দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা করতে প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা ‘নিষ্ঠুর পরিহাস’ ছাড়া আর কিছুই নয় বলে মন্তব্য করলেন কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধি। এদিন করোনা বিধবস্তু সমস্যা মোকাবিলায় অনলাইনে বিরোধীদের ভিডিও কনফারেন্সে সোনিয়া গান্ধি সংস্কারের নামে প্রধানমন্ত্রীর সারি সংস্থাগুলির ব্যাপক বেসরকারিকরণের তীব্র সমালোচনা করেন।
সোনিয়া গান্ধি বলেন, সরকারের সকল মন্ত্রকের কাজ এখন পিএমও’র নির্দেশে চলছে। প্রধানমন্ত্রী একাই সকল দফতরের ক্ষমতা কুক্ষিগত করেছেন। বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকারের অন্য কোনও দফতরের মন্ত্রীদের কোনও ক্ষমতাই নেই।
তিনি বলেন, ভারতীয় সংবিধানের প্রস্তাবনা অনুযায়ী কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে যে কাঠামোগত ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণের নির্দেশ রয়েছে সেটাও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী উপেক্ষা করছেন। রাজ্য সরকারের অধিকারের ওপর অযথা আঘাত হানার চেষ্ট চলছে। সংসদের উভয় সভার স্ট্যান্ডিং কমিটিগুলির সভা ডাকার কোনও প্রয়োজনই মনে করছে না প্রধানমন্ত্রী।
সভায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে অংশ নেন। কিন্তু মায়াবতীর বহুজন সমাজ পার্টি, সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব এবং আম আদমি পার্টির অরবিন্দ কেজরিওয়ালের এই সভায় অনুপস্থিতি রাজনৈতিক মহলে আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সোনিয়া গান্ধি বলেন, করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সরকারের লাগাতার লকডাউনের মেয়াদ বৃদ্ধিতে অর্থনীতির ঋণাত্মক প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রাথমিকভাবে প্রধানমন্ত্রী একুশ দিনের লকডাউনেই সমস্যার অনেকটাই মোকাবিলা সম্ভব হবে বলে আশা করেছিলেন। কিন্তু তাঁর সেই আশাভঙ্গ হয়েছে। কিন্তু প্রতিষেধক তৈরি না হওয়া পর্যন্ত এই ভাইরাস যে আমাদের ছাড়বে না সেটাই মনে হচ্ছে। সরকারেরও লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানো ছাড়া আর কোনও উপায় নেই বলেই মনে হচ্ছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
দেশের আর্থিক অবস্থা চরম দুর্দশাগ্রস্ত। দেশের প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদরা বারবার তা চাঙ্গা করার জন্য নানান পরামর্শ দিচ্ছেন, কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর ২০ লাখ কোটি টাকার প্যাকেজ ও পরবর্তীতে অর্থমন্ত্রীর পাঁচদিন ধরে তার বিস্তারিত ব্যাখ্যা এক ‘নিষ্ঠুর পরিহাসের’ অবতারণা করেছে।
পরিযায়ী শ্রমিক ছাড়াও, দেশের তেরো কোটি দরিদ্র মানুষ আজ যে দুর্দশার মধ্যে পড়েছেন তা অভূতপূর্ব। দিন মজুর, ভূমিহীন শ্রমিক, কাজছুট শ্রমিক, দোকানদার, স্বনিযুক্তকর্মী, এমএসএমই, অসংগঠিত শিল্প কর্মীদের দুর্দশা চরম অবস্থা প্রাপ্ত হয়েছে। কিন্তু বর্তমান সরকারের হাতে সমাধানের কোনও উপায় নেই- এটাই সবথেকে ভয়ের বাতাবরণ সৃষ্টি করেছে।
কিন্তু এ সত্ত্বেও সরকারের তাদের প্রতি কোনও সহানুভূতি দেখানোর কোনও উদ্যোগ নেই- এটা খুবই হৃদয়বিদারক। তবে দীর্ঘ ৩৫ বছর বিজেপির শরিক শিবসেনা নেতা উদ্ধব ঠাকরের এদিন বিরোধীদের সংযুক্ত বৈঠকে অংশগ্রহণ রাজনৈতিক মহলে স্থায়ী আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে দাঁড়িয়েছে।