২০১৯-এর চেয়েও বেশি আসন নিয়ে ফিরবেন মোদি

অব্যর্থ ভবিষ্যৎবক্তা প্রশান্ত কিশোরের দাবি
দিল্লি, ২১ মে– সাত দফার নির্বাচন চলছে৷ তারসঙ্গেই শেয়ার বাজারে চলথে ওঠানামা৷ একদিকে বিজেপির এনডিএ জোট অন্যদিকে, ইন্ডিয়া জোট৷ দু’পক্ষই দাবি করে চলেছে লোকসভার ফল তাদের পক্ষেই যাবে৷ ভোটকুশলীদের মতে, ভোট চলাকালীন যদি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে কোনও বড়মাপের জনরোষ না হয় তাহলে বিজেপির জয় আটকানো যাবে না৷ যদিও আমজনতা মোদি সরকারের কাজে হতাশ৷ তবুও বিপুল জনাদেশ নিয়েই তৃতীয়বার সরকার গড়বে এনডিএ৷ দেশের উত্তর ও পশ্চিমে বিজেপির ভোট কমার কোনও সম্ভাবনা নেই৷ বরং ওড়িশা, তেলেঙ্গানা, বিহার, তামিলনাড়ু এবং কেরলে বিজেপির আসন বাড়তে পারে৷

ভোটকুশলিদের এই আগামবাণিতেই সহমত পোষণ করলেন ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোর৷ একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে বললেন, ২০১৯ সালের সমসংখ্যক বা তার বেশি আসন জিতবে বিজেপি৷ লোকসভা নির্বাচনের ফলপ্রকাশের আগেই ভবিষ্যদ্বাণী করলেন প্রশান্ত কিশোর৷ বললেন, ২০১৯ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নেতৃত্বে বিজেপি ৩০৩টি আসনে জিতেছিল৷ এ বারও তাদের প্রাপ্ত আসন তার আশপাশেই থাকবে৷ এমনকি, ৩০৩ ছাডি়য়েও যেতে পারে৷ বারবার একই রকম ঘটনা ঘটলে একঘেয়ে লাগে৷ কিন্ত্ত চলতি লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল সেই একঘেয়েই হবে৷ আবারও দেশে সরকার গড়বে এনডিএ৷ তবে এনডিএর আসনসংখ্যা গতবারের তুলনায় বাড়তেও পারে৷ কারণ বিজেপিকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়ার মতো কেউ নেই৷”

উল্লেখ্য, এর আগে, ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং বিজেপির সঙ্গে কাজ করেছিলেন প্রশান্ত কিশোর৷ তবে, ২০১৪-র পর থেকে তাঁকে বিজেপি বিরোধী শিবিরেই দেখা গিয়েছে৷ রাহুল গান্ধির শিবিরের তরফে প্রস্তাব দেওয়া হলেও শেষ পর্যন্ত কংগ্রেসে যোগ দেননি তিনি৷ বিহারে পরিবর্তনের ডাক দিয়ে নয়া দল ‘জন সুরাজ পার্টি’ গড়লেও লোকসভা ভোটে সক্রিয় ভাবে অংশ নেননি ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোর (পিকে)৷ এখন অবশ্য তিনি আর ভোট-কুশলী হিসেবে কাজ করেন না৷ তবে, তাঁর রাজনৈতিক ক্ষেত্রে তাঁর ভবিষ্যদ্বাণী এখনও অব্যর্থ৷


