্রবলভাবে পড়তে থাকে ঝর্নার জল। তিনজন কোনােমতে কিছুটা নিরাপদ জায়গায় এলেও দুই তরুন-তরুণী আটকে যায়। পুলিশ গিয়ে সঙ্গে সঙ্গে মােটা গাছ দেখে তাতে দড়ি বাঁধে। ওসি নিজে সঙ্কটাপন্ন দুই তরুণ-তরুণীকে সাহস জোগাতে থাকেন।

একাধিক গাছের সঙ্গে দড়ি বেঁধে প্রথমে একটা জালের মতাে করেন তারা। দড়ি ধরে বহু প্রচেষ্টায় আটকে থাকা দুই পড়ুয়ার কাছে যান পুলিশের দক্ষ কর্মীরা। এরপর একে একে বলতে গেলে শরীরের সঙ্গে বেঁধে তাদের উদ্ধার করেন পুলিশের দল।

বৃষ্টির মধ্যে এই উদ্ধারকাজ অসম্ভব বলে মনে হলেও বেশ কয়েক ঘন্টার চেষ্টার এটি সম্ভব হয়। এর জন্য রীতিমতাে জীবনের ঝুঁকি নিতে হয় পুলিশ কর্মীদের। উদ্ধারের পরও তরুণীর অবস্থা যথেষ্ট উদ্বেগজনক ছিল। প্রচণ্ড আতঙ্কে তার কথা বার হচ্ছিল না। বাঘমুণ্ডি থানার এত ভাল কাজের জন্য প্রশংসা করেন জেলা পুলিশ সুপার আকাশ মাঘারিয়া। স্থানীয় মানুষজন উদ্ধারকারীদের উপযুক্ত সম্মান দেবার দাবি তুলেছেন।