জন্মদিনে ঘরেই কাটালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, গুজরাতের জন্য উন্নয়নের একগুচ্ছ প্রতিশ্রুতি

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। (File Photo: IANS)

প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নয়, সাধারণ ঘরের ছেলের মতােই ৬৯-তম জন্মদিনটি কাটালেন নরেন্দ্র মোদি । দুপুরে বাড়িতে গিয়ে মা হীরাবেনের সঙ্গে দেখা করে আর্শীর্বাদ নেন প্রধানমন্ত্রী আজকে মধ্যাহ্ন ভােজ সারলেন মায়ের সঙ্গেই। প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিনে তাঁকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ব্যক্তিত্বরা। কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং, রেলমন্ত্রী পীযুষ গোয়েল, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুরেশ প্রভু সহ অন্যান্য কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, বিজেপির নেতা বিধায়করা তাঁকে শুভেচ্ছা জানান। বিরােধী দলের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় টুইট করে মোদিকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। মােদিও সৌজন্য দেখিয়ে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীকে বাংলা ভাষায় পাল্টা শুভেচ্ছা জানান। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধি টুইটে মোদিকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

আজ সকাল থেকেই গুজরাতে একাধিক কর্মসুচিতে সামিল হন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সকালে প্রথমে যান নর্মদা নদীর ওপর নির্মিত সর্দার সরােবর বাঁধে। পরে একটি ইকো টুরিজম কেন্দ্র ও ক্যাকটাস গার্ডেন ঘুরে দেখেন। এরপর তিনি ‘স্ট্যাচু অফ ইউনিটি’ দেখতে কেবাডিয়ায় যান। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন গুজরাতের রাজ্যপাল আচার্য দেবব্রত ও মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রূপানি। গড়ুরেশ্বর দত্ত মন্দিরে পুজোও দেন মোদি।

সােমবার রাতে আহমেদাবাদ পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদি। মঙ্গলবার সকালে তিনি ‘নমামী নর্মদে’ উৎসবে যােগ দেন। পরে তিনি সর্দার সরােবর বাঁধ পরিদর্শন করেন। ২০১৭ সালে ১৭ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী এই বাঁধের উদ্বোধন করেন। এখানে তিনি একটি জনসভায় ভাষণ দেন। বাঁধের উন্নয়নমূলক কাজকর্ম নিয়েও খোঁজখবর নেন। নর্মদা নদীর তীরে নির্মিত সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের স্ট্যাচু অফ ইউনিটি পরিদর্শন করেন। দুপুরে তিনি গান্ধিনগরের উদ্দেশ্যে রওনা হন।


কেবাডিয়াতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদি একটি জনসভা করেন। সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের মুর্তিকে ঘিরে পর্যটন প্রকল্প থেকে শুরু করে এলাকার সেচ, পানীয় জল, বিদ্যুতের মতাে প্রকল্পগুলি ঘুরে দেখেন। আহমেদাবাদ থেকে নর্মদা যাওয়ার পথে বিমান থেকে দেশের সর্বদীর্ঘ সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের মূর্তির ছবি তুলে সেটি সােশ্যাল মিডিয়ায় পােস্ট করেন প্রধানমন্ত্রী সঙ্গে ছবির নীচে লেখেন, ‘বিশাল স্ট্যাচু অব ইউনিটি দেখুন। মহান সর্দার পটেলকে ভারতের শ্রদ্ধা’। 

কেবাডিয়ার জনসভায় ভাষণের সময় তিনি গুজরাতের উন্নয়ন নিয়ে দীর্ঘ বক্তব্য রাখেন। সেখানে বাদ যায়নি কাশ্মীর প্রসঙ্গও। জনসভায় মোদি বলেন, ‘জম্মু ও কাশ্মীরের মানুষকে ৭০ বছর ধরে বিছিন্নতাবাদের সঙ্গে যুদ্ধ করতে হয়েছে। একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে দেশ। দশকের পর দশক ধরে চলতে থাকা সমস্যা সমাধানের সুযােগ তৈরি হয়েছে। কাশ্মীর, লে, লাদাখের মানুষের সহযােগিতায় জম্মু ও কাশ্মীরে এক নতুন যুগের সূচনা হবে’।

গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী থেকে দেশের প্রধানমন্ত্রীর কুর্শিতে বসা নরেন্দ্র মোদি আজ নিজের রাজ্যের উন্নয়ন নিয়ে ঢালাও প্রতিশ্রুতি দিলেন। প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, ‘২০০১ সালে শুরুর সময় কিছুই ছিল না, আমাদের দায়িত্ব ছিল পানীয় জল, সেচ, বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা। দীর্ঘ সময় ধরে কাজ হয়েছে, আপনারা ধৈর্য হারাননি। গুজরাতে সেচের একটি নেটওয়ার্ক তৈরি হয়েছে। ২০০১ সালে ১৪ হাজার হেক্টর ছিল সেচের আওতায়, ৮ হাজার পরিবার এর থেকে সুবিধা পেত। এখন সেখানে ১৯ লক্ষ হেক্টর জমি সেচের আওতায় এসেছে, ১২ লাখ পরিবার সুবিধা পাচ্ছে। ২০০২ সালে ভারতের ইতিহাসে প্রথমবারের জন্য রাজকোট, জামনগরে পৌঁছনাের জন্য একটি বিশেষ জল ট্রেন চালাতে হয়েছিল। আজ সেই পুরােন দিনের কথা মনে পড়ছে। গুজরাত আজ কতদুর এগিয়ে গেছে’।

বিশ্বে দীর্ঘতম সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের মূর্তি পরিদর্শন করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দাবি করেন এখানে পর্যটকদের ভিড় বেড়েছে। ১১ মাসে ২৩ লাখ পর্যটক এখানে এসেছেন। প্রতিদিন গড়ে সাড়ে ৮ হাজার পর্যটক এখানে আসেন। ১৩৩ বছরের ‘স্ট্যাচু অফ লিবার্টি’ দেখতে প্রতিদিন ১০ হাজার পর্যটক আসেন, সেখানে মাত্র ১১ মাসে ‘স্ট্যাচু অফ ইউনিটি’ দেখতে এসেছেন এত বিপুল সংখ্যক পর্যটক। স্থানীয় যুবকদের রােজগারের রাস্তাও খুলে গেছে। জন্মদিনে পরিবেশ রক্ষা এবং উন্নয়ন নিয়ে সতর্ক করেছেন গুজরাতবাসীকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদি।

তিনি বলেন, ‘আমাদের সংস্কৃতি অনুযায়ী পরিবেশ রক্ষার সময় উন্নয়ন ঘটানাে সম্ভব। প্রকৃতি আমাদের কাছে আরাধ্য, আমাদের গহনা। পরিবেশ সংরক্ষণের সঙ্গে কীভাবে উন্নয়ন করা যায় তার একটি জীবন্ত উদাহরণ কেবাডিয়া দেখা যাচ্ছে। এখানে প্রগতি, প্রকৃতি, পর্যবেক্ষণ ও পর্যটনের মেলবন্ধন সম্ভব হয়েছে। একদিকে সর্দার সরােব্ব বাঁধ রয়েছে, বিদ্যুৎ উৎপাদনে যন্ত্র রয়েছে, অন্যদিকে একতা নার্সারি, বাটারফ্লাই গার্ডেনের মতাে ইকো-টুরিজম রয়েছে। আমাদের ওপর সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের আশীর্বাদ রয়েছে’।

বিশ্বকর্মা পুজো উপলক্ষ্যে দেশবাসীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি । তিনি জানিয়েছেন, আমরা যে নতুন ভারত তৈরির উদ্দেশ্যে এগিয়ে চলেছি, তাতে ভগবান বিশ্বকর্মার মতাে সৃজনশীলতা এবং বড় লক্ষ্য অর্জনের ইচ্ছাশক্তি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।