রাজস্থানের উপমুখ্যমন্ত্রী ও প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শচীন পাইলট ও তাঁর অনুগামী মন্ত্রীদের রবখাস্তের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হলেন তারা। শচীন পাইলট ছাড়াও তার আঠারো অনুগামী হাইকোর্টে বরখাস্তের বিরুদ্ধে আবেদন জানিয়েছেন।
উপমুখ্যমন্ত্রী শচীন পাইলট ও অন্য আঠারোজন মন্ত্রীকে বরখাস্তের নোটিশ পাঠিয়েছেন রাজস্থান বিধানসভার অধ্যক্ষ সিপি যোশি। কংগ্রেস দলের পক্ষে বরখাস্তের দাবি জানানো হয়। নোটিশকে চ্যালেঞ্জ করে পাইলট ও তাঁর অনুগামীরা আদালতের দ্বারস্থ হন।
মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট বিক্ষুব্ধ কংগ্রেস নেতা শচীন পাইলটকে উপমুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে দেন। তার কিছুক্ষণের মধ্যেই কংগ্রেস সভাপতির পদও চলে যায় তাঁর। চব্বিশ ঘন্টা আগেও কংগ্রেসের মুখপাত্র সুর্যেওয়ালা বলেন, ঘরের ছেলের জন্য দরজা খোলা, তাকেই এবার সরকার ফেলে দেওয়ার ষড়যন্ত্রকারী বলে সরিয়ে দেওয়া হল। যদিও তাকে এখনও দল থেকে বহিস্কৃত করা হয়নি।
রাজনৈতিক মহল মনে করছে এর পিছনে দুটি কারণ থাকতে পারে। প্রথমত শচীন ও তাঁর অনুগামীদের ওপর চাপ সৃষ্টি করা, দ্বিতীয়ত তাঁরা নিজে থেকে দল ছাড়লে দলবদল বিরোধী আইনের ধারা অনুসারে তাঁদের বহিষ্কার করা। সে ক্ষেত্রে কংগ্রেসের সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণে সুবিধা হবে।
এদিকে পদ খোয়ানোর পরই শচীন টুইট করে জানান, সত্যকে হয়রান করা যায়, কিন্তু হারানো যায় না। কাজেই তিনি যে রণে ভঙ্গ দিচ্ছেন না, সেটা সেদিনই বুঝিয়ে দিয়েছিলেন। এরপর টিম পাইলট আদালতের দ্বারস্থ হল। শচীন পাইলটের হয়ে হরিশ সালভে ও মুকুল রোহতগি এবং রাজস্থানের অধ্যক্ষের হয়ে সওয়াল করছেন অভিষেক মনু সিংভি।
এদিনও শচীন ক্ষোভ উগড়ে দিয়ে বলেন, তাঁকে আত্মসম্মান নিয়ে কাজ করতে দেওয়া হয়নি। তিনি জানান, পাঁচ বছর বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করে কংগ্রেস সরকার গঠন করেছি। সেই বিজেপিতে যোগ দেওয়ার কোনও প্রশ্নই ওঠে না। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে যদি বিজেপির দিকে তিনি ঝুঁকে না থাকেন তবে অনুগামীদের নিয়ে হরিয়ানার মানেসরের রিসর্টে বসে থাকার কারণ কি?
এই প্রশ্ন তুলে কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সুর্যেওয়ালা বুধবার সাংবাদিক বৈঠকে জানান, হরিয়ানার বিজেপি সরকারের আতিথেয়তা ছেড়ে জয়পুরে ফিরে নিজের বক্তব্যের প্রমাণ দিন শচীন। কিন্তু রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট কড়া ভাষায় শচীনের সমালোচনা করে জানান, ভাল ইংরেজি বলা, মণীষীদের কথা উদ্ধৃত করা বা সুপুরুষ হওয়াই সব নয়। দেশের জন্য তোমার ভাবনা, মতাদর্শ, নীতি, দায়বদ্ধতাই আসল।
ঘোড়া কেনাবেচার প্রমাণ আমাদের কাছে রয়েছে। আর যিনি বলছেন কিছুই হয়নি, তিনি নিজেই এই ষড়যন্ত্রের অংশ। আমাদের উপ-উপমুখ্যমন্ত্রী ও প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি নিজে ঘোড়া কেনাবেচার চুক্তি করেছেন, আর এখন বলছেন কোনও কেনাবেচা হয়নি।
কিন্তু কংগ্রেস হাইকমান্ড চাইছেন শচীনকে আবার ঘরে ফেরাতে। তাই রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলটকে পরবর্তী কোনও মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে দলের পক্ষে। তাঁর বিরুদ্ধে বুধবার সাংবাদিক বৈঠক করে কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালা বলেন, সচিন যদি নিজের কথার সত্যতা প্রমাণ করতে চান তাহলে তাঁকে মানেসরের রিসর্টে বিজেপি আতিথেয়তা ছেড়ে জয়পুরে ফিরে গিয়ে নিজের বক্তব্যের প্রমাণ দিতে হবে। কংগ্রেসের দরজা তাঁর জন্য খোলা আছে।
যদিও সুরজেওয়ালার আগেই সাংবাদিক সম্মেলন করে সচিনকে এক হাত নেন অশোক গেহলট। কিন্তু সচিনের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে তাঁকে ঘরে ফেরাতেই ইচ্ছুক কংগ্রেস হাইকম্যান্ড। তাই, পাইলটকে আর না চটিয়ে রফার খোঁজে রয়েছে কংগ্রেস। একই সঙ্গে গেহলটকে দল জানিয়ে দিয়েছে, দলের তরফে সবুজ সংকেত না দেওয়া পর্যন্ত গেহলট যেন আর কোনও মন্তব্য না করেন।