চলতি লোকসভা নির্বাচনে ৩৭০ আসন জয়ের আখ্যান তৈরির জন্য বিজেপিকে কৃতিত্ব দিয়েছেন প্রশান্ত কিশোর৷ পিকের মতে, বিজেপি সুকৌশলে লোকসভায় মোট সংখ্যর আসনের অর্ধেক জয়ের থেকে নির্বাচনী আলোচনা ৩৭০ আসন জয়ে স্থানান্তরিত করেছে৷ তবে এর ফলে, ভবিষ্যতে সমস্যা হতে পারে৷ বিজেপি ৩৭০ আসন জিততে না পারলে হতাশ হতে পারে শেয়ার বাজার৷ প্রশান্ত কিশোর বলেছেন, “কোনও সংস্থার কাছ থেকে প্রত্যাশা খুব বেশি থাকলে, তারা ভাল পারফরম্যান্স করলেও অনেক সময় প্রত্যাশা পূরণ হয় না৷ আর প্রত্যাশা পূরণ করতে না পারলে তাদের শাস্তি দেয় শেয়ার বাজার৷ এই দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে, বিজেপি যদি ৩৭০ আসনের কম পায়, তা একটা আলোচনার বিষয় হয়ে উঠতে পারে৷ তার প্রতিফলন বাজারে দেখা যেতে পারে৷”

তবে, ৩৭০ আসন জয়ের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করাটা বিজেপির অত্যন্ত ‘স্মার্ট পদক্ষেপ’ বলে মনে করেন পিকে৷ তিনি বলেছেন, “গত তিন-চার মাসে, সব আলোচনাই হয়েছে ৩৭০ আসন জয় এবং ৪০০ পারকে কেন্দ্র করে৷ এটাকে আপনি বিজেপির কৌশল বলতে পারেন বা বিরোধীদের দুর্বলতাও বলতে পারেন৷ কিন্ত্ত, বিজেপি গোলপোস্টটাই ২৭২ থেকে ৩৭০-এ সরিয়ে নিয়ে গিয়েছে৷ এতে অবশ্যই লাভ হয়েছে বিজেপির৷ এখন আর কেউ বলছে না মোদিজি হেরে যাবে৷ সবাই বলছে, ওরা হয়তো ৩৭০ আসন পাবে না৷ বিজেপির হেরে যাওয়ার কথা আলোচনাতেই নেই৷”

ইন্ডিয়া জোটের কাজে বেশ হতাশ পিকে৷ সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “জোট হিসাবে লোকসভার ময়দানে নামতে অনেক দেরি করে ফেলেছিল ইন্ডিয়া জোট৷ ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের পর থেকে যেসমস্ত জায়গায় দুর্বল হয়ে পড়েছিল বিজেপি, ইন্ডিয়া জোটের এই দেরি করার ফলে সেখানে আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে গেরুয়া শিবির৷” পিকের মতে, রামমন্দির উদ্বোধনের পর থেকে কার্যত আত্মসমর্পণ করে ফেলেছিল ইন্ডিয়া জোট ৷ তাই বিরোধী জোট যতই চেষ্টা করুক না কেন, তারা জনমানসে দাগ কাটতে পারবে না৷
সম্প্রতি, সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে পিকে দাবি করেন, লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি পশ্চিমবঙ্গের এক নম্বর দল হয়ে উঠতে পারে৷ বিজেপি কয়েক বছরে দক্ষিণ এবং পূর্ব ভারতে তাদের উপস্থিতি প্রসারিত করার জন্য যে কঠোর পরিশ্রম করেছে, তার ফলেই এমনটা হতে পারে বলেই তিনি দাবি করেন৷

২০২১-এর নীলবাডি়র লড়াইয়ের আগে ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরকে বাংলায় নিয়ে আসেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়৷ পারিশ্রমিক নিয়ে তৃণমূলের ভিত মজবুত করার গুরুদায়িত্ব কাঁধে নিয়েছিলেন তিনি৷ অভিষেক-পিকে জুটিই ছিল ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে তৃণমূলের অন্যতম চালিকাশক্তি৷ ২০২১ সালে তৃণমূলের হয়ে ভোটের কৌশল রচনা করার সময় পিকের মন্তব্য ছিল, ভোটবাক্সে বিজেপি তিন অঙ্কের সংখ্যা পেরোলে ভোটকুশলীর পেশা ছেডে় দেবেন তিনি৷ তা নিয়ে বিজেপি নেতৃত্ব বিদ্রুপ করতেও ছাডে়ননি তাঁকে৷ কিন্ত্ত রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের ফলপ্রকাশের পর দেখা যায়, প্রশান্তের কথাই অক্ষরে অক্ষরে ফলে গিয়েছে৷