২৬ অগাস্ট পর্যন্ত হেফাজতে পি চিদম্বরম

P Chidambaram (File Photo: IANS)

আইএনএক্স দুর্নীতি মামলায় ৫ দিনের সিবিআই হেফাজতের নির্দেশ দিল সিবিআই আদালত। ২৬ আগস্ট পর্যন্ত প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে সিবিআই হেফাজতে থাকতে হবে। সেই সঙ্গে আদালত জানিয়েছে, পরিবারের সদস্যরা এবং তাঁর আইনজীবী দিনের মধ্যে আধ ঘন্টা দেখা করার সুযােগ পাবেন। জেরার সময় পি চিদম্বরমের সম্মানহানি যাতে না হয় সেদিকেও নজর রাখার নির্দেশ দিয়েছে সিবিআই আদালতের বিচারক। 

বৃহস্পতিবার সিবিআই আদালতে তােলা হয় পি চিদম্বরমকে। সিবিআই আইনজীবী সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহেতা সওয়াল করার সময় পি চিদম্বরমকে সিবিআই হেফাজতে রাখার উপর জোর দেন। তিনি জানান, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী তদন্তে সাহায্য করছেন না। প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে চুপ করে থাকার সাংবিধানিক অধিকার ওনার আছে। কিন্তু প্রশ্ন করলে ঘুরিয়ে উত্তর দিচ্ছেন। 

পি চিদম্বরমের আইনজীবী কপিল সিব্বল সিবিআই আইনজীবীর অভিযােগের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযােগ করেন। সওয়াল করার সময় আদালতকে তিনি জানান, এই মামলায় অভিযুক্ত সবাই এখন জামিনে রয়েছেন। মূল অভিযুক্ত কার্তি চিদম্বরম, আইএনএক্স মিডিয়ার কর্ণধার পিটার মুখােপাধ্যায় ও ইন্দ্রাণী মুখোপাধ্যায় জামিন পেয়েছেন। চিদম্বরমের ক্ষেত্রে গ্রেফতারির কী প্রয়ােজন ছিল সে বিষয়ে সওয়াল করেন সিব্বল। সেই সঙ্গে আদালতকে তিনি বলেন, ‘আইএনএক্স মিডিয়াকে বিদেশি লগ্নিা পাইয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত শুধ চিদম্বরমের একার ছিল না’। ফরেন ইনভেস্টমেন্ট প্রমােশন বাের্ডের প্রধান এই সিদ্ধান্ত নেয়। তিনি এই বাের্ডের প্রধান হলেও আরও ৬ সচিবের ভূমিকা রয়েছে। কিন্তু তাদের গ্রেফতার করা হয়নি। 


কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমকে যেকোনও সময় গ্রেফতার করা হবে তা মােটামুটি জানাই ছিল। ঘটনাপ্রবাহ এগােচ্ছিলও সেই পথেই। শেষ পর্যন্ত গতকাল অধিক রাতে তাঁর পুরনাে দিল্লির বাড়ির পাঁচিল টপকে গ্রেফতার করে সিবিআইর একটি বিশেষ দল। তবে এই গ্রেফতারের পিছনে বর্তমান কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ রয়েছেন কি না সে বিষয়ে প্রশ্ন উঠছে। 

সে সময় আদালতের নির্দেশে গুজরাতে ঢুকতে পারতেন না অমিত শাহ। রাজনীতির অলিন্দে অনেকেই গতকালের চিদম্বরমের গ্রেফতারির সঙ্গে মিল পাচ্ছেন ২০১০ সালের ঘটনার। কংগ্রেসের অন্দরেও সেই একই বক্তব্য– অমিত শাহ তাহলে এবার বদলা নিলেন। 

চিদম্বরমের আইনজীবী, সঙ্গী ও কংগ্রেস নেতা সলমন খুরশিদ বলেছেন, এ ব্যাপারে আমি কিছুই বলব না। কিন্তু চিদম্বরমের ভাবমূর্তি একেবারে পরিষ্কার। চিদম্বরমের ছেলে কার্তি চিদম্বরম (যাকেও এই মামলায় কিছুদিন কারাগারে কাটাতে হয়েছে) বলেছেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করলেন অমিত। গতকাল সারারাত তাঁর উদ্বোধন করা সিবিআই দফতরে রাত কাটানাের পর এদিন সকাল থেকেই পি চিদম্বরমকে সিবিআই আদালতে তােলার তৎপরতা শুরু করে কেন্দ্রীয় গােয়েন্দা সংস্থা।

বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই পি চিদম্বরমকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন সিবিআই অফিসাররা। দুপুরে তাঁকে সিবিআই দফতরে নিয়ে গিয়ে অন্তত ১৪ দিনের হেফাজত চেয়েছে বলেও জানা গিয়েছে। হেফাজতে নিয়ে প্রাক্তন অর্থমন্ত্রীকে জেরা করার পরিকল্পনা রয়েছে সিবিআইয়ের। এদিকে প্রতিহিংসাবশত চিদম্বরমকে গ্রেফতারের বিরুদ্ধে আজ সকাল থেকেই দিল্লিতে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ শুরু করেছেন কংগ্রেস সহ বিরােধী নেতারা। 

