সেদিন ভারতের ১০০ সেনার সঙ্গে লড়েছিল চিনের ৩৫০ সেনা!

প্রতীকী ছবি (File Photo: IANS)

গালওয়ান উপত্যকা’য় ১৫ জুন রাতে প্রকৃতপক্ষে ঠিক কি হয়েছিল? আগ্নেয়াস্ত্র না থাকা সত্ত্বেও ভারত-চিন সেনার মধ্যে কি করে এই রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের সৃষ্টি হল। নানা প্রশ্ন উঠে এলেও সরকারিভাবে এবিষয়ে এখনও কিছু জানানো হয়নি।

এমনই এক পরিস্থিতিতে সংবাদ সংস্থা এএনআইয়ের একটি প্রতিবেদনে দাবি করা হল, গালওয়ান উপত্যকায় ওয়াই পয়েন্টে ভারতীয় ভূখণ্ডে ঢুকে অস্থায়ী কাঠামো তৈরি করেছিল, তা নিয়েই যত বিবাদ। পরিকল্পিতভাবে হামলা চালিয়েছিল চিনা সেনা। তারা অপেক্ষাকৃত উঁচু অবস্থানে।

ভারতের পক্ষে ১০০ অফিসার-জওয়ান ছিলেন। চিন জড়ো করেছিল প্রায় ৩৫০ সেনা। সংঘর্ষ স্থায়ী হয়েছিল ঘণ্টাতিনেক। ভারত-চিন সংঘর্ষে বিহার রেজিমেন্টের এক কর্নেলের মৃত্যু হয়। সেই সঙ্গে ১৯ জন জওয়ানও মারা যান। চিনের দিকেও হতাহত হয়েছেন অনেকে। যদিও চিন এখনও সঠিক সংখ্যাটা জানায়নি। তবে হতাহতের কথা স্বীকার করেছে।


সংবাদ সংস্থা এএনআই একটি প্রতিবেদনে সেনা সূত্র উদ্ধৃত করে বলেছে, ওই পিপি-১৪ চিনা সেনা দখল নেওয়া থেকে ঘটনার সূত্রপাত শুরু হয়। চিনের সেনা সরাতে ১৫ জুন রাতে পূর্ব লাদাখে শিয়ক ও গালওয়ান নদীর সংযোগস্থলে ওয়াই পয়েন্টে দু’দেশের সামরিক পর্যায়ের একটি বৈঠক ডাকা হয়েছিল।

সেই বৈঠকে তিন নম্বর ডিভিশনের কম্যান্ডার ও অফিসাররাও ছিলেন। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় ভারতীয় ভূখণ্ডে ওই পিপি-১৪ থেকে সরে যাবে চিনা সেনা। ১৬ বিহার রেজিমেন্টকে দায়িত্ব দেওয়া হয় পিপি-১৪ গিয়ে চিনের সেনাকে সরে যেতে বলবে।

সেই অনুযায়ী বিহার রেজিমেন্টের একটি ছোট টহলদারি দলকে ওই পয়েন্টে পাঠানো সংবাদ সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী বিহার রেজিমেন্টের জওয়ানরা ওই পয়েন্টে গিয়ে দেখেন ১০-১২ চিনা সেনা একটি অস্থায়ী কাঠামো তৈরি করে সেখানে পাহারা দিচ্ছে।

বিহার রেজিমেন্টের জওয়ানরা তাদেরকে ওখান থেকে সরে যেতে বলেন। কিন্তু চিনা সেনারা রাজি হননি। এরপর তর্ক না বাড়িয়ে জওয়ানরা ইউনিটে ফিরে গিয়ে খবর দেন। চিনা বাহিনী আন্দাজ করেছিল ইউনিটে খবর গেলে ভারতীয় সেনারা বড় বাহিনী নিয়ে এলাকায় আসবে। এই অনুমান করে চিনও প্রস্তুতি শুরু করে দেয়।

পিপি-১৪’এর ওপর সাড়ে তিনশো চিনের সেনাজওয়ান জড়ো হয়। অস্ত্রশস্ত্রও মজুত করা হয়। চিনা সেনার এই নাছোড় মনোভাবের খবর পেয়ে বিহার রেজিমেন্টের কমান্ডিং অফিসার সন্তোষবাবুর নেতৃত্বে ৫০ জনের একটি দল ওই পেট্রোলিং পয়েন্টে পৌঁছয়। চিনা বাহিনীকে এলাকা ছাড়তে বলায়, এরপর শুরু হয় তর্ক।

এরই মধ্যে বিহার রেজিমেন্টের জওয়ানরা অস্থায়ী কাঠামো ভাঙতে শুরু করে দেয়। এরপর মারপিট ও হাতাহাতি শুরু হয়ে যায়। তুলনামূলক উঁচু অবস্থানে চিনের সেনারা থাকায় সেখান থেকে শুরু হয় পাথবৃষ্টি। এই খবর পেয়ে ভারতের পিপি-১৫ আর পিপি -১৭ থেকে আরও জনাপঞ্চাশয়েক সেনাজওয়ান এলাকায় যায়।

প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে দু’পক্ষের মধ্যে গভীর রাত পর্যন্ত সংঘর্ষ হয় বলে এএনআইয়ের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে। সেই সঙ্গে বলা হয়েছে, এই প্রতিবেদনে চিনের বহু সেনা আহত অবস্থায় পড়েছিল ওই এলাকায়। মারা গিয়েছিলেন অনেকেই। পরের দিন পরিস্থিতি শান্ত হলে সকালের দিকে চিনাবাহিনীর হাতে তাদের তুলে দেয় ভারতীয় সেনা।

এই সংবাদ সংস্থা সেনা সুত্রকে উদ্ধৃত করে দাবি করেছে, ওই ১৪ নম্বর পেট্রোলিং পয়েন্ট শেষ পর্যন্ত দখলমুক্ত করতে পেরেছিল ভারত। তবে, ১৪, ১৫ ও ১৭ পেট্রোলিং পোস্ট সংলগ্ন এলাকায় নিয়ন্ত্রণ রেখায় স্থিতাবস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য দু’দেশের সেনার মধ্যে বৈঠকের পরিকল্পনা ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই দু’দেশের লেফটেন্যান্ট জেনারেল পর্যায়ের বৈঠকের সম্ভা উজ্জ্বল হয়ে উঠছে বলে জানা যাচ্ছে।