জম্মু ও কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা প্রত্যাহারের পর কেটে গিয়েছে সাতষট্টি দিন। ধীরে ধীরে জম্মু ও কাশ্মীরের থেকে তুলে নেওয়া হচ্ছে সরকারি সব বিধিনিষেধ। ফলে সীমান্ত সংঘর্ষ সহ রাজনৈতিক উত্তেজক পরিস্থিতি কাটিয়ে ক্রমশ ছন্দে ফিরছে উপত্যকা। আর উপত্যকাবাসীর স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাওয়াতে খুশি কাশ্মীর প্রশাসন।
জানা গিয়েছে, সােমবার একটি সরকারি বৈঠকে কাশ্মীর প্রসঙ্গ নিয়ে কথা উঠলে রাজ্যপাল সত্যপাল মালিক জানিয়েছেন, বর্তমানে জম্মু ও কাশ্মীরের পরিস্থিতি ক্রমশ স্বাভাবিকের দিকে এগােচ্ছে। আতঙ্ক কাটিয়ে ধীরে ধীরে কাশ্মীরের মানুষ ঘর থেকে বেরনাে শুরু করেছে।
রাজ্যপাল আরও জানিয়েছেন, বর্তমানে জম্মু ও কাশ্মীরের ছেলেমেয়েরা কোনও রকম বিধিনিষেধ ছাড়াই মােবাইল ফোন বাবহার করতে পারছে। এমনকী, এতদিন ধরে যে আতঙ্কের পরিবেশ ছিল গােটা জম্মু ও কাশ্মীর জুড়ে তা কাটিয়ে তারা এখন কোনও রকম ভয়ডর ছাড়াই একে অন্যের সঙ্গে মােবাইলের মাধ্যমে যােগাযােগ করতে পারছে।
সােমবার জম্মু ও কাশ্মীরের কাঠুয়া জেলায় একটি অনুষ্ঠানে যােগ দিতে আসেন রাজ্যপাল সত্যপাল মালিক। এদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে তিনি আরও জানিয়েছেন, বর্তমানে স্বাভাবিকের দিকে এগােচ্ছে উপত্যকার পরিস্থিতি। ফলে এখন মােবাইল পরিষেবা চালু করে দেওয়া হলেও খুব শীঘ্রই এখানে ইন্টারনেট সংযােগ পুনরায় চুল করে দেওয়া হবে।
উপত্যকায় মােবাইল এবং ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধের ব্যাপারে রাজ্যপাল জানান, কাশ্মীরে জনসংযােগের মাধ্যম হিসেবে মােবাইল ইন্টারনেট পরিষেবার থেকেও আমাদের কাছে বেশি জরুরি কাশ্মীরবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। তাই কাশ্মীরে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখেই এতদিন ধরে সেখানে জনসংযােগের মাধ্যম বন্ধ করে রাখা হয়েছিল।
পাশাপাশি তিনি বলেন, গত দু’মাসে উপত্যকার কোথাও একটা গুলি চালানাের ঘটনা ঘটেনি। এমনকী, ৩৭০ ধারা প্রত্যাহারের পর জম্মু ও কাশ্মীরের কোথাও সাধারণ মানুষের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি। গত আড়াই মাসেরও বেশি সময় ধরে উপত্যকার পরিবেশ শান্ত এবং কাশ্মীরবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দেশের সেনাবাহিনী অসাধারণ কাজ করেছে। নিজেদের জীবন বিপন্ন করে কাশ্মীরবাসীর নিরাপত্তার ব্যাপারে সদা সচেষ্ট সীমান্তে কর্মরত জওয়ানদেরও তিনি এদিন কুর্নিশ জানিয়েছেন।
তিনি আরও জানিয়েছেন, কাশ্মীরবাসীর নিরাপত্তা ও উপত্যকার পরিস্থিতির দিকে সব সময়ে নজর রাখায় প্রধানমন্ত্রী তাঁকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর এই অভিনন্দন তাঁর প্রাপ্য নয়, এই অভিনন্দন সীমান্তে কর্মরত জওয়ান ও কাশ্মীরবাসীর প্রাপ্য। কারণ সেনা জওয়ানদের বিভিন্ন পদক্ষেপ এবং কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ম কানুন কাশ্মীরবাসী সঠিকভাবে মেনে চলায় আজ এই সাফল্য সম্ভব হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত আগস্ট মাসের ৫ তারিখ কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে জম্মু ও কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা তুলে নেওয়া হয়। জঙ্গি কার্যকলাপ এড়াতে এবং জম্মু ও কাশ্মীরের বাসিন্দাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারের তরফে উপত্যকায় জনসংযােগের সবরকম মাধ্যম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। টানা আড়াই মাস উপত্যকার জনজীবন স্তব্ধ থাকার পর ধীরে ধীরে শিথিল করে দেওয়া হয় বিভিন্ন নিয়মকানুন।
জানা গিয়েছে, টানা ৭০ দিন যােগাযােগের সমস্ত মাধ্যম বন্ধ থাকার পর গত সােমবার থেকে উপত্যকায় বিএসএনএল’এর মােবাইল পরিষেবা চালু করে দেওয়া হয়। এছাড়াও গত সােমবার সরকারের তরফে ঘােষণা করা হয়েছিল যে, উপত্যকায় পােস্টপেইড মােবাইল ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় চল্লিশ লাখ। যদিও সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, উপত্যকায় এখনও পর্যন্ত ইন্টারনেট পরিষেবা চালু করা হয়নি। তবে খুব শীঘ্রই চালু করা হবে বলে জানা গিয়েছে।