কাশ্মীর প্রসঙ্গে রাষ্ট্রসংঘের মানবাধিকার কমিশনে পাকিস্তানের যাবতীয় অভিযােগ উড়িয়ে দিল ভারত। পাকিস্তানের অভিযােগগুলিকে ভারত এদিন মিথ্যার বেসাতি এবং বানানাে অভিযােগ বলে খারিজ করে দিয়ে বলেছে, গােটা বিশ্ব জানে এধরণের বানানাে ও মনগড়া অভিযােগ এমন একটা দেশ থেকে আসছে। যে দেশ বিশ্ব সন্ত্রাসবাদের আতুড় ঘর, এবং যেখানে সন্ত্রাসের পান্ডারা অনায়াসেই দিনের পর দিন নিরাপদ আশ্রয় পেয়ে থাকে।
নাম না করেই পাকিস্তানের উদ্দেশ্যে ভারতের রাষ্ট্রসংঘের প্রতিনিধি বিজয় ঠাকুর সিং বলেন, যারা সীমান্তের ওপার থেকে সন্ত্রাসবাদ রফতানি করছে তারা সন্ত্রাসবাদকে কূটনীতির অঙ্গ বলে মনে করে। ভারতের প্রতিনিধি আরও বলেন, তাদের পাকিস্তান) নিয়ন্ত্রণে থাকা এলাকায় তারা সবচেয়ে বেশি মানবাধিকার লঙ্ঘনের দোষে দুষ্ট।
পাকিস্তানের সমালােচনা করে বলা হয়, তারা এই মঞ্চকে অপব্যবহার করে মানবাধিকারের আড়ালে আসলে নিজেদের ঘূণ্য রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে চাইছে। যারা আজ বলছে মানবাধিকার বিপন্ন, তারাই মানবাধিকারের সবচেয়ে বড় হন্তা।
পাশাপাশি ভারতের প্রতিনিধি জানিয়ে দেন জম্মু ও কাশ্মীর ইস্য একান্তভাবে ভারতের অভন্তরীণ বিষয়। তিনি বলেন, বৈষম্য ঘােচাতে (জম্মু ও কাশ্মীরে) এটি সংসদীয় সিদ্ধান্ত। প্রসঙ্গত, ভারত বরাবরই বলে এসেছে এটি একান্ত অভ্যন্তরীণ বিষয়, আন্তর্জাতিক মহলেও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে জম্মু ও কাশ্মীরে ‘স্পেশাল স্ট্যাটাস’ তুলে নেওয়াটা একান্তই ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। অধিকাংশ দেশই ভারতের এই দাবি মেনে নিয়েছে।
এর আগে রাষ্ট্রসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে বলতে উঠে পাকিস্তানের তরফে বলা হয়, ভারত সরকার জম্মু ও কাশ্মীরে বিশেষ অধিকার খর্ব করার পর সেখানে যে মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে সে ব্যাপারে বিশ্বের বিবেক নিশ্চুপ দর্শক থাকতে পারে না। আজ আমরা মানবাধিকার কাউন্সিলের দরজা নেড়েছি, যাতে কাশ্মীরের মানুষ ন্যায়বিচার পেতে পারেন বলে মন্তব্য করলেন পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কুরেশি, যিনি তাঁর দেশের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
শাহ আরও বলেন, এই মহান কাউন্সিলে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসাবে মনে করে যে, বিশ্ব কাশ্মীরের ঘটনাবলীর প্রতি উদাসীন থাকতে পারে না। আমাদের কিছু বিশ্বাসযােগ্য পদক্ষেপ করতে হবে। কুরেশি এও বলেন, কাউন্সিলের উচিত ভারতকে রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব অনুযায়ী দায়িত্ব পালনে বাধ্য করা। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী রাষ্ট্রসংঘ তদন্তের স্বার্থে একটি কমিশন গঠন করুন, যারা বিনা বাধায় কাশ্মীরে গিয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা চাক্ষুষ করতে পারে। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমকেও কাশ্মীরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হােক।
পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রী আরও জানান, কাশ্মীরিদের নুন্যতম মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত করার ঘটনা ঘটছে, সেখানে দোকান ও হাসপাতালগুলিতে প্রয়ােজনীয় সরঞ্জাম নেই, এমনকি কাশ্মীরে রাজনৈতিক নেতাদেরও হয় গৃহবন্দি, নয় জেলে আটক রাখা হয়েছে। তিনি আরও জানান, ভারত যা করছে সেটা আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের নীতিগুলির পরিপন্থী।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, গত ৫ আগস্ট একতরফা ভাবে ভারত যে কাশ্মীরে ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করেছে সেটা তারা করতে পারে না, কারণ এটি আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী। প্রসঙ্গত, একদিন আগেই রাষ্ট্রসংঘের মানবাধিকারের শীর্ষ আধিকারিক মিশেল ব্যাসেলেট, কাশ্মীরে বিভিন্ন ধরণের প্রতিবন্ধকতার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছিলেন, ভারত যেন এই ধরণের প্রতিবন্ধকতা তুলে নেয়, যাতে সাধারণ মানুষ তাদের প্রাথমিক প্রয়ােজনীয় পরিষেবা পেতে পারেন।