নিট ইস্যুতে উত্তাল সংসদ,  ১ জুলাই পর্যন্ত সংসদের দুই অধিবেশনই মুলতুবি

Written by SNS June 29, 2024 9:29 am

দিল্লি, ২৮ জুন – সংসদ অধিবেশনের পঞ্চম দিন নিট ইস্যুতে আলোচনা চেয়ে উত্তাল হল সংসদ।  সংসদের দুই কক্ষেই শুক্রবার সকাল থেকে সরব হন বিরোধীরা। পরীক্ষায় অনিয়মের অভিযোগে সংসদে বিরোধীদের চাপের মুখে পড়ে মোদি  সরকার . হট্টগোলের মধ্যে দুপুর ১২টা পর্যন্ত অধিবেশন মুলতুবি করে দেন স্পিকার ওম বিড়লা। পরে অধিবেশন শুরু হলে ফের বিক্ষোভ দেখান বিরোধীরা। বাধ্য হয়ে গোটা দিনের জন্যই অধিবেশন মুলতুবি করে দেওয়া হয়।  এদিকে নিট  নিয়ে বলতে গেলে রাহুল গান্ধির মাইক মিউট করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ তোলে কংগ্রেস। যদিও ওম বিড়লার পালটা দাবি, তাঁর কাছে কোনও স্যুইচ থাকে না। এই   হৈ হট্টগোলের মাঝেই হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ ফুলো দেবী। সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েন কক্ষের মধ্যেই। তাঁকে র্যাম মনোহর লোহিয়া হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। 

