• facebook
  • twitter
Tuesday, 1 April, 2025

তৃতীয়বার নিয়ে যাওয়ার সময় পথেই প্রসব, নবজাতকের মৃত্যু

স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নার্সরা ২ বার ফিরিয়ে দেন গর্ভবতী মহিলাকে

প্রসূতিকে ঠেলা গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

প্রসব যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকা এক অন্তঃসত্ত্বা মহিলাকে দুইবার ফিরিয়ে দেয় সরকারি হাসপাতাল। বলা হয় ২ থেকে ৩ দিন পর তাঁর সন্তান হবে। কিন্তু শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তৃতীয়বার ওই মহিলাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় একটি ঠেলাগাড়ির মধ্যে সন্তানের জন্ম দেন তিনি। কিন্তু ততক্ষণে সেই নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে। মধ্যপ্রদেশের রতলাম জেলায় এই ঘটনার পর হৈ হৈ পড়ে যায়। মহিলার স্বামীর তৃতীয়বার স্ত্রীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার একটি ভিডিও সমাজ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। অভিযুক্ত ২ নার্সের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
 
স্ত্রীয়ের প্রসব যন্ত্রণা ওঠায় স্ত্রীকে নিয়ে প্রথমে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যান মধ্যপ্রদেশের রতলমের এক ব্যক্তি। কিন্তু অভিযোগ, প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র জানিয়ে দেয় ভর্তি নেওয়া যাবে না। ফলে স্ত্রীকে নিয়ে ফিরে আসতে বাধ্য হন তিনি। ফেরার পথে মহিলার শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় আবার সেই স্বাস্থ্যকেন্দ্রেই নিয়ে যান তাঁর স্বামী। অভিযোগ, দ্বিতীয়বারও তাঁদের ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়। উপায় না দেখে একটি ঠেলাগাড়িতে স্ত্রীকে চাপিয়ে অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেন তাঁর স্বামী। কিন্তু পথেই সন্তান প্রসব করেন মহিলা। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। ফলে বাঁচানো যায়নি সদ্যোজাত সন্তানটিকে। এই ঘটনার পরই এলাকায় শোরগোল পড়ে যায়। শুক্রবার বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পরই সেলানার ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক চিকিৎসক পিসি কোলিকে শো কজ করা হয়েছে। সাসপেন্ড করা হয়েছে ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ২ নার্স চেতনা চারেল এবং গায়ত্রী পতিদারকে।
 
সেলানার মহকুমা ম্যাজিস্ট্রেট মণীশ জৈন বলেন, ‘২৩ মার্চ সকাল ৯টায় সেলানার কালিকা মাতা মন্দির রোডের বাসিন্দা কৃষ্ণ গোয়ালা তাঁর স্ত্রী নিতুকে কমিউনিটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যান। সেখানে নার্স চেতনা চারেল তাঁদের ফেরত পাঠিয়ে দেন। ওই নার্স বলেন যে, দুই থেকে তিন দিন পর সন্তান প্রসব হবে।’ জৈন আরও বলেন, ‘ দুপুর ১টায় তিনি আবার প্রসব বেদনা অনুভব করেন এবং তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।এবার, নার্স গায়ত্রী পাতিদার পরীক্ষার পর নীতুকে ভর্তি করতে অস্বীকার করেন। অভিযোগ, দ্বিতীয় নার্স বলেন, আরও ১৫ ঘন্টার মধ্যে প্রসব হবে। এরপর দম্পতি বাড়ি ফিরে যান।’

কিন্তু, বাড়ি ফিরে গেলেও মহিলার অবস্থার আবার অবনতি হলে তাঁর স্বামী তাঁকে তৃতীয়বারের মতো একটি গাড়িতে করে হাসপাতালে নিয়ে যান। তিনি ২৪ তারিখ ভোর ৩ টেয় পথেই প্রসব করেন। হাসপাতাল থেকে তখন দম্পতিকে বলা হয় নবজাতকটি মারা গেছে।

জেলা হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত প্রধান চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য অধিকর্তা এমএস সাগর জানান, নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনায় জেলাশাসক রাজেশ বাথম তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘জেলা পর্যায়ে তদন্তে কর্তব্যে অবহেলার প্রমাণ মিলেছে। সেলানা ব্লক মেডিকেল অফিসার পিসি কোলিকে কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করা হয়েছে। কর্তব্যরত চিকিৎসক শৈলেশ ডাঙ্গের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য রাজ্য স্বাস্থ্য পরিষেবার কমিশনারকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। 

স্থানীয় সূত্রে খবর, গত ২৩ মার্চ সাইলানার বাসিন্দা কৃষ্ণ গোয়ালার স্ত্রী নীতুর প্রসবযন্ত্রণা ওঠে। তাঁকে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যান কৃষ্ণ। সেই সময় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে দায়িত্বে ছিলেন নার্স চেতনা। অভিযোগ, তিনি জানিয়ে দেন, প্রসবের সময় এখনও আসেনি। দু’তিন দিন দেরি আছে। এই বলে ভর্তি নিতে অস্বীকার করেন। কিন্তু বাড়ি ফেরার পথে প্রসবযন্ত্রণা তীব্র হয় নীতুর। আবার তাঁকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে আসেন কৃষ্ণ। দ্বিতীয় বার স্বাস্থ্যকেন্দ্রের দায়িত্বে ছিলেন নার্স গায়ত্রী। অবিযোগ, তিনি নীতুকে পরীক্ষা করে জানান, আরও ১৫ ঘণ্টা পর প্রসব হবে। তাঁদের বাড়ি পাঠিয়ে দেন। কিন্তু বাড়িতে যাওয়ার পরই নীতুর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। কোনও গাড়ি না পেয়ে ঠেলাগাড়িতে করে স্ত্রীকে নিয়ে আবার স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উদ্দেশে রওনা হন কৃষ্ণ। কিন্তু মাঝপথেই সন্তান প্রসব করেন নীতু। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ওই অবস্থায় নীতু এবং সদ্যোজাতকে নিয়ে আসেন কৃষ্ণ। কিন্তু সদ্যোজাতকে বাঁচানো যায়নি। এই ঘটনার পর বৃহস্পতিবার মহকুমাশাসককে অভিযোগ জানান কৃষ্ণ। ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে কৈফিয়ৎ চাওয়া হয় কেন এই ধরনের ঘটনা ঘটল। তার পরই ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক এবং দুই নার্সের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হয়।