হবে কি হবে না, এই নিয়ে ধন্দ তো ছিলই, ছিল প্রবল বিরোধিতা। সেই আবহে সোমবার সংসদে পেশ করার কথা থাকলেও মঙ্গলবার পেশ করা হল ‘এক দেশ এক ভোট’ বিল। বিল পেশের সময় তুমুল বিক্ষোভ দেখান ‘ইন্ডিয়া’ জোটের সংসদরা। এই বিল নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে একহাত নিলেন তৃণমূল সাংসদরা। তাঁদের অভিযোগ, সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকার কেড়ে নেবে, সেই সঙ্গে দেশের গণতন্ত্র এবং সংবিধানের ওপর সরাসরি আঘাত আনবে এই বিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিরোধীদের কোনও আপত্তিই ধোপে টিকলো না। ভোটাভুটিতে বিলের পক্ষে ভোট দিলেন সরকার পক্ষের ২৬৯ জন সাংসদ। বিপক্ষে ১৯৮ জন। এরপর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের পরামর্শে কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী অর্জুনরাম মেঘওয়াল বিলটি পাশ হওয়ার পর জেপিসি-তে পাঠালেন।
নির্ধারিত সময় মেনে মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় সংসদে ‘এক দেশ এক ভোট বিল’ লোকসভায় পেশ করেন কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী অর্জুনরাম মেঘওয়াল। বিলটি পেশ করার পর তুমুল হট্টগোল শুরু হয় সংসদে। এরপর আলোচনা পর্বে বিলের বিরোধিতায় সরব হন ইন্ডিয়া জোটের সাংসদরা। চড়া সুরে বিলটির বিরোধিতা করে তৃণমূল কংগ্রেস।
বিলের বিরুদ্ধে বিজেপিকে নিশানা করেন তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। নরেন্দ্র মাদীকে এক হাত নিয়ে তিনি কড়া সুরে বলেন, ‘দেশ নয়, এই বিলের আসল উদ্দেশ্য এই ব্যক্তির স্বার্থরক্ষা। নিজেদের ফায়দা খুঁজতে অন্যায়ভাবে এই বিল আনা হচ্ছে।’ বিলটি নিয়ে সরব হন কংগ্রেস সাংসদ মণীশ তিওয়ারি। তিনি বলেন, যে ভাবে বিলটি পেশ করা হচ্ছে, তা গণতন্ত্রের মূল ভাবনার পরিপন্থী। পাশাপাশি সপা সাংসদ ধর্মেন্দ্র যাদবও বিজেপি-কে কটাক্ষ করে বলেন, যারা একসঙ্গে ৮ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন করাতে পারছে না, তারা কোন মুখে গোটা দেশে একসঙ্গে নির্বাচনের কথা বলে।
বিরোধীদের এই দাবি অবশ্য গুরুত্ত্ব দেননি কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী অর্জুন রাম মেঘওয়াল। তিনি মঙ্গলবার নির্ধারিত সময়ে লোকসভায় এই বিল পেশ করে তাঁর কার্যকারিতা ব্যাখ্যা করেন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর কথায়, দেশের নির্বাচনী পদ্ধতি সংস্কারের জন্য এই পরিবর্তন জরুরি। আর এই বিল যে দেশের গণতান্ত্রিক পরিকাঠামো বা সংবিধানকে আঘাত করছে না, তা নিজের কথাতেই স্পষ্ট করে দিয়েছেন তিনি।
এরপরেই বিল পেশের জন্য প্রথমে ‘ইলেকট্রনিক ভোটিং সিস্টেম’ এবং তারপরে ব্যালটের মাধ্যমে ভোটাভুটি শুরু হয়। পাশাপাশি ধ্বনি ভোটও হয় লোকসভায়। ভোটাভুটির পরে এক ঘণ্টার জন্য মুলতুবি হয়ে যায় লোকসভার অধিবেশন।