 
বিরোধীদের দাবি, এই মুহূর্তে দেশের সবচেয়ে জ্বলন্ত ইস্যু নিট পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস কেলেঙ্কারি। এর সঙ্গে জড়িয়ে পড়ুয়াদের ভবিষ্যৎ। ফলে অন্য সব অ্যাজেন্ডার আগে নিট ইস্যুতে সংসদে আলোচনা প্রয়োজন । সরকার পক্ষ তা মানতে না চাওয়ায় শেষ পর্যন্ত বিক্ষোভ শুরু করে ইন্ডিয়া জোট। এদিন নিট ইস্যুতে সংসদের দুই কক্ষেই মুলতুবি প্রস্তাব আনা হয় বিরোধী সাংসদদের পক্ষ থেকে।এদিন রাহুল গান্ধি  বলেন, ‘বিরোধীরা চাইছিল দেশের যুবসমাজের উদ্দেশে সরকার এবং বিরোধীদের একটি যুগ্ম বার্তা যাক। কিন্তু, নরেন্দ্র মোদির সরকার সেটা চায়নি।’ এমনকী নিট নিয়ে বলতে গেলে রাহুলের মাইক বন্ধ করে দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ কংগ্রেসের।
প্রথমে নিজেদের মধ্যে বৈঠকে বসে ইন্ডিয়া জোটের শীর্ষ নেতারা। বৃহস্পতিবার কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গের বাসভবনে ইন্ডিয়া জোটের বৈঠক হয়। হাজির ছিলেন লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধি । তৃণমূলের প্রতিনিধি হিসাবে বৈঠকে যোগ দেন ডেরেক ও’ব্রায়েন এবং কাকলি ঘোষ দস্তিদার।  ডেরেক ও’ব্রায়েন জানিয়ে দিয়েছিলেন, ‘আজ ইন্ডিয়া জোটের সাংসদরা ২৪ লাখ প্রতারিত পড়ুয়ার কণ্ঠস্বর প্রতিধ্বনিত করবে লোকসভায়। সেইমতো জোটের তরফে একাধিক সাংসদ সংসদের দুই কক্ষেই নিট নিয়ে মুলতুবি প্রস্তাব আনা হবে।’ কিন্তু, স্পিকার ওম বিড়লা জানিয়ে দেন, রাষ্ট্রপতির ভাষণ নিয়ে আলোচনার আগে মুলতুবি প্রস্তাব গ্রহণ করা যাবে না। একইসঙ্গে নিট নিয়ে আলোচনার দাবিও খারিজ করে দেন তিনি। স্পিকারের বক্তব্য, রাষ্ট্রপতির ভাষণ নিয়ে আলোচনা চলাকালীনও নিট ইস্যুতে নিজেদের বক্তব্য জানাতে পারেন বিরোধীরা। তবে বিরোধী শিবির শুধুমাত্র নিট ইস্যুতে আলোচনার দাবিতে অনড় ছিল।
বিরোধীদের ভূমিকায় অসন্তোষ প্রকাশ করেন উপ-রাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনকর।  তিনি বলেন, ‘বিরোধী সাংসদদের এই আচরণে আমি ব্যথিত ও হতাশ। বিশেষ করে মল্লিকার্জুন খাড়গের ভূমিকায় আমি হতাশ।  তাঁর সংসদীয় রাজনীতির অভিজ্ঞতা কয়েক দশকের।  তাঁর অনেক দায়িত্ব, এবং তিনি সে সম্পর্কে অবগত।’
এদিকে রাজ্যসভা অধিবেশনের মাঝে সাংসদের জ্ঞান হারানোর খবরে হইচই পড়ে যায়। দ্রুত ফুলো দেবীকে রাম মনোহর লোহিয়া হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। স্ট্রেচারে শুইয়ে ফুলো দেবীকে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় রাজ্যসভা থেকে বের করে অ্যাম্বুল্যান্সে তোলা হয়।
দলের নেতা জয়রাম রমেশ এক্স হ্যান্ডেলে গোটা ঘটনাটি জানিয়ে একটি পোস্ট করেন। তিনি লেখেন, ‘নিট, ইউজিসি-নেট  এবং অন্যান্য দুর্নীতি ইস্যুতে অবিলম্বে চর্চা চেয়ে সরব হয়েছিল বিরোধী শিবির। রাজসভায় সেই বিক্ষোভ, হট্টগোলের মাঝে আচমকাই কংগ্রেস সাংসদ ফুলো দেবী অসুস্থ হয়ে পড়েন। সংজ্ঞাহীন হয়ে নিজের আসন থেকে পড়ে যান তিনি। তাঁকে রাম মনোহর লোহিয়া হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।  আশা করব উনি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন।’
অসুস্থতার আগে সাংসদ ফুলো দেবী সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট করেছিলেন। তিনি লেখেন, ‘একদিকে যখন নরেন্দ্র মোদি  নিট ইস্যুতে নিশ্চিত তখন রাহুল গান্ধি যুব সম্প্রদায়ের হয়ে সংসদে সরব হচ্ছেন। তবে তাঁর মাইক অফ করার মতো ঘটনা যুব সম্প্রদায়ের কণ্ঠরোধের সমান।’
প্রসঙ্গত, গত বছর সংসদে হৈচৈ  করা এবং অপশব্দ প্রয়োগ করার অভিযোগে যে ১২ জন রাজ্যসভা সাংসদকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল তাঁদের মধ্যে  ফুলো দেবীও ছিলেন।
এদিন নিট ইস্যুতে হট্টগোল হয় রাজ্যসভাতেও। প্রশ্নফাঁসকাণ্ডে কংগ্রেস সদস্য সৈয়দ নাসির হুসেন ২৬৭ বিধি অনুযায়ী নিট নিয়ে সাসপেনশন অফ বিজনেস নোটিস আনেন। কংগ্রেস ছাড়া আম আদমি পার্টির সাংসদ সঞ্জয় সিংও রাজ্যসভায় নিট বিতর্ক নিয়ে আলোচনার দাবি তোলেন। আগামী ১ জুলাই পর্যন্ত সংসদের দুই অধিবেশনই মুলতুবি করে দেওয়া হয়েছে। সংসদীয় বিষয়ক মন্ত্রী কিরেণ রিজিজু জানিয়েছেন, যথাসময়ে নিট নিয়ে সংসদে আলোচনা হবে।