নাটকীয়ভাবে দেশের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমকে গতকাল রাতে গ্রেফতার করেছে সিবিআই। আইএনএক্স মিডিয়ার পুরনাে মামলায় বুধবার অনেক রাতে তাঁকে দিল্লির বাসবভন থেকে ধরে নিয়ে যান সিবিআই অফিসাররা। সিবিঅঅই দফতরে নিয়ে এসে তাঁকে সরকারিভাবে গ্রেফতার করা হয়। বিক্ষোভ হতে পারে এই আশঙ্কায় সিবিআই দফতরের বাইরের নিরাপত্তাও বাড়িয়ে দেওয়া হয়। তিনি যে গ্রেফতার হতে চলেছেন, তার ইঙ্গিত মিলেছিল গতকালই। সুপ্রিম কোর্টে তাঁর আগাম জামিনের আবেদনের জরুরি শুনানি হয়নি। মঙ্গলবার চিদম্বরমের আগাম জামিনের আর্জি খারিজ হয়ে গিয়েছিল দিল্লি হাইকোর্টে। গতকাল সুপ্রিম কোর্টে জরুরি শুনানি শুরুর আবেদন জানান কপিল সিব্বল। 

বিচারপতি এনভি রামানা, এম সান্তনাগৌরদার এবং অজয় রাস্তোগির আদালতে এই আবেদন শােনা হয়। তবে এই আবেদনের জরুরি ভিত্তিতে শুনানির জন্য তালিকায় না থাকায় শুনানি শুরু করা যাবে না বলে জানিয়ে দেন বিচারপতিরা। আবেদনে বিশেষ ত্রুটি থাকায় তা নিয়েও আলােচনা হয়নি। পরে রেজিস্টার জানান প্রধান বিচারপতি শুক্রবার এই মামলার শুনানির দিন ধার্য করেছেন। 

সুপ্রিম কোর্টে আগাম জামিনের কোনাে ফয়সালা না হলেও গতকাল আচমকা কংগ্রেস দফতরে হাজির হন চিদম্বরম। সেখানে এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি এই মামলা নিয়ে বক্তব্য তুলে ধরেন। নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করে তিনি বলেন, আমি আইনকে শ্রদ্ধা করি, আমি আইন মেনে চলি। এই তদন্তে আমি গােয়েন্দা সংস্থাকে সাহায্য করছি। তবু বলা হচ্ছে আমি লুকিয়ে বেড়াচ্ছি। পালিয়ে বেড়াচ্ছি। তা যে ঠিক নয়, তা প্রমাণ করতেই আমি সাংবাদিক সম্মেলন করেই আমার বক্তব্য জানাতে এসেছি। আমি আশা করছি আগামী শুক্রবার ও তার পরে সত্য প্রকাশ পাবে। আমাদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষা পাবে। 

রাতে সিবিআই ও ইডি কর্তারা চিদম্বরমের জোড়বাগের বাড়িতে যান। ইডি’র অফিসাররা সরে এলেও সিবিআই গােয়েন্দারা নাটকীয়ভাবে দেওয়াল টপকে ভেতরে ঢােকেন। এই অভিযানকে যতটা সম্ভব চাঞ্চল্যকর করে তােলার চেষ্টা ছিল তাদের। বাড়ির ভেতর থেকেই নিয়ে যাওয়া হয় চিদম্বরমকে। কংগ্রেস কর্মীরা বিক্ষোভ দেখালেও তা হঠাতে বিশেষ অসুবিধে হয়নি। 

পি চিদম্বরমের বিরুদ্ধে অভিযােগ, কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী থাকাকালীন ২০০৭ সালে বিদেশ থেকে ৩০৫ কোটি টাকার তহবিল পাওয়ার জন্য আইএনএক্স মিডিয়াকে ছাড়পত্র দিয়েছিলেন তিনি। বিনিময়ে তাঁর ছেলে কার্তি চিদম্বরমের সংস্থাকে বিরাট অঙ্কের ঘুষ দেয় আইএনএক্স মিডিয়া। ২০১৭ সালে কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা সিবিআই একটি এফআইআর দায়ের করে তাঁর বিরুদ্ধে। প্রাক্তন মিডিয়া ব্যারন পিটার মুখােপাধ্যায়ের স্ত্রী ইন্দ্রাণী মুখােপাধ্যায়ের বয়ানের ভিত্তিতেই পি চিদম্বরম এবং কার্তি চিদম্বরমের বিরুদ্ধে মামলাটি সাজানাে হয়েছে। বর্তমানে মেয়ে শিনা বােরাকে হত্যার অভিযােগে জেলে আছেন ইন্দ্রাণী। যদিও পি চিদম্বরমের বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযােগ অস্বীকার করে গােটা বিষয়টিকে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র হিসেবে অভিহিত করেছেন কার্তি চিদম্বরম।