কোভিড ১৯ সংক্রমণের চিকিৎসায় প্লাজমা থেরাপিকে কীভাবে কাজে লাগানো যায় সেই গবেষণা চলছে বিশ্বজুড়েই। কিছুদিন আগেই ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর) জানিয়েছিল, করাোনা আক্রান্ত রোগীদের উপরে প্লাজমা থেরাপি প্রয়োগ করা যেতে পারে, তবে এই বিষয়ে চুড়ান্ত পর্যায়ের গবেষণা চলছে। ড্রাগ কন্ট্রোলের অনুমোদন পেলেই মানুষের উপরে ট্রায়াল শুরু হবে।
আইসিএমআরের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, গবেষণা প্রায় শেষ পর্যায়ে। আগামী দু’সপ্তাহের মধ্যেই আক্রান্ত রোগীদের উপরে এই থেরাপির প্রয়োগ হতে পারে। এক্ষেত্রে প্লাজমা থেরাপি এবং প্লাজমা এক্সচেঞ্জ থেরাপি, দুরকম পদ্ধতির প্রয়োগ করা হতে পারে। পুণের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজির (এনআইভি) সহযোগিতায় প্লাজমা থেরাপি নিয়ে গবেষণা চলছে আইসিএমআরে।
জানানো হয়েছে, আগামী তিনদিনের মধ্যে ড্রাগ কন্ট্রোলের অনুমোদন চলে আসবে। এর পরেই মানুষের উপর ট্রায়ালের জন্য রেজিষ্ট্রি করা হবে। সংক্রামিত যে রোগীদের অবস্থা অতি সঙ্কটজনক, আগে তাঁদের উপরেই প্রয়োগ করা হবে এই থেরাপি। মেডিক্যাল কলেজে এই প্লাজমা থেরাপি রোগীদের উপর ট্রায়াল করে দেখনে ডাক্তাররা।
আইসিএমআর জানিয়েছে, সংক্রমণ সারিয়ে সুস্থ হয়ে ওঠাদের প্লাজমা প্রয়োগ করা হবে আক্রান্তদের উপরে। তার আগে দাতা ও গ্রহীতার রক্তের গ্রুপ ও রক্তের আরও কিছু পরীক্ষা করে নেওয়া জরুরি। কারণ প্লাজমা থেরাপি সব রোগীর উপরে প্রয়োগ করা নাও যেতে পারে। সংক্রমণের ধরন, উপসর্গ, রোগীদের শারীরিক অবস্থা অনেক কিছু পরীক্ষা করে দেখে তবেই এই থেরাপির প্রয়োগ হতে পারে।
তার ওপর দাতার শরীরে সংক্রমণ থেকে গেছে কিনা সেটাও নিশ্চিত হওয়া জরুরি। আক্রান্ত ব্যক্তি সুস্থ হয়ে ওঠার পরেও তাকে কিছুদিন কোয়ারেন্টাইনে রেখে পর্যবেক্ষণ করতে হয়। সংক্রমণ সম্পূর্ণ সেরে গেছে নিশ্চিত হলেই তার প্লাজমা নেওয়া হয় থেরাপির জন্য।
আইসিএমআর জানাচ্ছে, দাতার থেকে নেওয়া প্লাজমার স্যাম্পেল বহুবার পরীক্ষা করে দেখে নেওয়া হবে পুণের এনআইভিতে। কোভিড ১৯ সারিয়ে সুস্থ হয়ে উঠেছে যে ব্যক্তি তার প্লাজমাকে বলে Convalescent Plasma। এই প্লাজমা আক্রান্তের শরীরে প্রয়োগ করে তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়ানোর যে পদ্ধতি, তাকেই বলে প্লাজমা থেরাপি।
আক্রান্তদের চিকিৎসায় এই থেরাপি প্রয়োগের সিদ্ধান্ত অনেকদিন আগেই নিয়েছে মার্কিন ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন। বিজ্ঞানীরা বলছেন, কোভিড ১৯ সংক্রমণ সারিয়ে সুস্থ হয়ে উঠেছেন যে ব্যক্তি তাঁর রক্তরস ভাইরাস প্রতিরোধী অ্যান্টিবডি তৈরিতে সক্ষম হয়েছে। অর্থাৎ সার্স-কভ-ভাইরাল স্ট্রেনকে আটকাতে যে ধরনের অ্যান্টিবডি দরকার সেটা তৈরি হয়েছে রক্তরসে। কাজেই সেই সুস্থ হয়ে ওঠা ব্যক্তির রক্তরস যদি প্রয়োগ করা যায় আক্রান্তের শরীরে, তাহলে সেই অ্যান্টিবডিকে হাতিয়ার করেই রোগীর দেহকোষ লড়াই চালিয়ে যাবে ভাইরাসের বিরুদ্ধে।
সুস্থ ব্যক্তির রক্তরস দিয়ে আক্রান্তের চিকিৎসাপদ্ধতি নিয়ে গবেষণা চলছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চিন ও ব্রিটেনে। প্লাজমা থেরাপি প্রয়োগের কথা ইতিমধ্যেই ভেবেছে কেরল সরকার। জানানো হয়েছে, ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চের অনুমোদনেই এই প্লাজমা থেরাপি নিয়ে ট্রায়াল শুরু করেছেন কেরলের ডাক্তার ও বিজ্ঞানীরা। সরকারি উদ্যোগে তৈরি হয়েছে বিশেষ টাস্ক ফোর্স। কেরলের ডাক্তাররা বলছেন, প্লাজমা থেরাপির প্রয়োগ কীভাবে হতে পারে তার একটা প্রোটোকলও তৈরি হয়েছে।