সুরটা যে বাঁধাই ছিল রবিবারই তা বোঝা যাচ্ছিল। আদানি থেকে মনিপুর- সব ইস্যুতেই সরকারকে চেপে ধরবে বিরোধী দলগুলি। সোমবার সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে এরই প্রতিফলন দেখা গেল। এদিন অধিবেশন শুরু হতেই আদানি ইস্যুতে আলোচনা চেয়ে হইচই বাঁধান বিরোধীরা। তার জেরে প্রথমে একঘণ্টার জন্য লোকসভার অধিবেশন মুলতুবি রাখা হয়। পরে জানা যায়, আগামী ২৭ নভেম্বর পর্যন্ত মুলতুবি থাকবে সংসদের উচ্চকক্ষের অধিবেশন। মুলতুবি হয়ে যায় রাজ্যসভাও।
সোমবার শীতকালীন অধিবেশন শুরুর আগে সংসদ চত্বরে দাঁড়িয়ে দেশবাসীর উদ্দেশে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ভাষণের শুরুতে ফের কংগ্রেস-সহ বিরোধী দলগুলিকে নিশানা করলেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘২০২৪ সালে এটাই সংসদের শেষ অধিবেশন।’ সব সাংসদকে এই অধিবেশনে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। তার পরেই প্রথমে নাম না-করে, তার পর নাম করেই বিরোধীদের তোপ দাগেন মোদী। বলেন, ‘সংসদে সাংসদদের বলার অধিকার কেড়ে নিচ্ছেন কয়েক জন। এঁরাই সংসদে হাঙ্গামা বাধাচ্ছেন। ফলে বলার সুযোগ পাচ্ছেন না নতুন সাংসদেরা। সংসদের নিয়ন্ত্রণ এই সাংসদেরা হাতে নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন।’ নাম না-করলেও স্পষ্ট যে, মোদী বিরোধী সাংসদদের দিকেই ইঙ্গিত করতে চেয়েছেন।
নিজের ভাষণে মোদী অবশ্য বিরোধী সাংসদদের একাংশের প্রশংসাও করেছেন। এদিন তিনি বলেন, ‘বিরোধী সাংসদদের কেউ কেউ সংসদে দায়িত্বশীল আচরণ করেন। তাঁরা চান সংসদের কাজ মসৃণ ভাবে পরিচালিত হোক। কিন্তু যাঁরা মানুষের দ্বারা বার বার প্রত্যাখ্যাত, তাঁরা সঙ্গীদের বক্তব্যও উপেক্ষা করেন।’ মনে করা হচ্ছে, এই মন্তব্য করে বিরোধী জোটে ফাটল ধরাতে চেয়েছেন মোদী।
মোদীর এই ভাষণের পরেই অধিবেশনের প্রথম দিনেই আদানি ইস্যুতে আলোচনা চেয়ে সংসদে সুর চড়ান বিরোধী দলের সাংসদরা। স্লোগান দিতে থাকেন তাঁরা। তার পরেই সারাদিনের জন্য মুলতুবি হয়ে যায় সংসদের দুই কক্ষের অধিবেশন। আগামীকাল সংবিধান দিবস উপলক্ষে বিশেষ যৌথ অধিবেশনে বসবে সংসদের দুই কক্ষ। ফলে আলাদা করে দুই কক্ষে অধিবেশন হবে না। বুধবার সকাল ১১টার সময়ে ফের অধিবেশন শুরু হবে লোকসভা এবং রাজ্যসভায়।
এখনও পর্যন্ত সরকারপক্ষের যা সিদ্ধান্ত, তাতে ১৫টি বিল আনা হতে পারে লোকসভার চলতি অধিবেশনে। যদিও সব চেয়ে বেশি উত্তাপ ছড়াবে ওয়াকফ আইন সংশোধনী বিল। ওয়াকফ বা মণিপুরের মতো বিষয় থাকলেও, অধিবেশনের শুরু থেকে বিরোধীরা বেশি চাপ তৈরি করতে চলেছেন আদানির ‘ঘুষকাণ্ড’ নিয়েই।